• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে শীতজনিত রোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১২, ২০১৮, ০৯:৩৩ পিএম
বাড়ছে শীতজনিত রোগ

ঢাকা : শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত নানা রোগের ঝুঁকি। এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, মধ্যবয়সী, বৃদ্ধসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঠাণ্ডা লেগে সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর এগুলোই শীতকালীন সাধারণ রোগ-ব্যাধি। তবে ঠিকমতো যত্ন না নিলে এসব থেকে হতে পারে আরও বড় কিছু। চিকিৎসকরাা তাই শীতকালে প্রত্যেককে নিজের যত্ন নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিই জোর দিচ্ছেন তারা।

এরপরেও থেকে যায় চিকিৎসা, সে বিষয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, শীতজনিত রোগী মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।

শীতকালে কী ধরনের রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, শীতে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ বেশি হয়। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হাঁচি, কাশি এগুলো হয়। এছাড়া ত্বকের কিছু রোগ হয় যেমন অ্যালার্জি, স্কেভিস, চামড়া ফেটে যাওয়া। শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এছাড়া বড়রা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। আরও একটা রোগের প্রকোপ আমরা দেখি, এই সময়ে স্ট্রোকের রোগী বেশি বেড়ে যায়। মোট কথা, শীতকালে চর্মরোগ বাড়ে, শিশুদের রোগ বাড়ে এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ বাড়ে। আর স্ট্রোক বেশি হয়।

সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, ঢাকায় এখনও তেমন শীত পড়েনি। শীতকালে যেসমস্ত রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে আছে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা বেশি হয়, নিউমোনিয়া বেশি হয়, অ্যাজমা বেশি হয়। ব্রঙ্কাইটিস বেশি হয়, বিশেষ করে শিশুদের ব্রঙ্কিওলাইটিস বেশি হয়, বড়রা যাদের অ্যাজমা থাকে তাদের সেটা বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, আমরা জানি যে শীতের সময় শিশুদের নিউমোনিয়া হয় সেজন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। তবে, এখনও পর্যন্ত আমরা কোনোখান থেকে শীতজনিত রোগ বৃদ্ধির তেমন খবর পাইনি। এখনও চাপটা কম। এটার ব্যাপারে আমাদের সার্ভিলেন্স টিম আছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখি। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো এবং পাবর্ত্য জেলাগুলোতে শীত বেশি পড়ায় সেসব এলাকায় আমাদের টিমগুলো কাজ করছে।

ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, এখন যে রোগী বেড়েছে বিষয়টি এমন নয়, বরং শীত আসার পরে রোগীর পরিমাণ কমেছে। এখন শীতজনিত শ্বাসকষ্টের কিছু রোগী আসা শুরু করেছে। আমাদের আলাদা অ্যাজমা সেন্টার আছে। শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড আছে। সেখানে নিউমোনিয়ার জন্য সিভিয়ার নেবুলাইজেশন, ব্রঙ্কিওলাইটিস রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। আমার হাসপাতালে সব ধরনের ঔষধ বরাদ্দ আছে। আমাদের ঔষধের কোন জায়গায় ঘাটতি নেই। তবে, মাঝে মাঝে হঠাৎ করে শিশু ওয়ার্ডে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। সেটা সবসময় নয় মাঝে মাঝে হয়।

ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, এমনিতে সর্দি, কাশি, জ্বর এসব রোগীতো আমাদের আছেই। এছাড়া, শীতকালীন রোগীদের জন্য যে সমস্ত ঔষধ প্রয়োজন সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট হাসপাতালের রেসিডেন্ট চিকিৎসক সাদিয়া সুলতানা রেশমা বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখনই শ্বাসকষ্টের রোগী আসছে। তবে বহির্বিভাগে এ ধরনের রোগীর জন্য কোনও ঔষধ দেওয়া হয় না। অবশ্য, ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য ভ্যাকসিন আছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ করা ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে সব ধরণের ওষুধ আমরা ভর্তি রোগীদের দেই।

শীতকালে ত্বকের রোগ বেশি হয় তাই এটি প্রতিরোধেই বেশি গুরুত্ব দেন চিকিৎসকেরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের অনারারি মেডিকেল অফিসার ডা. আজমিরী বিনতে আসলাম বলেন, শীতকালে আমরা ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারটা মেইনটেইন করার জন্য বলি। ময়েশ্চারাইজার দিয়ে যেন স্কিনটা লক করে দেওয়া যায়। গোসলের পরপরই, গা মোছার পরই যখন শরীরে পানিটা ধরে থাকে, ত্বক নরম থাকে, ঠিক সেই সময়ে অলিভ অয়েল বা যে কোনও অয়েল শরীরে লাগাতে হবে। ময়েশ্চার (আর্দ্রতা) নিশ্চিত করে ত্বককে নরম রাখতে হবে। গরমকালের মতো শীতকালেও বেশি পরিমাণে পানি খেতে হবে। সেটা অবশ্যই ১০/১২ গ্লাস।

এছাড়া শীতেও সূর্যের আলো থেকে ত্বক রক্ষার ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এমনকি সানব্লকযুক্ত লিপ বাম (লিপজেল) লাগানো যেতে পারে।

শীতকালে শ্বাসকষ্ট থেকে দূরে থাকতে করণীয় প্রসঙ্গে চিকিৎসক সাদিয়া সুলতানা রেশমা বলেন, শ্বাসকষ্ট অ্যাজমার কারণে বাড়ে, যাদের সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) আছে তাদের শ্বাসকষ্ট বাড়ে। ধুলাবালি থেকে সাবধানে থাকতে বলি। মুখে মাস্ক পড়ে চলতে বলি। ঠাণ্ডাটা যেন না লেগে যায় এর জন্য শীতের পোশাক পরে থাকতে বলি। আর অ্যালার্জি যেসব খাবারের কারণে হয় সেগুলো এড়িয়ে চলতে বলি। এক্ষেত্রে আমরা ভ্যাকসিন নিতে বলি। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন আছে এবং নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন প্রতি বছর নিতে হবে। আর নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিনটি তিন বছর ও পাঁচবছর পরপর নিতে হবে। তবে, এই ভ্যাকসিন সবার জন্য না। যাদের ঘন ঘন ইনফেকশন হয় তাদের জন্য।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!