• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণ ও বাংলাদেশ


আবদুল্লাহ মাহমুদ সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০, ১১:৩২ এএম
বায়ুদূষণ ও বাংলাদেশ

ঢাকা : বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর তালিকায় গতবারের মতো এবারো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকাও দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে গতবারের মতোই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০১৯ শীর্ষক রিপোর্টিংয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৯৮টি দেশের সার্বক্ষণিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ থেকে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেশের বায়ুতে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণার পরিমাণ বিবেচনায় তৈরি করা হয়। এমন মারাত্মক বায়ুদূষণের চিত্র কোনো দেশের জন্য সুখকর হতে পারে না। বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর পরিমাণ বিবেচনায় উক্ত তালিকার মান নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বায়ুর মানমাত্রা অনুসরণ করে বৈশ্বিক ওই সূচকটি তৈরি করা হয়েছে।

এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে বায়ুদূষণের এমন চিত্র অবস্থা বেশ হতাশাজনক। বিশ্বের অনেক অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ যেখানে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, সেখানে আমরা ২০১৮ সালের মতো এবারো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি, আগামীতে উন্নত দেশে রূপান্তর হওয়াটা আমাদের স্বপ্ন। কিন্তু পরিবেশগত দিক বিবেচনায় আমরা আজো অনুন্নত পর্যায়েই থেকে গেছি। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশগত অবস্থা এমন হওয়ায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। এমন বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারের ফলে নানা ভাইরাস সংক্রমণের তীব্র ঝুঁকিও থেকে যায়। বায়ুদূষণের সৃষ্টি ও স্রষ্টা আমরা নিজেরাই। ব্যক্তিগত অসতর্কতা, সামাজিক দায়িত্বহীনতা, অপরিকল্পিতভাবে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ ও পুরাতন অবকাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি গাছ কেটে বন উজাড় করে ফেলা, অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপনও বায়ুদূষণের জন্য অনেকাংশে দায়ী।

দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের চলমান কাজ, কয়লার খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে বায়ুদূষণের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। অবৈধভাবে যেখানে সেখানে ইটভাটা স্থাপন এবং তাতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের ফলে বায়ুদূষণ বেড়ে যাচ্ছে ঊর্ধ্বগতিতে। ইটভাটার কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে পরিবেশকে সংকটপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ঢাকায় বায়ুদূষণের জন্য দায়ী উৎসগুলোর মধ্যে ইটভাটার অবদান ৫৮ শতাংশ। এর পরই রয়েছে নির্মাণ ও মেরামত কাজের সঙ্গে আসা ধূলা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকে বের হওয়া ধোঁয়া। অন্যদিকে শীতকালে আমাদের দেশের আবহাওয়া বেশি খারাপ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ বৃষ্টি না হওয়ায় ধুলোবালি বাতাসের সঙ্গে মিশে বায়ুদূষিত করে। রাজধানীতে ব্যাপক জনসংখ্যার ঘনত্ব, অতিরিক্ত যানবাহন ও যানজটের কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমনভাবে চলতে থাকলে পরিবেশগত সংকট, পরিবেশে গাছের সংখ্যা কমে যাবে, সাথে সাথে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হতে পারে। পাশাপাশি বায়ুতে অতি ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর পরিমাণ বেড়ে গেলে তা হবে দেশের জন্য বড়ই অমঙ্গল।

এসব সমস্যার সমাধান অতিদ্রুত করা না গেলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। তাই সবাইকে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সাথে সাথে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে হতাশ না হয়ে বরং উৎসাহিত হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাড়ি, কারখানা এবং গাড়ি থেকে ধোঁয়া নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। উৎসব অনুষ্ঠানে আতশবাজি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, পাশাপাশি এ বিষয়ে অন্যকেও উৎসাহিত করতে হবে। যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণকাজে পরিবেশের ক্ষতি না করে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশ ও বায়ুদূষণ হয় এমন যে কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একই সঙ্গে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় সামাজিক সতর্কতার তাগিদ প্রয়োজন। সবাইকে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সব আইন মেনে চলার কথা বলতে হবে। সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনও রয়েছে।

সনাতন পদ্ধতির ইটভাটাগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইটভাটায় রূপান্তর করা গেলে ৭০-৮০ শতাংশ দূষণ কমানো সম্ভব। তাই অবৈধ ইটের ভাটাকে উচ্ছেদকরণে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার ও দায়িত্বশীলদের কঠোর হতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বন্ধকরণে প্রশাসনকে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে। এর পাশাপাশি রাস্তা নিয়মিত পরিষ্কারকরণ, পানি ছিটানো, নির্মাণকাজ চলাকালে পানি ছিটানো এবং নির্মাণসামগ্রী আচ্ছাদন দ্বারা আবৃতকরণও প্রয়োজন। যারা নিয়মিত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে  বায়ুদূষণ করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং এ বিষয়ে এখনই আমাদের সতর্কতা অবলম্বনসহ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!