• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের পটেটো ফ্লেকস


এম সুজন আকন মে ৯, ২০১৬, ০৪:১৭ পিএম
বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের পটেটো ফ্লেকস

মানুষকে ঘিরে মানুষের মাধ্যমে এবং মানুষের জন্য যে কাজ তাই হচ্ছে উন্নয়ন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও শিল্প উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন বেকার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে।

ঘাম ঝরানো কৃষকের ফসল আলু রূপান্তর করে ফ্লেকস (আলুর পাউডার) উৎপাদনের লক্ষ্যে ঢাকার অদূরে দেশের আলু উৎপাদনের বিখ্যাত জেলা মুন্সিগঞ্জের পশ্চিম মুক্তারপুরে বিশাল এলাকাজুড়ে ২০১১ সালে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব পরিবেশে স্থাপিত হয়েছে আধুনিক কৃষিনির্ভর পটেটো ফ্লেকস ইন্ডাস্ট্রির একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে ইটালি ও জার্মানির মেশিনে প্রক্রিয়াতকরণ হয় প্রতিদিন প্রায় ১২০ মেট্রিক টন আলুর ফ্লেকস। 

বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে খাদ্যাভাসেও। ইউরোপের অনেক জনপ্রিয় খাবার এখন দেশেও প্রচলিত হচ্ছে। মৌসুমি ফসলগুলোকে সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে খাদ্যমান ঠিক রেখে এখন ইচ্ছে করলে পুরো বছরজুড়েই খাওয়া যায়। এরমধ্যে এমন একটি সবজি হচ্ছে আলু।

তাই দেশেই তৈরি হচ্ছে পটেটো ফ্লেকস। সোনালি পটেটো ফ্লেকস নামে এই খাবার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করছে ইউনুস গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিক্রমপুর পটেটো ফ্লেকস ইন্ডাস্ট্রি। দেশে নতুন পণ্য হলেও ইউরোপে পটেটো ফ্লেকস বেশ জনপ্রিয়। পটেটো ফ্লেকস দিয়ে স্বল্প সময়ে সহজেই তৈরি করা যায় নানা পদের খাবার, যা সব বয়সী মানুষ খেতে পারে।

সোনালি পটেটো ফ্লেকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ নোমান জানান, দেশি আলু দিয়ে তৈরি সোনালি পটেটো ফ্লেকস ব্যবহার করে স্পাইসি ম্যাস পটেটো, পটেটো কোটেড ব্রেড চিকেন, আলুর শাহী বরফিসহ নানা সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত করা যায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস চ্যাপার্সন ১৮শ’ শতকের প্রথম দিকে তার শাসন আমলে হোয়াইট হাউসে রাতের খাবারে ভাজা আলু পরিবেশন শুরু করেন। সেই সময় থেকে এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়তে থাকে।

জাতিসংঘের হিসেব মতে, ২০১০ সালে বিশ্বে প্রায় ৩২৪ মিলিয়ন টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদনের দুই তৃতীয়াংশই প্রাণিদের খাদ্য উৎপাদনে ও মার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্ট্রোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রমতে, দেশে ৩৭০ টি হিমাগার রয়েছে। এতে কমপক্ষে ৪৫ লক্ষ টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। বর্তমানে উৎপাদন অনুযায়ী প্রায় অর্ধেক আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না। যদি এগুলো প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে খাদ্য উপকরণ তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায় তাহলে কৃষকরা ন্যাজ্য মূল্য পাবে সেই সঙ্গে দেশের মানুষের ভাতের উপর চাপ কমে আসবে।

ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর পুষ্টিমান বিষয়ে শিশুমাতৃক ইনস্টিটিউটের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শায়েলা নাসরিন বলেন, ভাতের মধ্যে যে সব পুষ্টিগুণ রয়েছে আলুর মধ্যে তার সব পুষ্টিগুণই রয়েছে। 

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে পটেটো ফ্লেকসের খাদ্য তৈরি হচ্ছে এর পুষ্টিমান বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা জানি যে, দেশে আলু অনেক সস্তা এবং আলু সবশ্রেণির মানুষ খুব পছন্দ করে। সেই ক্ষেত্রে আলুর যে পটেটো ফ্লেকস তৈরি হচ্ছে এটা খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ। আলু যেমন ওজন কমায় তেমনি ওজন বাড়াতেও সাহায্য করে। 

তিনি আরো জানান, পটেটো ফ্লেকসের সঙ্গে দুধ ও চিনি মিশিয়ে চাহিদা অনুযায়ী শিশুকে দিতে হবে। এটা শিশুর পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি বয়স্কদের বেলায় এটি হৃদরোগ এবং স্ট্রেসদের জন্য খুবই ঝুঁকিমুক্ত। তাই বয়স্কদের জন্য এটি নিশ্চিন্তে দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও পটেটো ফ্লেকসটি ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এটি পরিমাণ মতো খেলে ব্লাড প্রেসারও কমে যায়। 

কি উদ্দেশ্যে পটেটো ফ্লেকস উৎপাদন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জাভেদ নোমান বলেন, আমাদের এই কারখানাটি করার মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের আলু চাষীদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচানো। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে আলু উৎপাদন হয়। অন্যদিকে প্রতিবছরই বেশিরভাগ আলু পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা সরাসরি আলু চাষীদের কাছ থেকে ন্যাজ্য মূল্যে আলু ক্রয় করে তা গুদামে সংরক্ষণ করি। পরে তা দিয়ে ফ্লেকস তৈরি করি। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে আমাদের দেশে ও বহির্বিশ্বে এই ফ্লেকসের একটা বাজার সৃষ্টি করা। অন্যদেশ থেকে যেসব ফ্লেকস বাংলাদেশে আমদানি করা হতো আমরা এই ফ্লেকস তৈরির পরে আমদানি অনেক কমে গেছে। তাই আমাদের এখন পরিকল্পনা হচ্ছে এই আমদানির পরিমাণ শূন্যতে নামিয়ে আনা।

রপ্তানিযোগ্য এ প্রতিষ্ঠানটি বিএসটিআই অনুমোদিত পটেটো ফ্লেকস উৎপাদনে প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখছে। সেই সঙ্গে কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এটাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান। যেটি সারা বছরই উৎপাদন করছে স্বাস্থ্যকর পটেটো ফ্লেকস। সোনালি পটেটো ফ্লেকস পাওয়া যাচ্ছে সুপারশপসহ খুচরা পণ্যের দোকানে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার ফ্লেকস, ফাস্টফুড, চিপস, নুডুলস, কেক ও নানা প্রকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনকারী শিল্পে বহুল ব্যবহৃত পটেটো ফ্লেকস প্রতিষ্ঠান থেকে সরবারাহ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমসুজনআকন/আলমামুন

Wordbridge School
Link copied!