• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
সিসি টিভি ফুটেজ প্রকাশ

বখতিয়ার মেম্বারকে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করে প্রদীপ-মর্জিনা (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৯, ২০২০, ০৩:৩৭ পিএম
বখতিয়ার মেম্বারকে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করে প্রদীপ-মর্জিনা (ভিডিও)

ঢাকা : সাবেক মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ঘুষবাণিজ্যের একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সামনে এলো সিনহা হত্যার মাত্র এক সপ্তাহ আগে উখিয়ার ইউপি সদস্য বখতিয়ার মেম্বারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কথিত বন্দুক যুদ্ধে হত্যার তথ্য। আর একাজে প্রদীপের প্রত্যক্ষ সহযোগি ছিলেন উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা।

জানা যায়, মোটা অংকের ঘুষবাণিজ্যের পাশাপাশি বিশেষ একটি মহলের ইশারাতেও বিভিন্ন সময় এমন বহু ক্রসফায়ার নাটকের মঞ্চায়ণ করেছেন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস। যেখানে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়ককে কার্যত ‘ডেথ জোনে’ পরিণত করেন তিনি।

অভিযোগ আছে, চাহিদা মতো টাকা না পেলেই বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার দিতেন তিনি।

সিনহা হত্যার ৭ দিন আগে পাশের উখিয়া থানার ইউপি মেম্বার বখতিয়ারকে ধরে নিয়ে যান ওসি প্রদীপ। পরে তাকে ক্রসফায়ার দিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নাটক সাজিয়ে মামলা দেন। এ ঘটনার সত্যতা ফুটে ওঠে মাঝরাতে বখতিয়ার মেম্বারের বাড়িতে প্রদীপ-মর্জিনার নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২২ জুলাইয় মধ্যরাতে উখিয়ার কুতুপালং গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমেদের বাড়িতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তারের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। পরিবারের সদস্যরা যখন ঘুমাচ্ছিলেন ঠিক তখন পুলিশের চিৎকারে ঘুম ভাঙে তাদের। অভিযানে বখতিয়ার মেম্বারকে তার বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে তুলে নেয়ার সময় বাধা দেয় পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ‘তার সঙ্গে একটু কথা আছে’ বলে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর খোঁজ খবর করে বখতিয়ার মেম্বারের হদিস পাননি স্বজনরা।

২৩ জুলাই সন্ধ্যার পর উখিয়ার বখতিয়ার মেম্বারের বাড়িতে আবারও আসেন টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তার। এ দফায় ভেঙে ফেলা হয় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। তারপর চালানো হয় তল্লাশি। ওই রাতেই টেকনাফের হ্নিলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দু’জনের মৃত্যু খবর পায় বখতিয়ারের পরিবার। তারা জানতে পারে, বখতিয়ার মেম্বার ও মোহাম্মদ তাহের নামের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’।

ভোরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসে তাদের লাশ। এর আগে ২৩ তারিখ রাতেই ১৫ জনকে আসামি করে একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয় টেকনাফ থানায়। তারপর অস্ত্র মামলাসহ আরও একটি মামলা হয় বখতিয়ার মেম্বারের তিন ছেলের বিরুদ্ধে।

বখতিয়ার মেম্বারের ছেলের বউয়ের অভিযোগ, সেদিন সন্ধ্যায় পরের দফায় বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া জিনিষগুলোর অনেক কিছুই সিজার লিস্ট-এ নাই। তিনি বলছেন,  ওসি প্রদীপ দাশ নেয় ১৮ লাখ টাকা। ২ লাখ টাকা নেয় উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা।

মানব পাচার ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে তালিকায় নাম ছিল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত উখিয়ার বখতিয়ার মেম্বারের। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় ছিল না তার নাম।

ভিডিও: বখতিয়ার মেম্বারকে বাসা থেকে তুলে নেয়ার সিসি টিভি ফুটেজ : যমুনা টিভির সৌজন্যে

গুলিবিদ্ধ সিনহা অক্সিজেন চাইতেই আরো দুই গুলি : গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পিকআপ ভ্যানে করে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে।

এ সময় মৃত্যুমুখে থাকা সিনহা বাঁচার জন্য পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকতের কাছে অক্সিজেন চেয়েছিলেন। কিন্তু অক্সিজেনের বদলে লিয়াকত তাকে পিকআপে বসেই আরো দুটি গুলি করে। বন্ধুদের কাছে এমন বর্ণনা  দিয়েছেন ওই পিকঅ্যাপের চালক আবুইয়া।

আবুইয়ার বন্ধু সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক এ বিষয়টি জানিয়েছেন।

এর আগে চেকপোস্টে তল্লাশির সময় হাত উচু করা অবস্থাতেই সিনহাকে গুলি করে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত।  

চেকপোস্টে গুলি করার এই বর্ণনা সময় নিউজের কাছে দিয়েছেন স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন।

জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিনড্রাইভে সেনা, পুলিশ ও বিজিবি’র তল্লাশি চৌকি রয়েছে। অন্যান্য চেকপোস্টের থেকে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টটি একটু আলাদা। অন্য চেকপোস্টগুলো নির্জন জায়গায় হলেও এই চেকপোস্টটির পাশে বাজার, মসজিদ, লোকালয় রয়েছে।

অটোরিকশা চালক বলেন, ঘটনার পর সেই মিনি পিকআপ চালক বেলাল ওরফে আবুইয়া তাকে বলেছেন হাসপাতালে নেবার পথে সিনহাকে আরো দুই রাউন্ড গুলি করে পুলিশ। তিনি বলেন, গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছিল। সে অবস্থায় গুলিবিদ্ধ লোকটি অক্সিজেন চেয়েছিল। তখন তাকে আবার দুইটি গুলি করা হয়।

এরই সূত্র ধরে উখিয়ায় চালক আবুইয়ার বাড়িতে যায় সময় সংবাদের প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার পর থেকেই আবুইয়া নিরাপত্তা হেফাজতে আছে। তবে তার পরিচিতজনরা জানান, গুলি করার ভয় দেখিয়ে তাকে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে আসার পর অনেকটাই ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন তিনি।

পরিচয় গোপন রেখে একজন বলেন, লাশ দেখে আবুইয়া ভয় পেয়েছে। শুধু এই কথাটুকুই বলেছে। ত্রিপলের মধ্যে রক্ত লেগেছিল। সেটা তার বাবা ধুয়ে দিয়েছে। এদিকে পুলিশের করা এজহারে ঘটনাস্থলে ইন্সপেক্টর লিয়াকত আত্মরক্ষার্থে ৪ রাউন্ড গুলি করেছে বলা হয়েছে। তবে পুলিশের করা সুরতহালে সিনহার গায়ে ৬টি গুলির গভীর ক্ষতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সিনহার মৃত্যুর পর ৩ জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তৎকালীন বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের প্রধান লিয়াকত। এরমধ্যে ওসি ও এসপিও রয়েছে। হত্যার বিষয়ে কথা হলেও মাদক বা অস্ত্র উদ্ধারের কোনো তথ্য ফোনালাপে পাওয়া যায়নি। ৩১ জুলাই রাত ৯টা ৩০ মিনিটে তৎকালীন বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের প্রধান লিয়াকত তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে তৎকালীন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের অফিসিয়াল নম্বরে ফোন করেন। তিন মিনিট কথা বলেন তারা।

এরপর ৯টা ৩৩ মিনিটে মালখানার ইনচার্জ কনস্টেবল আরিফের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করেন। তার সাথে ১ মিনিট কথা বলেন। এরপর ৯টা ৩৪ মিনিটে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করেন লিয়াকত। সেখানে তাদের কথা হয় তিন মিনিট।

কথোপকথনে লিয়াকত ঘটনা সম্পর্কে এসপিকে জানান। কিন্তু সেখানে মাদক ও অস্ত্র পাওয়ার কোনো কথা উল্লেখ করেননি। এরপর ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সাথে কথা হয় এসপির। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ঘটনাটি তদন্ত হচ্ছে। ঘটনায় এসপি’র সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এসপির নাম যদি আসে আমরা দেখবো, যার নাম আসে দেখবো। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাউকেই ছাড় দিবেন না।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক মেজর সিনহার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে যারাই দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে। তদন্তের মধ্যে যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন কিংবা যারা দোষ করেছেন বলে প্রমাণিত হবে তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের বিচার করা হবে।’

গত ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুরের একটি পাহাড়ি এলাকায় শুটিং শেষে ফেরার পথে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!