• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
খাদ্যগুদাম নির্মাণ

বাড়তি ব্যয় ২০২১ কোটি টাকা


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৯, ১০:৪১ পিএম
বাড়তি ব্যয় ২০২১ কোটি টাকা

ঢাকা : খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সরকারের সক্ষমতা ১৮ লাখ মেট্রিক টন। কোনো বছর উৎপাদন কমে এলে সংরক্ষণ করা খাবারে চাহিদা পূরণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সারা দেশে আটটি আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণে ২০১৪ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের আওতায় স্টিলের আট সাইলো নির্মাণের কাজ শেষ হলে খাদ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার টন বাড়বে।

তবে সাড়ে চার বছরে প্রকল্পে বরাদ্দের মাত্র ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বিলম্বের কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দুই হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে বলেও জানিয়েছিল আইএমইডি। এ অবস্থায় দুই হাজার ২১৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৯১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। গত বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সাড়ে চার বছরে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি সাড়ে ১১ শতাংশের কম। এ অবস্থায় চার হাজার ১৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে ব্যয় বাড়বে ১১৫ শতাংশ।

আইএমইডি সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল কাজ তথা আট সাইলো নির্মাণে এক হাজার ৪২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত এ কাজে হাতই দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে একটি প্যাকেজের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। দুটি প্যাকেজের দরপত্রে চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়েছে।

আটটি সাইলোর ভূমি উন্নয়ন, সাইট অফিস নির্মাণ ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে অবশ্য ৫১ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সাইট অফিস নির্মাণে ল্যাবরেটরি টেস্ট ছাড়াই নির্মাণ উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের এক হাজার ৮৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে। এতে সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় হবে মাত্র তিন কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ, দাতা সংস্থার শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানের ক্রয় প্যানেল নিয়োগ, প্রস্তাবিত সাইলোর চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, ঠিকাদার নির্বাচন, বিভিন্ন প্যাকেজে দাতা সংস্থার অনাপত্তি গ্রহণ, সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি প্রতিবেদন প্রণয়নসহ কাজ শুরুর আগে প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে বাড়তি সময় লেগেছে।

বরিশাল সাইলো সাইটের ভূমি উন্নয়নে জটিলতা, নারায়ণগঞ্জ সাইটের জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ, চট্টগ্রাম সাইটের অবহূত ভবন ও স্ক্র্যাপ মালামাল নিষ্পত্তিকরণ, খুলনা সাইটের জরাজীর্ণ ভবন অপসারণ, ময়মনসিংহ সাইটের পুরাতন খাদ্য গুদাম অপসারণ কাজে বাড়তি সময় লেগেছে।

উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রথম অর্থবছর (২০১৩-১৪) ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দের চাহিদা থাকলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। পরের বছর ডিপিপিতে ৭৮৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয় মাত্র ১২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৭৯৮ কোটি ১০ লাখ টাকা চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৩০০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বছর শেষে ব্যয় হয় মাত্র ৬৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এভাবেই প্রতিবছর প্রকল্পটির কাজ পিছিয়ে গেছে।

প্রকল্পের কাজ বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের মার্চে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পেলেও এর প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৬ আগস্ট। পিডি নিয়োগ দিতেই বাড়তি লেগেছে পাঁচ মাস। বিদেশি ক্রয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে বাড়তি লেগেছে এক বছর। তারা বিভিন্ন দেশে অবস্থান করায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। হলি আর্টিজান দুর্ঘটনার কারণে সাইলোর কাজ পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত বিদেশি পরামর্শকরা ঢাকায় আসতে অনীহা প্রকাশ করার বাড়তি সময় লেগেছে। তা ছাড়া বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রতিটি প্যাকেজের অনাপত্তি দিতে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে।

এ অবস্থায় দ্রুত কাজ শেষ করতে প্রকল্পটি সংশোধনের সুপারিশ করেছে আইএমইডি। সুপারিশের আলোকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। সংশোধিত প্রস্তাবে বিভিন্ন পর্যায়ের দফতরসহ এক হাজার ৬৪০টি স্থাপনায় আইসিটি যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রস্তাব যোগ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। খাদ্য অধিদফতরের ক্যাম্পাসে ১৫ তলার একটি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। মাঠপর্যায়ের ১৫টি স্থাপনায় ১৫টি ডিজিটাল ট্রাক স্কেল ও খাদ্য অধিদফতরের ৬টি আঞ্চলিক অফিসে খাদ্য পরীক্ষার ৬টি আধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপনের প্রস্তাবও রয়েছে সংশোধিত প্রকল্পে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক জানান, পরামর্শক নিয়োগে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন পেতে দেড় বছর পার হয়। সংস্থাটির অর্থছাড়ে বিলম্ব, পরামর্শক নিয়োগে আপত্তি নিরসন ও সাইলোর নকশায় বাড়তি সময় লাগায় প্রকল্পের কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। তবে বর্তমানে কাজের গতি বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রকল্পে বেশ কিছু অংশ জুড়ে দেওয়ায় ব্যয় বাড়ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!