• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট ঘোষণায় আওয়ামী লীগের রেকর্ড


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১৪, ২০১৯, ১২:৪৮ পিএম
বাজেট ঘোষণায় আওয়ামী লীগের রেকর্ড

ঢাকা : জাতীয় সংসদে বাজেট ঘোষণায় রেকর্ড গড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট ঘোষণার রেকর্ড আছে শুধু এ দলেরই অর্জনের তালিকায়। জাতির জনক ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের সরকার বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) একাদশ সংসদের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করে। এর মধ্য দিয়ে দলটির নেতৃত্বের সরকারের ২০তম বাজেট পেশ করা হয় সংসদে। এবারের বাজেট উপস্থাপনায় আরেকটি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গতকাল বাজেট উপস্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি হওয়ায় গত ১০ বছরে বাজেটের আকার ক্রমেই বাড়ছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর প্রথম সরকারের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বাজেটের আকার অনেক বেড়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ সরকার এবার ১৭তম বাজেট প্রস্তাব করেছে। চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের চারজন অর্থমন্ত্রী ১৯টি বাজেট দেন। বিএনপির তিন মেয়াদের শাসন আমলে তিনজন অর্থমন্ত্রী ১৬টি বাজেট উপস্থাপন করেন। জাতীয় পার্টির আমলে নয়টি বাজেট চারজন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তিনটি বাজেট দেয় দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে বিশাল বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের প্রথমবারের মতো এক লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন ওই সময়ের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যা পরবর্তী কয়েক অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে বেশ বড় আকার নেয়। নবম সংসদের শেষ বাজেটেই দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত। গত ১০ বছরে দেশের বাজেট বেড়েছে চার গুণ বা চার লাখ ১৭ হাজার ২০ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন বারের শাসনামলে প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়লেও ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে তা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

১৯৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলার আকাশে ওঠে স্বাধীনতার সূর্য। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু  হয় স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে গণপরিষদে উপস্থাপিত হয় দেশের ইতিহাসের প্রথম বাজেট। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের সরকারের ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন তখনকার অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করে। ১৯৯৭ সালের ২৮ জুলাই সেই সময়ের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া ঘোষণা করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের প্রথম বাজেট। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকার ওই বাজেট সেই সরকারের শেষ বছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ক্ষমতায় এসে তৃতীয়বারের মতো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব আড়াই লাখ কোটি টাকার ওপরে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর বাজেটের পরিমাণ দাঁড়ায় চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকায়। গত মেয়াদের শেষ অর্থবছর ২০১৮-১৯-এর জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১৯তম বাজেট পেশ করে। যার আকার ধরা হয় চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী গতকাল দুপুরে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সংসদে প্রথমে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অসুস্থতার কারণে তিনি বসে বাজেট পেশ করছিলেন। একপর্যায়ে তার পক্ষে বাজেট পেশ করা সম্ভব হচ্ছিল না। বিকেল পৌনে ৪টার পর বিরতি নিয়ে আর বাজেট বক্তৃতা পেশ করার অবস্থা না থাকলে অন্য কারো সহায়তা চান তিনি। এ সময় আগ্রহী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট বক্তৃতাটি সংসদে পেশ করেন। তিনি বিকেল ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত বাজেট পেশ করেন। এর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর বাজেট উপস্থাপনের নজির সৃষ্টি হয়।

বাজেট বইয়ে অর্থনীতিতে দেশের সফলতা ও অর্জন নিয়ে দক্ষ নেতৃত্বের কারণে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ’ উল্লেখ করা হয় বেশ কয়েকবার। শেখ হাসিনা বাজেট পেশের সময় তা পড়তে থাকেন। এক সময় পাঠ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিজেই ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যেসব জায়গায় আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে, তা কিন্তু আমি ভুলে পড়ে ফেলেছি। এটা অর্থমন্ত্রীর হয়ে আমি পড়ছি।’

এমন একটি অংশ পড়ে প্রধানমন্ত্রী স্মিত হাসেন। এ সময় উপস্থিত সংসদ সদস্যরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাস্যরসে মেতে ওঠেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাজেট বইয়ে প্রধানমন্ত্রীকে যেসব জায়গায় ধন্যবাদ জানানো হয়েছে, তা পাঠ করতে বলেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!