• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি এক মাসসহ ৭ মাসের ভাড়া শোধ করেই ঢাকা ছাড়লেন ছাত্রী


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৪, ২০২০, ০৫:৫৯ পিএম
বাড়তি এক মাসসহ ৭ মাসের ভাড়া শোধ করেই ঢাকা ছাড়লেন ছাত্রী

   
ঢাকা: স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির জন্য কোচিং ও পড়াশোনা করছিলেন মোছা. তাসনিয়া খাতুন। থাকতেন রাজধানীর ফার্মগেটের এম এ মোতালেব ভূঁইয়া (১১৬, গ্রিন রোড, ঢাকা) ভবনের ‘নিবেদিকা’ ছাত্রী হোস্টেলে। করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। প্রায় চার মাস পর গত ২৬ জুন ঢাকায় আসেন। বাসায় প্রবেশ করে দেখেন, দরজায় তার দেয়া তালার বাইরে আরও একটি তালা। হোস্টেলের ইনচার্জ জানান, বাসাভাড়া আগে দিতে হবে, তারপর রুমে প্রবেশ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব ভাড়া পরিশোধ করবেন- তাসনিয়া খাতুনের কাছ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি নেয়ার পর তালা খুলে দেন ছাত্রী হোস্টেলের ইনচার্জ।

শুধু তা-ই নয়, তিনবেলা খাবার ও বাসাভাড়া মিলে মোট পাঁচ হাজার টাকা দিতেন তাসনিয়া খাতুন। গত প্রায় চার মাস ছাত্রী হোস্টেলের সবাই গ্রামে থাকায় তাদের ক্যান্টিন বন্ধ ছিল। তারপরও খাওয়া-দাওয়াসহ সাত মাসে তাসনিয়া খাতুনের মোট বিল ধরা হয় ৩৫ হাজার টাকা। পুরো টাকাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেন হোস্টেল ইনচার্জ। আলোচনার একপর্যায়ে ২৪ হাজার টাকা নিতে রাজি হন ইনচার্জ।

সেই টাকা পরিশোধ করে গত রোববার (২৮ জুন) দুপুরে ছাত্রীনিবাস ছেড়ে বইপত্রসহ যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে যশোরের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তাসনিয়া খাতুন।

ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় ফার্মগেটে তাসনিয়া খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। বলেন, ‘চাকরির জন্য কোচিং করতাম এখানে থেকে। করোনার কারণে ১২ মার্চ গ্রামে চলে যাই। গত পরশু ঢাকায় আসি। এসে দেখি আমার রুমে দুটি তালা। এরপর কথা বলতে গেলে হোটেল ইনচার্জ জানান, আগে ভাড়া দিতে হবে, তারপর তালা খুলে দেয়া হবে। এরপর আমার কাছ থেকে মৌখিকভাবে স্টেটমেন্ট নিয়েছে যে, আমি কালকেই টাকা দিয়ে দেব। তারপর আমার রুম খুলে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে নিয়মিত ভাড়া দিতাম। মাঝখানে হোস্টেল নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় জানুয়ারি থেকে ভাড়া বাকি ছিল। এখন জানুয়ারি থেকে জুলাই (জুলাই মাস না আসলেও অতিরিক্ত এক মাসের বাড়তি ভাড়া রেখেছে) পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে আসলাম। সাত মাসের ভাড়া দিলাম।’

ভাড়ার বিষয়ে তাসনিয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের থাকা-খাওয়াসহ ভাড়া ছিল পাঁচ হাজার টাকা। জানুয়ারি থেকে জুলাই- এই সাত মাসে ভাড়া ধরেছে ৩৫ হাজার টাকা। যদিও আমি সাত মাস ধরে খাইনি। একপর্যায়ে তারা ২৪ হাজার টাকা নিতে রাজি হয়েছে। তারপরও আমাকে মাসে ৩৫০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। কিছু খাবার খরচও।’

বড় ভাই, দুলাভাই— এমন কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে ভাড়া পরিশোধ করলাম। এ অবস্থায় আর ঢাকা থাকা সম্ভব নয়। তাই গ্রামে চলে যাচ্ছি, বলেন তাসনিয়া খাতুন।

গত ৯ জুন ভাড়াটিয়া পরিষদ নামের সংগঠন এপ্রিল, মে ও জুন মাসের ভাড়া মওকুফের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। সংগঠনের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার সেসময় বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই কর্মজীবীরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। এখন তো অনেকেই বেকার। এদের অধিকাংশ গ্রামে চলে গেছে। আর যারা আছে তাদের ঘরভাড়া দিয়ে টিকে থাকা কঠিন। তাই আমরা বলছি, লকডাউন ও বিধি-নিষেধ চলাকালীন তিন মাসের ঘর ভাড়া যদি মাফ করে দেয়।’

দেশের চাকরির বাজারে করোনা কতটা ক্ষতি করেছে তার হিসাব যদিও সরকারের কাছে নেই। কিন্তু বেসরকারিভাবে জরিপ করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বলছে, ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি আর লকডাউনে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আর বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক বলছে, এই সময়ে ৯৩ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। এখন এই কমে যাওয়া আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে টিকে থাকা নিঃসন্দেহে কঠিন হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর বাড়ি ভাড়া বেপরোয়াভাবে বেড়েছে। এরপরও আয়-ব্যয়ে প্রকট অসামঞ্জস্যতা নিয়েও থাকতে হয়েছে মানুষকে। করোনার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ায় নিরুপায় হয়ে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ফলে তৈরি হচ্ছে ভাড়াটিয়া সংকট। এই সংকট সামনের দিনগুলোতে আরও প্রকট হতে পারে।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!