• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ব্রুনাই জ্বালানি খাতে অংশীদারত্ব গড়বে


নিউজ ডেস্ক এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ০২:২৯ পিএম
বাংলাদেশ-ব্রুনাই জ্বালানি খাতে অংশীদারত্ব গড়বে

ঢাকা : বাংলাদেশ ও ব্রুনাই মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছে, দুই দেশ জ্বালানি খাতে সমন্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে তিন দিনের সফর শেষ করে মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন।

যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার জোগান দিতে বাংলাদেশে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহসহ সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) চুক্তির আওতায় দুই দেশ জ্বালানি খাতে সমন্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে।

এতে বলা হয়, পেট্রোকেমিক্যাল, সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, কারিগরি সহযোগিতা ও সক্ষমতা উন্নয়নের মতো খাতে দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত সহযোগিতায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ সম্মত হয়েছেন। খবর বাসস।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৩৫তম বার্ষিকীতে সুলতান বলকিয়াহর আমন্ত্রণে ব্রুনাই দারুসসালামে তিন দিনের সরকারি সফর শেষে শেখ হাসিনা গতকাল সন্ধ্যায় দেশে আসেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতা বিনিয়োগের সম্ভাবনার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জ্বালানি, আইসিটি, জাহাজ নির্মাণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, পর্যটন অবকাঠামো, ব্লু-ইকোনমি এবং পাটশিল্পের মতো খাতে পারস্পরিক বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছেন।

ব্রুনাই দারুসসালাম বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের সুযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘হালাল ফুড মার্কেটে’ প্রবেশের সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হালাল ফুড শিল্পে ব্রুনাইয়ের দক্ষতা প্রমাণিত।

পারস্পরিক চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা আরো জোরদার করবে উভয় দেশ। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল নিয়োগ ও ওষুধ উৎপাদন এবং বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে কার্যকর সুযোগ-সুবিধা দিতে আর্থিক কার্যক্রম জোরদারে দুই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রতি উভয় পক্ষ জোর দিয়েছে।

অভিন্ন স্বার্থ এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), কমনওয়েলথ এবং আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা আরো জোরদারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অব্যাহত চেষ্টার প্রতি দুই নেতা সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং এই সম্পর্ক উন্নয়নে পারস্পরিক লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তারা সম্মত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতা প্রদান এবং তাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগের প্রতি ব্রুনাই দারুসসালাম সমর্থন দিয়েছে। এতে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টার জন্য ব্রুনাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।

অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য সুলতানের সরকার এবং কক্সবাজারে ফিল্ড হাসপাতালে জরুরি ওষুধ ও স্বাস্থ্য উপকরণ সরবরাহ এবং আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ইয়াং ডি পারতুন অব ব্রুনাই দারুসসালামের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি লাভ এবং সামাজিক খাতে অসামান্য সাফল্য অর্জন করায় ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত করা ও স্বীকৃতি লাভ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ নির্ধারিত যোগ্যতার মানদণ্ড সফলভাবে পূরণ করায় অভিনন্দন জানান।

ব্রুনাই দারুসসালাম খাদ্য ও কৃষি খাতে বাংলাদেশের সফলতা স্বীকার করেছে এবং কৃষি, মৎস্যচাষ ও গবাদিপশু পালন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষ কৃষি ও খাদ্যপণ্য খাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্ভাবনা অন্বেষণ করবে এবং জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে সহযোগিতা করবে। নেতারা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা স্বীকার করে সর্বাধিক রফতানি সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে নিজ নিজ দেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সক্রিয় বিনিময় উৎসাহিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

তারা সক্রিয়ভাবে যথাযথ ব্যবস্থার অধীনে একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনা বিবেচনা করবেন এবং এ লক্ষ্যে একটি যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নেতারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে মতবিনিময় করেন। তারা এ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তাদের সহযোগিতা জোরদার করার উপায় অন্বেষণ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারকরণে জনগণের সঙ্গে জনগণের ভাব বিনিময়ের গুরুত্ব স্বীকার করে নেতারা সফর, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, ছাত্র ও কর্মীদের আসা-যাওয়া, তথ্য বিনিময় এবং গবেষণা ও উন্নয়ন প্রয়াসের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাপকতর ও গভীর সহযোগিতা উৎসাহিত করার জন্য অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যেতে একমত হয়েছেন।

উভয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে এবং অবিলম্বে বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ পারস্পরিক কল্যাণমূলক ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা ও সম্পর্কের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। উভয় পক্ষ বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে সক্ষমতা অর্জন, জ্ঞান বিনিময়, শান্তি স্থাপন এবং মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে গভীর সহযোগিতা প্রদান উৎসাহিত করবে।

পারস্পরিক কল্যাণে নতুন সম্ভাব্য ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে সব স্তরের কর্মকর্তাদের ঘন ঘন সফর বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে নেতারা ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন আহ্বানকে স্বাগত জানান এবং বন্দর সেরি বেগওয়ান নগরীতে ২০২০ সালে দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় রয়েছেন। নেতারা উভয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী শ্রমিকদের মূল্যবান অবদান স্বীকার করেন এবং আলোচনার মাধ্যমে শ্রম সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা খুঁজে দেখার জন্য কর্মকর্তাদের উৎসাহ প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শী নেতৃত্বের অধীনে ব্রুনাই দারুসসালামের প্রশংসিত অগ্রগতিতে অবদান রাখার জন্য সুলতানকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সুলতানের অবদান ব্রুনাই দারুসসালামে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি রক্ষা করেছে। প্রধানমন্ত্রী ওয়াওয়াসান ২০৩৫-এর অধীনে ব্রুনাই দারুসসালামের কৌশলগত জাতীয় উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনের জন্য সুলতানের প্রশংসা করেন।

সুলতান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী শান্তি, অভিবাসন, পরিবেশ সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং মানবিক কর্মসূচির পাশাপাশি জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক অংশগ্রহণসহ বাংলাদেশ সরকারের অবদান স্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে ও তার সফরসঙ্গীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা প্রদর্শন করার জন্য সুলতান, ব্রুনাই দারুসসালামের ইয়াং ডি-পারতুয়ান ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং নিকটতম সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করার জন্য সুলতানকে আমন্ত্রণ জানান।

গত সোমবার ইস্তানা নূরুল ইমানে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দুই নেতার নেতৃত্বে একটি আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সফরকালে নেতারা কৃষিতে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহযোগিতা, মৎস্য ও পশুসম্পদ; তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ (এলএনজি); যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি ও শিল্প ক্ষেত্রে ছয়টি স্মারকলিপি স্বাক্ষর করেন। নেতারা উভয় দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসামুক্ত সফর সুবিধা চালুর বিনিময় নোট স্বাক্ষরকে স্বাগত জানান। দুই নেতা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!