• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বন্দুকযুদ্ধে’ আট জেলায় নিহত ৯


নিউজ ডেস্ক মে ২৩, ২০১৮, ১১:৩৪ পিএম
‘বন্দুকযুদ্ধে’ আট জেলায় নিহত ৯

ঢাকা : চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আট জেলায় আরো ৯ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২২ মে) রাত থেকে বুধবার (২৩ মে) সকালের মধ্যে মাদক চোরাকারবারি ও বিক্রেতাদের সঙ্গে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ।

এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে কুষ্টিয়ায় দুজন এবং জামালপুর, কুমিল­া, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও রংপুরে একজন করে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ফেনী ও গাইবান্ধায় র‌্যাবের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুজন।

এ ছাড়া বগুড়ায় পুলিশের গুলিতে আহত সন্দেহভাজন একজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও কুমারখালীতে পুলিশের সঙ্গে পৃথক ‘বন্দুুকযুদ্ধে’ লিটন শেখ (৪২) ও ফটিক ওরফে গাফফার (৩৮) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে।

মঙ্গলবার (২২ মে) রাত ১টার দিকে কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ার গড়াই নদীর পাড় সংলগ্ন ব্রিজের নিচে ও ভেড়ামারা উপজেলার হাওয়াখালী ইটভাঁটা মাঠে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। এ তথ্য জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি আবদুল খালেক ও ভেড়ামারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম। পুলিশের খাতায় জেলার একজন ‘শীর্ষ মাদক চোরাকারবারি’ হিসেবে লিটনের নাম রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান ভেড়ামারা থানার ওসি। পরিবারের দাবি, গত সোমবার রাত থেকে লিটন নিখোঁজ ছিলেন।

ফেনী : ফেনীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মো. ফারুক (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে শহরের কালিপালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফারুক চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাকার অলি আহমদের ছেলে। র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক শাফায়েত জামিল ফাহিমের ভাষ্য, ফেনী শহরের দাউদপোল এলাকার চেকপোস্ট ভেঙে মাদক ব্যবসায়ী ফারুক গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি হয়। এতে ঘটনাস্থলে ফারুক গুলিবিদ্ধ হন।

পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার গাড়ি তল­াশি করে ২২ হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান, ১০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। শাফায়েত জামিল ফাহিম আরো জানান, নিহত ফারুক মাদক সম্রাট। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা আছে।

অপরদিকে বুধবার (২৩ মে) দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপালে ট্রাক তল­াশি করে এগারো হাজার ৬৩০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় ২ মাদক ব্যবসায়ী মো. হাসান (২৭) ও মো. মনির হোসেনকে (৩২) আটক করে ট্রাক জব্দ করা হয়।

রংপুর : রংপুর নগরীর হাজিরহাট এলাকায় শাহিনুর রহমান (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। বুধবার (২৩ মে) ভোরে এ ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয় জানিয়ে পুলিশ বলছে, হাজিরহাট এলাকায় মাদক নিয়ে ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে, এমন খবরে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই নিহত হন শাহিনুর রহমান। তার কাছ থেকে ১২৯ বোতল ফেনসিডিল এবং একটি রিভলভার উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত শাহিন একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

কুমিল­া : কুমিল­ায় ডিবি ও থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইসহাক ওরফে ইছা নামে অভিযুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিন, এসআই মারুফ ও কনস্টেবল মিজানসহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় ৪শ’ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (২২ মে) রাত ১টার দিকে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার চাঁনপুর ব্রিজ সংলগ্ন সামারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ দাবি করেছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে মঙ্গলবার (২২ মে) বিকালে ইছাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সদর উপজেলার সামারচর এলাকা থেকে ফেনসিডিল উদ্ধার করে ফেরার পথে ইছার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে সহযোগী সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ইছা গুরুতর আহত হন। পরে কুমিল­া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ইছার বিরুদ্ধে মাদক আইনে ১১টি মামলা রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আপতাফুল (৩৮) নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তার নামে ১৫টি মাদক মামলাসহ ২০টি মামলা চলমান।

বালিয়াডাঙ্গী থানা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় উপজেলার পারুয়া গ্রামে মাদক উদ্ধারে যায় পুলিশ। আপতাফুলকে আটক এবং ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে পীরগঞ্জে আরো মাদক উদ্ধারে যাচ্ছিল পুলিশ।

পথে বুধবার (২৩ মে) ভোরে পীরগঞ্জ ভাতারমাড়ী ফার্মের কাছাকাছি গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে আপতাফুল গুলিবিদ্ধ হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়। এ সময় বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি এবিএম সাজেদুল ইসলাম ও এসআই খায়রুজ্জামান আহত হন। পরে পুলিশ আপতাফুলকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  

জামালপুর : জামালপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৬ মামলার আসামি মাদক ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বিদ্যুৎ (৪০) নিহত হয়েছেন। শহরের ছনকান্দা বালুর ঘাট পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টায় এ ঘটনা ঘটে জানিয়েছে পুলিশ।  

জামালপুর সদর থানার ওসি নাছিমুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে মাদক ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ নিহত হন। তখন বাকিরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, ১ হাজার ইয়াবা এবং ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।

ওসি বলেছেন, এ অভিযানে তিনি নিজে এবং পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান, এসআই সিরাজুল ইসলাম ও কনস্টেবল ফারুক আহত হয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

গাইবান্ধা : জেলার পলাশবাড়ীতে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজু মিয়া (৩৬) নামে এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের রাইগ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে।  

গাইবান্ধা র‌্যাব ক্যাম্পের এএসপি হাবিবুর রহমান জানান, পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের বিশ্রামগাছি গ্রামে জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাজু মিয়াকে আটকের চেষ্টার সময় তিনি র‌্যাবের ওপর গুলি চালান। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি চালালে রাজু মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ১২ কেজি গাঁজা, একটি বিদেশি ৭ দশমিক ৬৫ এমএম পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি ও ১টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।  

পলাশবাড়ি থানার ওসি মাহমুদুল আলম জানান, রাজু মিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে ২৭টি মামলা রয়েছে।  

লালমনিরহাট : লালমনিরহাট সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নূর আলম এশার (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। জেলার পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক জানান, বুধবার (২৩ মে) ভোররাতে সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার ধরলা চরাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত এশার কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার পানিমাছকুটি (যকুরতল) গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে।

পুলিশ সুপার বলেন, এশার দলবল নিয়ে মাদক পাচার করছে- এমন খবরে পুলিশ শেষ রাতে ধরলার চরাঞ্চলে অভিযানে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধাওয়া দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের গোলাগুলি হয়। তখন এশার আলী নিহত হন। এশার আন্তঃজেলা মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। তার নামে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি ও লালমনিরহাট সদর থানায় মাদক আইনে মামলা রয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার রাশিদুল হক। ঘটনাস্থল থেকে ২০ কেজি গাঁজা, ৫০ বোতল ফেনসিডিল, বেশ কিছু গুলির খোসা এবং ছয়টি রামদা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ অভিযানে সদর থানার এসআই আসাদুল ইসলাম ও কনস্টেবল আবুল কালাম আহত হয়েছেন জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, তাদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বগুড়া : বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহীন মিয়া ওরফে হাজী শাহীন (৪২) নামে সন্দেহভাজন এক মাদক চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত শাহীন চক সূত্রাপুর হাড্ডিপট্টি এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে। তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে শহরের ছিলিমপুর নতুন রাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তার কাছ থেকে ৪শ’ পিস ইয়াবা, ১০ ইঞ্চি লম্বা বার্মিজ ছুরি ও আটটি গুলির খোসা পাওয়া  গেছে। এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই আলমাস ও কনস্টেবল হানিফ মিয়া আহত হয়ে পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, শহরের ছিলিমপুর নতুন রাস্তা এলাকায় একদল মাদক বিক্রেতা মাদকদ্রব্য ভাগাভাগি করছে, এমন সময় সেখানে অভিযান চালালে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে মাদক বিক্রেতা শাহীন গুলিবিদ্ধ হলেও অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তিনি আরো জানান, শাহীনের নামে বগুড়া সদর থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!