• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

বানবাসি মানুষের চরম দুর্ভোগ


নিউজ ডেস্ক জুলাই ১৫, ২০১৯, ০৬:৩১ পিএম
বানবাসি মানুষের চরম দুর্ভোগ

ঢাকা : টানা বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াইসহ দেশের বেশিরভাগ নদনদীর পানি বাড়ছে।

ফলে সোমবার (১৫ জুলাই) বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও হবিগঞ্জ জেলায়। বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হওয়ায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে বান্দরবান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে।

আর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে লালমনিরহাট, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই পানিবন্দি মানুষের সংখা বাড়ছে; বাড়ছে ভোগান্তি। পানি ওঠায় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

রোববার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ১৫৭, রংপুরে ১০০, বগুড়ায় ৩৯ ও গাইবান্ধায় ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অন্তত ১০ কিলোমিটার ডুবে আছে। ঢলের পানির তোড়ে জামালপুরে পরিত্যক্ত রেললাইন ও সড়কবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এদিকে টানা বর্ষণে গতকালও পাহাড়ধসে বান্দরবান ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় দুই নারীসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

জামালপুর : যমুনা-ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে জেলার ৬ উপজেলার ২৫ ইউনিয়নের কমপক্ষে ৭৫ গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। গতকাল রবিবার দুপুরে যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

শনিবার (১৩ জুলাই) রাতে পানির তোড়ে দেওয়ানগঞ্জ-কুলকান্দি পরিত্যক্ত রেললাইনের গুজিমারী এলাকায় প্রায় ৫০ ফুট ভেঙে দুটি ঘর ভেসে যায়।

একই রাতে ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের পূর্ববামনা ও উলিয়ায় প্রায় একশ মিটার সড়কবাঁধ ভেঙে যায়। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও রেলওয়ে স্টেশনে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

চকরিয়া : কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমুরকুল এলাকায় গত শনিবার রাত ২টার দিকে পাহাড়ধসে মোহাম্মদ ছাদেক (৩২) ও তার স্ত্রী ওয়ালিদা বেগম (২১) নিহত হন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব জানান, রাত ২টার দিকে স্বামী-স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় পাশের পাহাড়ের একটি অংশ তাদের ঘরের ওপর পড়ে। এতে মাটিচাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়।

বান্দরবান : লামা উপজেলায় পাহাড়ধসে মিরজান বেগম নামে ঘুমন্ত এক নারীর মৃত্যু হয়। গতকাল ভোরে সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধুঝিড়ির আগা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই দুর্ঘটনায় আহত হন নিহতের ছেলে ও পুত্রবধূ। এদিকে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃষ্টি থামলেও সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি না কমায় সারাদেশের সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার অন্তত ১০ কিলোমিটার পানিতে ডুবে আছে। এতে কিছু যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শঙ্খ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল দিনের বেশিরভাগ সময় বৃষ্টি হয়নি। এর পরও শঙ্খ নদীর পানি কমেনি।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রবিবার দুপুরে ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার, জেলা শহরের ব্রিজরোড পয়েন্টে ঘাঘট নদীর পানি ৫৪ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলায় গতকাল পর্যন্ত ১১৩টি গ্রাম তলিয়ে যায়। এদিকে ১৫ স্থানে ফাটল ধরায় হুমকির মুখে পড়েছে শ্রীপুর-সুন্দরগঞ্জ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। পানি ঢুকে পড়ায় উপজেলার ২২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি গতকালও বেড়েছে। দুপুর ১২টার দিকে পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আরও এক সপ্তাহ পানি বাড়তে থাকবে বলে জানান বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ।

সিরাজগঞ্জ : যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৩.১৫ মিটার রেকর্ড করা হয়, যা বিপদসীমা থেকে মাত্র ২০ সেন্টিমিটার নিচে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন উপসহকারী প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৩৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে। আরও দু-একদিন পানি বাড়তে পারে।

কুড়িগ্রাম : জেলার বন্যা পরিস্থিতি গতকাল আরও অবনতি হয়। গতকাল রবিবার দুপুরে ধরলা সেতু পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এদিকে ধরলা নদীর সারডোব এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নীলফামারী : তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকাল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ডিমলা উপজেলার ১৪ গ্রামের প্রায় ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

কক্সবাজার : ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেশি অবনতি হয়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায়। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ ১৭টি অভ্যন্তরীণ সড়কের ওপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান, মাতামুহুমী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজারের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গনের ফলে দেখা দেওয়া বন্যার পানিতে বানবাসি মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গত শুক্রবার ভোরে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পৌরসভার রামপাশা এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে কমলগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। শনিবার কিছুটা কমলেও রবিবার সকালে আবার ধলাই নদীর বিপদসীমা অতিক্রম করার সাথে বাড়তে থাকে পানি।

উপজেলার অন্যান্য ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার পানি রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড ও ৮ নং ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রামপাশা- চৈত্যনগঞ্জ সড়কে পানি উঠেছে। রামপাশা গ্রামের প্রতিম ধরের বাড়ির সামনে রবিবার ভোর ৩টায় নতুন আরেকটি ভাঙ্গন দেখা দেয়। এতে করে আরো কয়েকটি বাড়িতে পানি উঠে। চরম দুর্ভোগে পড়েন পানি বন্দী লোকজন। তিন দিন ধরে পানিতে প্লাবিত রামপাশা। বিশেষ করে রামপাশা গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক মানুষজন পানি বন্দি হয়ে পড়েন। বাড়ি ঘরের উঠানে প্রায় ২/৩ ফুট পানি। পানির মধ্যে কেউ ঘর থেকে বের হতে পাচ্ছেন না। সন্ধ্যার পর হতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকের আধা পাকা ঘরে পানি উঠেছে। আবার অনেক ঘর কাচা সেগুলো ঝুকিঁপুর্ণ অবস্থায় রাত্রী যাপন করছেন।

সরেজমিনে রোববার রাতে এলাকায় দেখা যায়, হা‍ঁটু পানি বেয়ে অনেকইে নিরাপদ স্থানে ছুটছেন। আবার যাদের যাবার জায়গা নেই তারা পানির মধ্যে ঘরে রাত্রী যাপন করেছেন। শুধু পানি নয় সারারাত বৃষ্টির কারনে আরো দুভোর্গ বেড়ে যায় তাদের।

পানি বন্দি ওমর পাল, প্রসেনজিৎ পালসহ অনেকেই বলেন, আমরা পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছি। শুক্রবার এর চেয়ে দ্বিগুন পানি আজ বের হয়েছে। সারারাত কিভাবে কাটাবো বুঝতে পারছিনা।

রামপাশা গ্রামের পশ্চিম এলাকায় দুইজন মহিলা জানান, ঘরে পানি উঠায় রাস্তার পাশে ঠাঁই নিয়েছেন। তাদের পাশে আরেকটি পরিবার গবাদিপুশসহ আশ্রয় নিয়েছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণ নেই। রাতে অনেকের ঘরে খাবার ছিল না। আজ সোমবার সকালেও পৌরসভার রামপাশা, কুমড়াকাপন গ্রামের ২ শতাধিক পানি বন্দি রয়েছেন।

কমলগঞ্জ পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদ বলেন, রামপাশার ভাঙ্গনে মানুষজন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গ্রামের সবাই পানি বন্দি। শুক্রবারের চেয়ে বন্যার পানি গত দিন বেড়েছে। একই ভাবে বন্যায় রহিমপুর, ইসলামপুর, আদমপুর ও পতনউষার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের পানি বন্দি মানুষজন দুর্ভোগে রাত কাটিয়েছেন।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ কমেছে। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ৬০। গত রোববার পানি প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ৮৫।

নদীর পানি প্রবাহ কমলেও বেড়েছে জন দুর্ভোগ। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের গড্ডিমারী স্কুল সংলগ্ন একটি পাকা ও কাঁচা রাস্তা এবারের বন্যায় ভেঙ্গে  পানি লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ফলে ওই এলাকার লোকজন চলাফেরায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ৩/ ৪ কিলোমিটার ঘুরে তাদেরকে হাট-বাজার, স্কুল- কলেজ, হাসপাতালে আসতে হচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোলায়মান মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে হাতীবান্ধা উপজেলায় ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা কন্দর্প নারায়ন রায় বলেন, ডাউয়াবাড়ি আছের মাহমুদ উচ্চ বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।ওই স্কুলসহ গড্ডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বন্যার কারণে নদী কবলিত আশপাশের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

সুনামগঞ্জ : সুরমা নদীর পানি ধীরগতিতে কমছে। অপরিবর্তিত রয়েছে ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, গতকাল বিকাল ৩টায় ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

পঞ্চগড় : অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে পঞ্চগড় শহরসহ পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শহরের করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, ভেরসাসহ জেলার সব কটি নদীর পানি বেড়েছে।

রংপুর : রংপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গতকাল দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদী কূলবর্তী ৫০ গ্রাম তলিয়ে পানিবন্দি আছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। পানি ওঠায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

রাঙামাটি : জেলায় শনিবার বিকাল থেকে বৃষ্টিপাত কমে আসায় বন্যা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনো দুর্গম বাঘাইছড়ি, বরকল ও বিলাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে আছে।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পাহাড়ধস এবং চেঙ্গী, মাঈনী ও ফেনী নদীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। চেঙ্গী নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে চেঙ্গী ইউপি কার্যালয়। মাঈনী নদীর ভাঙনে দীঘিনালার চোংড়াছড়ি, মেরুং, বোয়ালখালীর হাসিনশরপুর এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর ও ফসলি জমি বিলীন হয়েছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে খোয়াই এবং কুশিয়ারা নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল বিকাল ৪টায় খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভাঙনের হুমকিতে আছে হবিগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম জানান, খোয়াই নদীর পানি প্রতিঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার হারে বাড়ছে। এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি পারকুল এলাকার বাঁধ উপচে নবীগঞ্জের বিবিয়ানা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ঢুকছে।

সিলেট : সিলেটের সব নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপরে। উজানে বৃষ্টি কমায় নদীর পানি গত দুদিনের চেয়ে কিছুটা কমে এলেও পানিবন্দি রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার বিকাল ৩টায় সিলেটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার এবং কানাইঘাটে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা ও জকিগঞ্জের আমলশীদে বিপদসীমার ২০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং শেরপুরে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের মেঘনায় গতকাল সকালে পানি ৩ দশমিক ৪১ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে গত ৩ দিনে দশমিক ২৫ মিটার পানি বাড়লেও এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি বলে জানান চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু রায়হান।

রাজশাহী : উজানের ঢলে গড়ে প্রতিদিন ৪০ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে পদ্মার পানি। রাজশাহী পয়েন্টে গতকাল রবিবার সর্বোচ্চ পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার। আগের দিন শনিবার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পদ্মার পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ঝিনাইগাতী : ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজারমারী সেতুর পূর্ব পাশে কালিনগর গ্রামে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কের দেড় কিলোমিটার এবং সেতুর পশ্চিম পাশে বাগেরভিটা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এক সপ্তাহ ধরে পানিতে ডুবে আছে। ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি পানিতে ভাসছে। এমন চিত্র প্রতি বর্ষা মৌসুম এলেই দেখা যায়।

হাতিয়া : ভারী বর্ষণ ও জোয়ার অব্যাহত থাকায় নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, নঙ্গলিয়া, নলেরচর, কেয়ারিংচর, নলচিরা, সুখচর, তমরদ্দি, চরঈশ্বর, চরকিং, বুড়িরচর ও হাতিয়া পৌরসভার অর্ধশতাধিক গ্রাম তলিয়ে গেছে।

আখাউড়া : ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের পানির তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে নিচু এলাকার অনেক গ্রামের বাড়িঘরে পানি ওঠে।

কসবা : টানা বৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা রেলস্টেশনটি চার দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ টিকিটসহ মালামাল নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পানির কারণে যাত্রীদের সঠিক সময়ে টিকিট দেওয়া যাচ্ছে না। কসবা স্টেশনের বুকিং সহকারী জসীমউদ্দিন জানান, পানির কারণে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!