• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বছরের শুরুতেই চালের দাম বৃদ্ধি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৬, ২০১৯, ০১:৩৭ পিএম
বছরের শুরুতেই চালের দাম বৃদ্ধি

ঢাকা : নতুন বছরের শুরুতেই সারা দেশে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত দুই টাকা করে বেড়েছে, সুগন্ধি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ টাকা করে। পাইকারিতে চালের দামবৃদ্ধির এই প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়তে শুরু করেছে। চালের এই দাম বৃদ্ধিকে কৃষকের জন্য ইতিবাচক বলছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্যমতে, আমনের মওসুমের শেষ দিকে এসে সব ধরনের ধানের দাম মণ প্রতি ১০০ টাকার বেশি বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।

মিরপুর পীরেরবাগের মো. পলাশ নামের একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, ভোটের পর চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি মিনিকেট ৫২ টাকা থেকে ৫৪ টাকা, বিআর আটাশ ৪০ টাকা এবং পাইজাম ৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকার পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, নির্বাচনের তিন দিন আগে পরিবহন ব্যবস্থায় কড়াকড়ির কথা বলে চাল সরবরাহ বন্ধ রেখেছিলেন মিলাররা। নির্বাচনের পর চাল সরবরাহ শুরু হলেও মিলগুলো থেকেই প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) দুই ধাপে ১০০ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার মিরপুর-১ নম্বর বাজারে চালের পাইকারি বিক্রেতা জননী রাইস এজেন্সির মালিক মো. মহিউদ্দিন হারুণ বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত দুই টাকা বেড়েছে। সুগন্ধি চাল কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা করে। দেশের বিভিন্ন জেলার মিলগুলোতে দাম বাড়ার কারণেই তারাও দাম বাড়াতে ‘বাধ্য হচ্ছেন’।

তার দেওয়া তথ্য মতে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে মাঝারি মানের চালের দাম (পাইজাম, লতা ও বিআর আটাশ) পাইকারিতে ছিল প্রতি বস্তা ১৬৫০ টাকা। এখন এই চাল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫০ টাকা। একইভাবে সাধারণ মানের মিনিকেট চাল বস্তা প্রতি ২২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মিনিকেট (রশিদ মিনিকেট) ২৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ২৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুগন্ধি চাল যেগুলোর বস্তা ৩৮০০ টাকা করে বিক্রি হত, সেগুলো এখন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৯৫০ টাকায়। ভালো মানের সুগন্ধি চাল যেগুলো ৪২০০ টাকায় বস্তা বিক্রি হত, সেগুলো এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৪৩৫০ টাকায়।

একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায় রাজধানীর উত্তর বাড্ডার চালের আড়ৎগুলোতে। সেখানে সাঁতারকুল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক বিপ্লব হোসেন বলেন, ভোটের আগেই সব ধরনের চালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেন মিল মালিকরা। মানভেদে বিভিন্ন চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। সেই হিসাবে কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা করে।

বাজারে চালের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রশিদ রাইস এজেন্সির ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার তারিক আনাম বলেন, বাজারে ধানের দাম বাড়ার কারণে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে দাম কম থাকার পর এখন ধানের দাম বাড়ায় কৃষকরাও উপকৃত হচ্ছেন।
তিনি জানান, মিনিকেট চালের জন্য বেছে নেওয়া হয় বোরো মওসুমের ধান যেগুলো সাধারণত বৈশাখ মাসে বাজারে আসে। নির্বাচনের আগে এই ধানের মণ এক হাজার টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে ১১২০ টাকায় উঠেছে। এছাড়া আমন মওসুমের ধানের দামও প্রতি মণ ৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৪০ টাকায় উঠেছে।

নওগাঁ জেলা চালকল সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধানের বাজার মন্দা ছিল। সরকার ৩৬ টাকা কেজি দামে চাল সংগ্রহ শুরু করার পর ধানের বাজার ‘একটু চাঙ্গা’ হয়েছে। এর ফলে মিলগুলোতে চালের দামও কিছুটা বেড়েছে। আগামী কিছু দিন ধরে চালের এই দাম চলবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

গত পহেলা ডিসেম্বর থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয় লাখ টনেরও বেশি আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, এবার আমন চালের উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ৩৪ টাকা। বাজার পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে, খোঁজ-খবর নিয়ে মূল্য ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

নতুন করে মজুদ শুরুর আগে সরকারি গুদামে চাল ও গমসহ ১২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল, যার মধ্যে ৯ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন ছিল চাল।

এর আগে চালের দাম খুব বেশি বেড়েছিল ২০১৭ সালের মধ্যভাগ থেকে কয়েক মাস ধরে। ওই বছর এপ্রিলে আগাম বন্যায় হাওরের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে চালের দাম বাড়তে শুরু করে।

সে সময় সরু চালের দাম খুচরায় কেজি প্রতি ৭০ টাকা পর্যন্ত ওঠে, সমানতালে বাড়ে মোটা চালের দামও। পরে নতুন ধান ওঠায় চালের দাম কমে আসে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!