• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
যানবাহনের থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স

বছরে শতকোটি টাকা যাচ্ছে কোম্পানির পকেটে


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ১৭, ২০১৯, ১২:৪৫ এএম
বছরে শতকোটি টাকা যাচ্ছে কোম্পানির পকেটে

ঢাকা : মোটরসাইকেলের ট্যাক্স টোকেন, রেজিস্ট্রেশনসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সঙ্গে আছে, শুধু ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ। আর এ কারণেই রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় মামলায় পড়তে হলো এক মোটরসাইকেল চালককে।

ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। বিষয়টা মেনে নিতে পারছেন না মোটরসাইকেল আরোহী আলীমুজ্জামান।

তিনি বলেন, সরকারের চাহিদামতো সব কাগজপত্রই তো সঙ্গে রেখেছি। নিয়মিত ট্যাক্সও পরিশোধ করেছি। বাইকের রেজিস্ট্রেশন করেছি, ড্রাইভিং লাইসেন্সও আছে। তাহলে ইন্স্যুরেন্স লাগবে কেন?

আলীমুজ্জামান বলেন, মোটরসাইকেল ক্ষতিগ্রস্ত হলে একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ দেয় না কোম্পানিগুলো। অথচ প্রতিবছর তাদের প্রিমিয়াম দেওয়া হয়। এটা তো সরকারও পায় না। তাই দেশেরও কোনো লাভ হয় না। লাভবান হয় তৃতীয় পক্ষ কোনো ব্যবসায়ী। অথচ সরকার মোটরসাইকেলে ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করেছে। এ আইনের সংশোধন করা দরকার। তিনি বলেন, হয় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক, অন্যথায় এ আইন বাতিল করা হোক।

এ ব্যাপারে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরের উপকমিশনার প্রবীর কুমার বলেন, পুলিশ মোটরযান আইন অনুসরণ করে। মোটরযান আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেলের ইন্স্যুরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। তাই সে ক্ষতিপূরণ পায় কি পায় না, সেটা দেখার কথা নয়। বিষয়টি বিআরটিএ’র কারো সঙ্গে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের বিপরীতে যানবাহন মালিকদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রবীর কুমার বলেন, ক্ষতিপূরণ পাবে না কেন? তাহলে ইন্স্যুরেন্সের প্রয়োজন কী?

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শেখ কবির হোসেন বলেন, থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স আমরাও করতে চাই না। থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম খুবই কম থাকে। তাই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। সরকার থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স বাতিল করে ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্সই চালু রাখুক। তাহলে প্রিমিয়ামও যেমন বাড়বে, তেমনি সবাই লাভবান হবে।

ক্ষতিপূরণ না পেলে ইন্স্যুরেন্সের প্রয়োজন কেন? জানতে চাইলে শেখ কবির হোসেন আরো বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি জিনিসের ইন্স্যুরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। বিদেশেও প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্স করতে হয়।

তিনি বলেন, একটি মোটরযানের প্রতিবছর থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম নেওয়া হয় ৩২৫ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়া এর সঙ্গে সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্সও নেওয়া হয়। সরকার ইন্স্যুরেন্স থেকে ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকা পাচ্ছে। বাকি টাকা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, একটি বাসের ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স করতে হলে প্রায় ৮০ হাজার টাকার মতো প্রিমিয়াম দিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের জন্য প্রিমিয়াম দিতে হয় খুবই সামান্য। তাই অনেকেই পুলিশি ঝামেলা এড়াতে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স করে।

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, থার্ড বা ফার্স্ট পার্টি বুঝি না। যানবাহনের ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। ইন্স্যুরেন্স না থাকলেই মামলা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, গত বছর যানবাহনের ইন্স্যুরেন্স থেকে প্রিমিয়াম আসে প্রায় ৩২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আসে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স থেকে।

ইন্স্যুরেন্স-সংশ্লিষ্ট হাবিবুর রহমান নামে এক কর্মকর্তা বলেন, ১৯৮৫ সালে বেসরকারি পর্যায়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি চালু হয়। এর আগে শুধু সরকারি জীবনবীমা ও সাধারণ বীমার কার্যক্রম ছিল। বর্তমানে দেশে ৭৬টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে ৫-৭টি কোম্পানি শুধু থার্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স বেশি করছে।

তিনি আরো বলেন, ১৯৮৫ সালেই সরকার প্রতিটি যানবাহনেই ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করেছে। সেই আইনের আর সংশোধন করা হয়নি। ফলে রাস্তায় চলতে হলে ইন্স্যুরেন্স করতেই হবে। না হলে মামলায় পড়তে হয়। তাই পুলিশি ঝামেলা এড়াতে সাধারণ মানুষ থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স করতে বাধ্য হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!