• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাম দলগুলো চুপচাপ, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৯, ২০১৮, ০৭:১৪ পিএম
বাম দলগুলো চুপচাপ, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বেশ সরব এখন রাজনীতি। নভেম্বরের প্রথমে তফসিল এবং ডিসেম্বরে নির্বাচন। ভোটের সম্ভাব্য এই দিনক্ষণের আগে নানা হিসাবে চলছে জোট-মহাজোট ভাঙা-গড়া। রাজনীতির এই হই-হুল্লোড়েও সাড়া নেই বাম দলগুলোর। সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশও করেছেন রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ। বামপন্থি জোটের নেতাদের দাবি, তারা সরব।

সর্বশেষ তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে বাম ঘরানার রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সংখ্যা ২৪। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১০ দল। নিবন্ধিতরা হচ্ছে— বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল। এর বাইরেও অনিবন্ধিত আছে আরো ১৪ দল।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে আছে ১০ দল। এই দলগুলো হলো বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), জাসদ (বাদল), ন্যাপ (মোজাফফর), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, বাসদ (রশীদ খান), কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং সাম্যবাদী দল। আর ২০ দলীয় জোটভুক্ত বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (একাংশ)।

২০০৫ সালে ২৩ দফা ঘোষণা সামনে রেখে বাম প্রগতিশীল জোট ১১ দল, আওয়ামী লীগ, জাসদ ও ন্যাপ মিলে গঠন করে ১৪-দলীয় জোট। পরে জোট থেকে বেরিয়ে যায় সিপিবি, বাসদসহ ১১ দলের চার দল। জোটে থেকে যায় ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (একাংশ) আট দল। পরে জোট থেকে বাদ পড়ে গণফোরাম।

গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃত্বে ৮ বামপন্থি দল নিয়ে গঠিত হয় নির্বাচনী জোট ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’। সিপিবি ছাড়া জোটের অন্য অংশীদাররা হচ্ছে- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন ও বাসদ (মার্কসবাদী)। এদের কয়েক দলের আগেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আছে।

এই জোট গঠনের পর গত ২৪ জুলাই আকস্মিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সঙ্গে প্রায় একঘণ্টা তিনি সেখানে কাটান। বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সিপিবি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

রাজনৈতিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ এই জোটকে তাদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে সিপিবি নির্বাচনে অংশ না নিলেও একাদশে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

জোট সূত্র বলছে, সিপিবি’র নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় এই জোটের একাংশ চায় আওয়ামী লীগের জোটে শরিক হতে। জোটের বড় অংশ কোনো জোটে শরিকে আগ্রহী নয়। তারা আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে চায়।

জোটের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন আদৌ হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় আছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা কোন প্র‌ক্রিয়া‌য় হ‌বে, জনমনে এ বিষয় নিয়ে সন্দেহ-সংশয়, উদ্বেগ, শঙ্কা ও সংশয় তৈরি হয়েছে। সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এ নিয়ে সংশয়ের কথা বলেছেন।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা চুপ নই। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার, সংসদ বাতিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। এর অংশ হিসেবে ২৩ অক্টোবর সারা দেশে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া ২৯ অক্টোবর  রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে বেশি দলকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা সরকারি দল করবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের জোট আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কারো সঙ্গেই যাবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেব।

এছাড়া জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এই তিন দল নিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় মুক্তি জোট। এই বামপন্থি জোট মেরুকরণের বাইরে বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করে। তারাও সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন পরিকল্পনা বাতিল এবং নির্বাচন কমিশনের সংস্কার চায়।

গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টি ও কমিউনিস্ট ইউনিয়ন বাম ঐক্যজোট গঠন করে। নতুন এই জোটের কার্যক্রম নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!