• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং রাগ-অনুরাগ


জাহিদুল ইসলাম জুলাই ২, ২০১৯, ১১:৪৫ পিএম
বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং রাগ-অনুরাগ

ঢাকা : ক্রিকেট খেলাটি নিছক বিনোদনের জন্য হলেও বর্তমানে খেলাটি আমাদের জাতীয়তাবাদের প্রকাশ ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কিন্তু দেশের জন্য এই আবেগ থেকে আমরা যেভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রকাশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গালিগালাজ করে নিজের বংশ এবং দেশের পরিচয় দিচ্ছি তা কি ঠিক হচ্ছে? এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচে লিটন দাসের আউটের পর ফেসবুকে ঢুকেই দেখতে পেলাম বহু পোস্ট রয়েছে নিউজ ফিডে যেখানে আম্পায়ারকে গালি দেওয়া হয়েছে। হোক বড় ভাই, ছোট ভাই কিংবা বন্ধু; সবাই মনের সুখে গালি দিচ্ছে। আপনার প্রোফাইল থেকে আপনি যা খুশি পোস্ট করতে পারেন। কিন্তু গালি দিয়ে আসলেই কি আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে? ওই আম্পায়ার কি আপনার-আমার পোস্ট দেখবে? নাকি আইসিসি আমাদের পোস্ট দেখবে? পোস্ট করছেন আপনি কিন্তু সেই পোস্ট পড়ে আরো অনেক লোকের মুখে গালি চলে আসছে।  

আরেকটি গালির আঁতুড়ঘর হচ্ছে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজ। কমেন্ট বক্সে ঢুকলেই আইসিসি বা অন্য কোনো দেশ নিয়ে বাংলাদেশিদের গালির কারণে সেখানে টিকে থাকা দায় হয়ে যায়। এই গালি দিলে কি মাশরাফিদের খেলার শক্তি দ্বিগুণ হয়ে যায়? নাকি বিদেশিরা হার্ট অ্যাটাক করবে? বিদেশিদের সামনে আমরা নিজেদের কি পরিচয় তুলে ধরছি? তারা তো ধরেই নেবে গালি না দিলে বাংলাদেশিদের পেটের ভাত হজম হয় না।  

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, আম্পায়ার বা আইসিসি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ভারত বা পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সমালোচনা। কীভাবে? আম্পায়ার পাকিস্তানি, বাংলাদেশিদের দেখতে পারে না; আইসিসি ভারতের তাই তাদের বেশি সুবিধা দেয়। এ রকম নানা রকম কাল্পনিক অভিযোগ তৈরি হয়। অবশ্যই কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে নেওয়া হয়। কিন্তু আপনার-আমার মুক্তিযুদ্ধ বা অতীতের ইতিহাসগুলোকে আমরা কোন বুদ্ধিতে টেনে আনছি? সবকিছুতে অতীত ইতিহাস টেনে মুক্তিযুদ্ধের মতো পবিত্র একটি শব্দকে হাসি-তামাশার বিষয় বানিয়ে ফেলছি না তো? মাঝে মাঝে দেখা যায়, জাতীয়তার পাশাপাশি আমরা ধর্মকেও টেনে আনছি। ধর্ম কখনো খেলায় প্রভাব রাখে কি না আমার জানা নেই। যারা ক্রিকেট খেলেন বা এর সঙ্গে জড়িত তারা সবাই পেশাদার। তারা ক্রিকেটটা সেভাবেই খেলে থাকেন। আমি কখনো বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের খেলোয়াড়কে দেখিনি এসব অভিযোগ করতে। যারা নিজেরাই খেলছে তাদেরই যদি অভিযোগ না থাকে তাহলে আমরা দর্শক হিসেবে কীভাবে এমন অমূলক কথা অকপটে বলে ফেলছি।  

এভাবে গালি ছোড়াছুড়ি করে আমরা শুধু নিজেদের মধ্যে ঘৃণার সৃষ্টি করছি। নিজেরা বিভিন্ন দেশকে নিজেদের শত্রু বানিয়ে ফেলছি। বিদেশিদের কাছে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দিন দিন বাংলাদেশকে একঘরে করে দিচ্ছে। নিজের রাগকে সংযত করতে না পারলে মনে মনে গালি দিতে পারেন। কিন্তু তাই বলে বিদেশি পেজে গালি দিয়ে নিজেদের দেশের সম্মান নষ্ট না করাটাই উচিত বলে মনে করি। আইসিসি বা অন্য কোনো দেশ যদি আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে তার প্রতিবাদ করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। গালি দেওয়া কোনো সমাধান হতে পারে না।  

আমরা প্রতিবাদ করব, সমালোচনা করব। কিন্তু তা হতে হবে যৌক্তিক কারণে এবং নির্দিষ্ট নিয়মে। গালি আর মুক্তিযুদ্ধকে টেনে এনে আমরা নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্যকেই ছোট করছি। আমাদের সবার উচিত সমালোচনা করার ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা এবং ধৈর্য অবলম্বন করা। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা হিসেবেই পরিচিত, আবার রাজার খেলাও বলা হয় একে। তাহলে আমরা কি পারি না ভদ্র ভাষায় প্রতিবাদ করতে!

লেখক : শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!