• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের ঠান্ডা লড়াই


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৩, ২০১৯, ১২:১৫ পিএম
বিএনপির কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের ঠান্ডা লড়াই

ঢাকা : বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বনাম তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। কেন্দ্রের নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ তৃণমূল।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ও নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলন না হওয়া, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর প্রত্যাশা না মেটাতে পারা, সর্বোপরি বিএনপির ভবিষ্যত ‘কর্মপরিকল্পনা না’ থাকার অভিযোগ- এসব বিষয় নিয়েই ক্ষোভের শেষ নেই তৃণমূলের। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘বহিস্কার বহিস্কার খেলা’। গত একমাসে অর্ধশতাধিক তৃণমূলের নেতাকে বহিস্কার করা হয়েছে। এ নিয়েও ক্ষোভ চরম দানা বেঁধেছে। সংশ্লিষ্ট এধাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২৪ মার্চ রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বক্তব্য রাখার সময়ে তৃণমূল নেতাদের প্রশ্নবাণে জর্জারিত হন তিনি। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়- নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে বিএনপির না যাওয়ার কথা থাকলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর কেন বিএনপি নির্বাচনে গেলো? ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত যে সঠিক হয়নি সেটি হাতে কলমে প্রমান পাওয়া গেলো কি না? খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন আন্দোলন হচ্ছে না?

এ সময় বিএনপির মহাসচিব তৃণমূল নেতাদের মঞ্চে এসে বক্তব্য রাখতে বলেন। তিনি এই কথা জানান যে, এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার নির্দেশেই তিনি করছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মকাণ্ডের ওপর দারুণ ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মকাণ্ড পছন্দ করছেন না তারা। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা একদফা আন্দোলনে যেতে চাইলেও কেন্দ্র থেকে সেই ধরনের কর্মসূচি না আসায় কার্যত হতাশা প্রকাশ করেছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি মুলত আড়ালে চলে গেছে বলে মনে করছেন তারা।

অনেকে এও বলছেন, বিএনপি এখন চালাচ্ছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ২০ দলীয় জোট যেমন কার্যকারিতা হারিয়েছে তেমনি বিএনপিও স্বকীয়তা হারাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। তাদের মতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিএনপি সব সিদ্ধান্ত ভুল হচ্ছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়া সুলতান মুহাম্মদ মনসুরের উদাহরণও টানছেন কেউ কেউ। তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন, বিএনপি চালাচ্ছে কে?

উত্তরাঞ্চলের একটি জেলার দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য গড়ে কার্যত কোনো লাভ হয়নি। বরং আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমেছে। প্রায় ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা বিএনপির বিপক্ষে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বৃহৎ কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি এবং দেয়নি। এ নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ আছে। কারণ, নেত্রী (খালেদা জিয়া) মুক্তি না পেলে বিএনপির ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকেই যাবে। এই মুহূর্তে বিএনপির একমাত্র দাবি বলেন বা আন্দোলন বলেন যাই হওয়া উচিত সেটি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি।’

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘তৃণমূলের সেন্টিমেন্টকে আমি স্বাগত জানাই। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সবাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মানববন্ধন বা প্রতিবাদ সভার মতো কর্মসূচিকে আন্দোলন বলে না। অন্তত পাকিস্তানের সময় বা পরবর্তী সময়ে নেতাদের মুক্তির দাবিতে যেসব আন্দোলন হয়েছে তা রাজপথে অবরোধ ও ভাঙচুরের মাধ্যমে হয়েছে। কিন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আমরা আন্দোলনেই আছি। যদিও আমাদের আইনজীবী নেতা থেকে শুরু করে সবাই বিশ্বাস করে এই ধরনের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। কারণ এই সরকার সামরিক সরকারের চেয়েও বেশি ফ্যাসিবাদ। সুতরাং আগে এই সরকারকে হটাতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকার হঠানোর আন্দোলন খুব শিগগিরই আমরা রাজপথে শুরু করবো।’

এদিকে তৃণমূল-কেন্দ্রের এই বিপরীতমুখী অবস্থানে বাতাস দিয়েছে গণহারে বহিস্কারাদেশ। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে অর্ধশতাধিক নেতাকে বহিস্কার করা হয়েছে। অভিযোগ, তারা দলীয় স্বপদে থেকে কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে বিএনপির অফিস সূত্র বলছে, যেসব নেতা দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা ভোটে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বহিষ্কার করছে না বিএনপি। তারা বিজয়ী হলে কিংবা পরবর্তী সময়ে দলীয় স্বপদের জন্য আবেদন করে ক্ষমা চাইলে তাদের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে। আর যারা স্বপদে থেকেই ভোটে অংশ নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতারা বলছেন, এই বহিস্কার বহিস্কার খেলা একটি নাটক। এর সঙ্গে বিশেষ একটি উদ্দেশ্য আছে। অতীতেও এমন হয়েছে। বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়ার কথা বলে তারা সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেবেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ইউপি, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনেও অন্তত দুই শতাধিক মাঠ পর্যায়ের নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ৯০ ভাগের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন বর্জন করা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।  বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর আমরা বুঝে গেছি এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে দল থেকে পদত্যাগ করে যারা নির্বাচন করেছে তাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।’

এদিকে বিএনপির ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন তৃণমূল নেতারা। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দলের কি ধরনের চিন্তাভাবনা, তাও কিছুই জানে না তারা। এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের বার্তা দেওয়া হয়নি।

সেক্ষেত্রে তারা ধরেই নিয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।  এ নিয়ে দলের সিদ্ধান্তহীনতা দেখছেন তৃণমূলের এসব নেতা। তবে নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের স্বার্থে তারা কেউ উদ্ধৃত হতে রাজি হননি। তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মকাণ্ডে খুবই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, দলের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

বিএনপির নীতি নির্ধারকদের একজন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।  দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচন মানি না। নির্বাচন বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছি। কিন্তু সরকার সেসব বিষয়ে গা করছে না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!