• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্যায় পানিবন্দি ২০ হাজার পরিবার


লালমনিরহাট প্রতিনিধি জুলাই ১১, ২০২০, ০৭:৫২ পিএম
বন্যায় পানিবন্দি ২০ হাজার পরিবার

ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার বামতীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। শনিবার (১১ জুলাই) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

জানা গেছে, তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় উজানের সামান্য ঢলেই তিস্তার দুই তীর প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার।  শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে উজানে ভারতের পাহাড়ি ঢলের মাত্রা বেড়ে যায়। একইসঙ্গে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ১৫/২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। 

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। চৌকি/খাটের উপর মাচাং বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পানিবন্দি পরিবারের মানুষগুলো। কেউ কেউ ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ বা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। খুব কষ্টে পড়েছেন বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা। গবাদি পশু-পাখি নিয়েও চরম বিপাকে পানিবন্দি পরিবারগুলো। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়। তিস্তার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জেগে ওঠা চরে বাদাম ও  ভুট্টাসহ নানান জাতের সবজি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করত চরাঞ্চলের মানুষ। অনেকেই গবাদি পশু পালন ও মাছ চাষ করেও সংসারের চাকা সচল রেখেছেন। 

গত এক মাস ধরে থেমে থেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের চাষিদের উঠতি ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে যায়। ভেসে যায় শত শত পুকুরের মাছ। বিশেষ করে বাদাম ক্ষেতে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে চলমান বন্যায়। চরাঞ্চলের সব থেকে লাভবান ফসল বাদাম, এ বছর বন্যায় ডুবে যাওয়ায় ঘরে তুলতে পারেননি চাষিরা। কেউ কেউ পানিতে ডুবে ডুবে বাদাম সংগ্রহ করলেও তা পানি পাওয়ায় অঙ্কুরোদগম ঘটছে। ফলে চাষের খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কায় চাষিরা। ভুট্টা ক্ষেতেও একই অবস্থা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাতেও অঙ্কুরোদগম ঘটছে। 

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামে সাহেদ মিয়া বলেন, দুই দিন ধরে পানিবন্দি আছি। গত এক মাস ধরে থেমে থেমে বন্যা হচ্ছে। ২/৪ দিন টানা পানিবন্দি থাকতে হয়েছে। তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। শুক্রবার দুপুর থেকে চলতি বছরে চতুর্থ বারের মত পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। এবারের পানির বেগ অনেক বেশি। গত বন্যার চেয়ে এ বন্যায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি। 

এসব ভিজে যাওয়া ফসল সামান্য রোদে শুকানো নিয়েও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। পরিবারের সব সদস্য মিলে ভিজা ফসল উঁচু স্থানে নিয়ে শুকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সেটাও করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চাষাবাদের খরচ তোলাসহ পরিবার পরিজনের খাবার নিয়েও চিন্তিত তিস্তা পাড়ের চাষিরা।  তিস্তার বামতীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 

এসব বাঁধ ভেঙে গেলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাবে বলেও শঙ্কিত তিস্তাপাড়ের মানুষ। শুক্রবার রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী হাসপাতাল সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। স্থানীয়রা নিজেরাই বালুর বস্তা দিয়ে পানি প্রবাহ থেকে সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করছেন। এটি ভেঙে গিয়ে বিগত ১৭ সালের বন্যায় লালমনিরহাট বুড়িমারী রেললাইন ভেঙে হাতীবান্ধা শহরে পানি প্রবেশ করে। সেই সংস্কার করা সড়কটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ দিকে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার দুপুর থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যরাতে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার দুপুরে কিছুটা কমলেও বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষার জন্য সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ বন্যা কিছুটা সময় স্থায়ী হতে পারে বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই এ জেলায় বন্যা দেখা দেয়। তাই নদী খনন করে দুই তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। একনেকে অনুমোদন হলেই লালমনিরহাটবাসী বন্যা থেকে পুরোপুরি রক্ষা পাবে। চলমান বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজ খবর নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ত্রাণ সহায়তা অনুভব করলে আমরা পৌঁছে দেব। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!