• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণে বছরে মারা যায় ৭০ লক্ষাধিক মানুষ


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৮, ২০১৮, ০৬:৫০ পিএম
বায়ুদূষণে বছরে মারা যায় ৭০ লক্ষাধিক মানুষ

ঢাকা : বায়ুদূষণকে তামাকের বিষক্রিয়ার চেয়েও ভয়াবহ আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। প্রতিবছর বিশ্বে বায়ুদূষণে ৭০ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি কমবেশি সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণায় বলা হচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষই প্রত্যক্ষভাবে বায়ুদূষণের কারণে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা।

ডব্লিউএইচও’র নির্বাহী প্রধান ড. তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইয়েসুসের মতে, বিশ্ব ক্রমেই তামাকের গ্যাস চেম্বারে পরিণত হচ্ছে। বায়ুর সঙ্গে তামাক পোড়া বাতাসের তেমন পার্থক্য নেই। ধনী-গরিব নির্বিশেষে কেউই এ দূষণ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। খুব নীরবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির দিকে যাচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা। অবিলম্বে সব এজেন্ডার বাইরে বায়ুদূষণ রোধে অধিকাংশ দেশকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও আহ্বান জানান তিনি।

অপর এক গবেষক ড. মারিয়া নেইরার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বে ৩০০ মিলিয়ন শিশু বর্তমানে বায়ুদূষণ ঝুঁকিতে আছে। শিশুদের মধ্যেও এখন ক্যানসার ও মস্তিষ্কজনিত রোগের আধিক্য দেখা দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, শিশুরা এমন সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যা প্রচলিত প্যাথলজিতে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র বায়ুদূষণের শিকার মায়ের জন্ম দেওয়া শিশুর ডিএনএ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- এমনটাও দাবি করা হচ্ছে। বিশ্বে ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের ১৪ শতাংশ শিশু অ্যাজমায় আক্রান্ত এই বায়ুদূষের ফলে।

বাতাসে ধোঁয়াশার উপস্থিতি নেই মানেই বায়ুর মান ভালো- এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। বায়ুদূষণকে বিজ্ঞানীরা দুই ধাপে ভাগ করেছেন। এক ধাপে আছে ঘরের বাইরের দূষণ, অন্য ধাপে ঘরের ভেতরের দূষণ। গৃহ অভ্যন্তরে ব্যবহূত কয়লা, কাঠ ও কেরোসিনের মতো জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসের গুণগত মান নষ্ট করছে। শুধু গৃহ অভ্যন্তরের দূষণে প্রতিবছর বিশ্বে ৪০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। আর এ মৃত্যুর ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো। এ অঞ্চলে যানবাহন এবং গ্যাস স্টোভ থেকে নির্গত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সালফার ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

গবেষকরা বলছেন, মাত্র ১০ মাইক্রন আয়তনের ক্ষুদ্র কণাও সহজে ফুসফুসের অভ্যন্তরে ঢুকতে পারে। স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ এমন অসংখ্য ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, যাদের আয়তন প্রায় আড়াই মাইক্রনের সমান। এই কণাগুলোর অন্তত ৬০টি একত্রিত হলেই মানুষের একটি চুলের সমান আয়তনের হয়ে যায়। আর আড়াই মাইক্রন আয়তনের একটি কণা খুব সহজেই ফুসফুস ভেদ করে মানুষের রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। ফলে মানুষ ফুসফুস ক্যানসার থেকে হূৎপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে নিয়মিত। অন্যদিকে বাতাসে থাকা ওজোন এবং নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসের সৃষ্টি এবং ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।

এশিয়াতে বায়ুদূষণের দিক থেকে চীনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে এসেছে ভারত। বলা হচ্ছে, বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশে পরিণত হয়েছে দেশটি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এই দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি, যানবাহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গৃহায়ন ও শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া ভারতের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমেই ক্যানসারের মতো রোগের মাত্রা বাড়ছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, ডব্লিউএইচও, আইজেএস

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!