• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ হচ্ছে আগ্রাসী ব্যাংকিং


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯, ০১:৫৩ পিএম
বন্ধ হচ্ছে আগ্রাসী ব্যাংকিং

ঢাকা : অবশেষে বেসামাল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ও কার্যকর দিকনির্দেশনায় আগ্রাসী ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হচ্ছে। তবে এখনো ১১টি ব্যাংকের বিনিয়োগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার বাইরে। তাদের আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্ধারিত সীমার মধ্যে ঋণ ও অগ্রিম হার (এডিআর) নামিয়ে আনতে হবে।

আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে হঠাৎ ব্যাংকগুলোয় বড় তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়। ব্যাংকগুলো আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে যেমন ব্যর্থ হচ্ছে, আবার অনুমোদিত ঋণের অর্থও পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে নগদ জমার হার-সিআরআর এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কমানো হয়েছে রেপোর সুদহার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান মোতাবেক, তফশিলি কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। আর ইসলামী ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। তবে এক সময় ৩২টি ব্যাংক এই সীমার বাইরে ছিল।

এদিকে বাজারে তারল্য বাড়াতে আপাতত ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংককে ধার দিতে পারে। যেকোনো সময় ১৪ দিন ও ৭ দিন মেয়াদি নিলামও বন্ধ করা হতে পারে। একইভাবে বাজারে টাকার সরবরাহ অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে মোট সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ দিন মেয়াদি বিলে রয়েছে ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১৪ দিন মেয়াদি বিলে তিন হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা এবং ৭ দিন মেয়াদি বিলে ১২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা রয়েছে। আমানত ও ঋণের সুদহারের টালমাটাল পরিস্থিতি থেকে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে।

তবে সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য অনিশ্চয়তার উৎকণ্ঠাও বিনিয়োগে ভাটার কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বিনিয়োগে ভাটার প্রকৃত কারণগুলো স্পষ্ট হবে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে।

জানা গেছে, আগ্রাসী বিনিয়োগের কারণে ৩২টি ব্যাংক তার ঋণ আমানত সীমা লঙ্ঘন করে। যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেওয়ায় নগদ টাকার টানাটানিতে পড়ে যায় ওই সব ব্যাংক। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে এডিআর সমন্বয় করতে বলে। কিন্তু ব্যাংক মালিক ও এমডিদের প্রস্তাবে সেটি বাড়িয়ে আগামী মাস পর্যন্ত সময়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, এখনো বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমাতে আসেনি। মার্চের মধ্যে না নামাতে পারলে এসব ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্ম উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, ব্যাংকিং খাতে আগ্রাসী ব্যাংকিং অনেকটাই কমে গেছে। কয়েকটি ব্যাংক রয়েছে, আমাদের বিশ্বাস মার্চের মধ্যে তারাও নিয়মে চলে আসবে। যদি না পারে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দিয়ে সেসব ঋণ এখন আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ব্যাংকিং খাতে এখন খেলাপি ঋণ ৯৯ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। নগদ টাকার টানাটানি বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদহার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদ হার ১৭/১৮ শতাংশ দাঁড়ায়।

জানতে চাইলে এখনো আগ্রাসী ব্যাংকের তালিকায় থাকা একটি ব্যাংকের এমডি বলেন, আমরা ঋণ বিতরণে এখন সতর্ক। অপরদিকে আমানত বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আশা করি দুটি সূচকে অগ্রগতি হলে মার্চের মধ্যেই আমাদের এডিআর নির্ধারিত সীমায় আসবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!