• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের ‘লজ্জা’ ২০০৩ বিশ্বকাপ!


রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ মে ২৩, ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম
বাংলাদেশের ‘লজ্জা’ ২০০৩ বিশ্বকাপ!

ফাইল ছবি

ঢাকা: স্বপ্নের শুরু বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে তাই হয়েছিল। ১৯৯৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি ছিল বেশি। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েই হারানো গিয়েছিল পরাক্রমশালী পাকিস্তানকে। বাংলাদেশের কাছে পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে স্কটল্যান্ডও। বিশ্বকাপের এই পারফরম্যান্সই বাংলাদেশকে দ্রুত টেস্ট মর্যাদা পেতে সাহায্য করে।

টেস্ট মর্যাদার তিন বছর পর ২০০৩ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ খেলতে উড়াল দিল দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিশ্বকাপকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশাও ছিল অনেক বেশি। বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল অপেক্ষাকৃত দুই দূর্বল দল কানাডা ও কেনিয়া। আশাবাদীরা অঙ্ক কষে বের করলেন এই দুই দলকে হারিয়ে তারপর  যদি বড় কোনও শিকার বাগে আনা যায় তাহলে বাংলাদেশের সুপার সিক্সে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হবে!

বিশ্বকাপ শুরুর আগে কারও এমন ভাবনাকে বাড়াবাড়ি মনে হয়নি। ঠিকই তো কানাডা ও কেনিয়াকে হারাতে পারবে না টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া একটা দল! কিন্তু ডারবানে যা ঘটল তা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের বুকে শেলের মতো বিঁধল। কানাডাকে ১৮০ রানে অলআউট করে দিয়ে খালেদ মাসুদের দল অলআউট মাত্র ১২০ রানে! হায়! হায়! উঠে যায় বাংলাদেশে। গোটা ক্রিকেট বিশ্বই বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে হতভম্ব পড়ে।

কানাডার কাছে পরাজয়ের পর মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকে খালেদ মাসুদের দলের। যার প্রমাণ মিলল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচে মাত্র ১২৪ রানে অলআউট হওয়ার পর। একজন বোলারের হ্যাটট্টিক করাই যেখানে দুঃসাধ্য সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শুরুর প্রথম তিন বলেই আউট হান্নান সরকার, আল-শাহরিয়ার ও মোহাম্মদ আশরাফুল। চতুর্থ বল ডট। পঞ্চম বলে সানোয়ার হোসেন ফিরে গিয়ে বিভিষীকাময় পরিস্থিতি তৈরি করলেন।

রেকর্ড বইয়ে উঠে গেল চামিন্দা ভাসের নাম। হ্যাটট্টিকসহ ইনিংসের প্রথম ওভারে ৪ উইকেট। বিরল এক রেকর্ডই গড়লেন। যেটা বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেই এর আগে কখনও ঘটেনি। ১২৪ রান টপকাতে গিয়ে দু’ওপেনার মারাভান আতাপাত্তু (৬৯) ও সনাথ জয়াসুরিয়া (৫৫) হেসেখেলে শ্রীলঙ্কাকে জেতালেন ১০ উইকেটে। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেল বাংলাদেশের।

পরের ম্যাচ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিংয়ের পর বাংলাদেশ ক্রিজে নামতেই শুরু হয় বৃৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি বৃষ্টিই ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ঘটল শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পুনরাবৃত্তি। ৩৫.১ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। আর এ রান টপকাতে প্রোটিয়াদের কোনও উইকেটই হারাতে হয়নি। একের পর এক জঘণ্য পরাজয়ে চারদিকে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়! এরই মাঝে তরুণ পেসার তালহা যুবায়েরের চোটের কারণে দেশ থেকে উড়িয়ে আনা হলো আকরাম খানকে।

নিউজিল্যান্ড ম্যাচে এসে কিছুটা উন্নতির রেখা চোখে পড়ল। বাংলাদেশ প্রথমবার পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পেরেছে এই ম্যাচে। রান উঠলো ৭ উইকেটে ১৯৮। ৮২ বলে ৫৬ রান করেন আশরাফুল। ফল যা হবার তাই হলো। নিউজিল্যান্ড ৩৩.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই জিতে গেল।

শেষ ভালো যার সব ভালো তার। বাংলাদেশও দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে তাই করতে চেয়েছিল শেষ ম্যাচে কেনিয়াকে হারিয়ে। কিন্তু বিধি বাম! কেনিয়ার ২১৭ রান অতিক্রম করতে গিয়ে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল মাত্র ১৮৫ রানে। বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে ৩২ রানে হেরে রিক্ত হাতেই দেশে ফিরতে হয়েছে খালেদ মাসুদের দলকে।

বাংলাদেশের লজ্জা আরও বাড়ল যখন দেখা গেল কেনিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলছে, আর বাংলাদেশ সেখানে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। টুর্নামেন্টজুড়ে বাংলাদেশের সঙ্গী হয়ে থেকেছে লজ্জা! তাই ২০০৩ বিশ্বকাপকে বাংলাদেশের ‘লজ্জা’ বললেও বোধহয় ভুল হবে না!

সোনালীনিউজ/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!