• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
স্বাগতম ঋতুর রানি

বসন্তের আহ্বানে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯, ১২:২২ পিএম
বসন্তের আহ্বানে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস

ঢাকা : শুরু হলো পলাশ ফোটার দিন, শিমুল ফোটার দিন। আজ পহেলা ফাল্গুন। তারুণ্যের মননে বসন্তের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে ঋতুর রানি বসন্ত। ‘আজি প্রাণে প্রাণে মিলবে প্রাণ-হূদয়ে উঠিবে প্রেমের তুফান। ফুলের সৌরভে মেতে উঠবে চারপাশ-প্রেমহীন হূদয়ে জেগে উঠবে ব্যাকুলতার হাঁসফাঁস।’

সৃষ্টির চিরায়ত নিয়ম মেনে ফাল্গুন যখন আসে, চারদিকের রঙিন সাজে প্রকৃতি হাসে। ফাল্গুনের উদাস হাওয়া, শিমুল, পলাশ, আর কৃষ্ণচূড়া, গাছে গাছে বাসন্তী রঙের কচি পাতার অপরূপ শোভায় ছড়িয়ে পড়ে। সাথে যোগ হয় কোকিলের মন পাগল করা কুহুতান। ঋতুর রানি বসন্তের খেতাবটি যেন প্রকৃতির রঙ-রূপ-রসে টইটম্বুর।

সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন— ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত।’ ঐতিহ্যগতভাবে বসন্তকাল একটি উৎসবমুখর ঋতু। কারণ এই ঋতুতে বাসন্তী পূজা, চড়ক পূজা ও বসন্ত উৎসব এই ঋতুকে রঙিন করেছে। গানে আছে, ‘আহা আজই এ বসন্তে, কত ফুল ফোটে কত বাঁশি বাজে...অথবা ‘পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে এসেছে দারুণ মাস আমি জেনে গেছি তুমি আসিবে না ফিরে মিটবে না পিয়াস’- এমন হূদয় আকুল করা গানে বেরসিক হূদয়েও যেন আবেগের সঞ্চার ঘটে। সত্যি প্রেমহীন জীবনে পিয়াস কী করে মিটবে।

বসন্তকাল তারুণ্যের হূদয়কে আলোড়িত করে। এ কারণেই তরুণ-তরুণীদের কাছে প্রেম, ভালোবাসায় মায়ার বন্ধনে মিলিত হওয়ার দিন হিসেবে বসন্তের প্রথম দিনটির গুরুত্ব অনেক। ফাল্গুনের প্রথম দিনে তরুণীরা খোঁপায় গাঁদা ফুল দিয়ে বাসন্তী রঙের পোশাকে সেজেগুঁজে ঘুরে বেড়াবে। এই দিনে টিএসসি চত্বরসহ ঢাকার বিভিন্ন পার্ক, বিপণিবিতানে ঢল নামবে তরুণ-তরুণীদের। রঙে, রূপে, গানে, হৈ-হুল্লোড়ে আজ সারাদিন কেবলই তারুণ্যের! শুধু তরুণ বা তরুণীরাই নয়, সব বয়সী নারী-পুরুষের মনে ফাল্গুন বয়ে আনে প্রেমময় আনন্দের বার্তা।

ফাল্গুনে  কোকিল না ডাকলে, পলাশ শিমুল না ফুটলে বসন্ত কি পূর্ণতা পায়।  এরই সাথে বাসন্তী শাড়িতে তরুণ-তরুণীরা বেরিয়ে পড়ে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে বসন্তের উচ্ছ্বাসে। প্রেমিক-প্রেমিকারা এই দিনে নির্জনে কাটাবে ভাববিনিময় করে। কবিরা লিখবেন নতুন কবিতা- প্রেমের অমিয় বাণীর ঢালি সাজিয়ে।

বসন্ত-দূতদের দেখা মিলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, চারুকলার বকুলতলায়, বিভিন্ন পার্কে আর বিপণিবিতানে। সারা দেশের জেলা-উপজেলা শহরে একই চিত্র দেখা যায়। বসন্তবরণে তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করে নানান আনন্দ অনুষ্ঠানের। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন  স্থানে কনসার্টে তারুণ্যের উন্মাদনায় বেসামাল গানবাজনার আয়োজনও হয়ে থাকে। আর দিন শেষে বসন্তদূতদের ঢল নামে একুশের গ্রন্থমেলায়। তবে এদিন গ্রন্থমেলায় যত মানুষের ভিড় হয় সে অনুযায়ী বই বিক্রি বাড়ে না।

শুধু তরুণরাই কি সাজে বসন্তের রঙে। ঠিক তা নয়। এই দিনে বাসায়, অফিসে কর্মব্যস্ত নারী-পুরুষরা বসন্তের রঙের সাথে মিল রেখে পোশাকও পরেন। তবে পোশাক যেমনই হোক না কেন মনের বসন্তকে ঢেকে রাখা দায় এমন দিনে। সামগ্রিকভাবে  পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত বরণ এখন বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই দিনকে উপলক্ষ করে পোশাক, গয়না, চুড়ি, ফুলসহ নানান প্রসাধনীর প্রচুর বিকিকিনি হয়। বসন্তের আহ্বানে প্রকৃতিকে রাঙাতে ব্যস্ত পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়া।  

বসন্তের আগমন নতুন বার্তা বয়ে আনুক এমন প্রত্যাশা প্রতিটি তরুণ প্রাণে।

বসন্ত উৎসব সম্পর্কে জানা যায়, বাংলা ১৪০১ সালে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ নানান আয়োজনে দিবসটি পালন করে।

আজ ‘পহেলা ফাল্গুন’ আর আগামীকাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দুটি দিনকে ঘিরে সারা দেশের ফুলের দোকানগুলোতে বিক্রির ধুম পড়েছে। ঋতু ফাল্গুনের সাথে ফুলের যেন অনেক মিল। রক্তলাল ফুলে ভরা শিমুল গাছ প্রামীণ পরিবেশে ফাগুনের আগুন ছড়িয়ে দেয়। লাল টকটকে  এসব উজ্জ্বল থোকা থোকা ফুলের ডালে বুলবুলি, শালিক বসে এর সৌন্দর্যকে আরো উপভোগ্য করে তোলে। ফাল্গুনে ফোটা ফুলের তালিকায় আরো যেসব নাম উল্লেখযোগ্য- কাঞ্চন, কনকলতা, পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, মাধবীলতা, জুঁই, বকুল, কাঠচাঁপা, করবী, মুচুকুন্দ, কনকচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা, নাগকেশর, দেবকাঞ্চন, পারিজাত, পানিয়া মাদার, টগর, ভাঁটিফুল প্রভৃতি। আমাদের দেশে শীত শেষে যেমন শিমুল, পলাশ আর দেবকাঞ্চন ফুলের অপরূপ শোভা দেখে হূদয়ের আকুলতা বেড়ে যায়, ঠিক তেমনি ইউরোপের দেশগুলোতে শীত শেষে চেরি ফুলের স্ফুরণ যেন অপার্থিব আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!