• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির ‘জুলাই কর্মসূচি’ আ.লীগের নজরে


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৯, ২০১৯, ০৩:৩০ পিএম
বিএনপির ‘জুলাই কর্মসূচি’ আ.লীগের নজরে

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে দলটির আন্দোলনের ঘোষণা ও সম্ভাব্য কর্মসূচির দিকে নজর রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বিএনপির নেতৃত্বের ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের ঘোষণায় আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন না হলেও দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন।

সামনের মাস থেকে সরকারবিরোধী জোট কী কী কর্মসূচি ঘোষণা করে, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণও চলছে। তবে আন্দোলন করে সরকারকে চাপে ফেলে ২০ দলীয় জোট কিছু আদায় করতে পারবে না বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের  মধ্যে অধিকাংশই মনে করেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বের জোট কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সরকারবিরোধী শক্ত কোনো আন্দোলন কর্মসূচি পালনের দিকে আপাতত যেতে পারছে না।

দলটির চেয়ারপারসন কারাবন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে থাকা ও শীর্ষ নেতৃত্বে কোন্দলের কারণে জোরালো কোনো কর্মসূচি দলটি পালন করতে পারছে না বলে মনে করেন তারা। নতুন সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হতে চললেও শক্ত কোনো কর্মসূচি দলটি ঘোষণা করতে পারেনি সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতৃত্বে সমস্যার কারণে। ইতোমধ্যে কিছু কর্মসূচি পালন করলেও এসবের মধ্য দিয়ে বিরোধী পক্ষ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি।

তবে গণতান্ত্রিক যেকোনো কর্মসূচি পালনকে স্বাগত জানালেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, আন্দোলনের নামে নাশকতার চেষ্টা করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করবে, তা বারবার বলেই যাচ্ছে। এখনো তারা পুরনো কথাই বলছেন। দশ বছর ধরে তাদের আন্দোলনে নামার কথা শুনে আসছি। এখন কবে নামবে তারাই জানেন। সক্ষমতা থাকলে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনুক বিএনপি।’

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাতে অংশ নেবেন না। এটা অতীতেও আমরা দেখেছি। বিএনপি অতীতেও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সেগুলোতে দলটির নেতাকর্মীরা অংশ নেননি। জনগণও তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না।’

রাজনৈতিক সূত্রমতে, গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন দলের শীর্ষ নেতারা।

চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে জুলাইয়ে আন্দোলনে নামবে ২০ দলীয় জোট, এমন সিদ্ধান্তের কথা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জুলাইয়ে ২০ দলীয় জোট ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মসূচি পালন করবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। দলটির এ ঘোষণার পরই এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা বিএনপির আন্দোলনের সফলতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এখন পর্যন্ত তেমন জোরালো কোনো আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপি-প্রধানের মুক্তির দাবিতে আগামী মাসেও শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।

জুলাই মাসে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট আন্দোলনের নামে আগের মতো নাশকতা চালালে তা কঠোরভাবে প্রতিহতের হুশিয়ারিও দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তিনি বলেন, ‘জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করে আন্দোলন করলে সে আন্দোলনকে আমরা অবশ্যই অভিনন্দন জানাব। বিএনপির আন্দোলন যদি আগের মতো হয় জামায়াত-শিবির ও  জঙ্গিদের নিয়ে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, সে ক্ষেত্রে তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

সরকারের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে নতুন যাত্রা শুরুর কিছুদিন পরই কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে নমনীয় অবস্থান নেয় সরকার। বিএনপির প্রধান নেতার প্যারোলের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা।

এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক উপদেষ্টা। প্যারোলের বিষয়ে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়ায় এ বিষয়ে আগের নমনীয় অবস্থানে আর নেই আওয়ামী লীগ।

প্যারোলের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা যে নমনীয়তা দেখিয়েছেন এত দিন, সেখান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন তারা। খালেদার মুক্তির পথ বিএনপিই ‘রুদ্ধ’ করে রেখেছে বলেও অভিযোগ আওয়ামী লীগের। রাজনৈতিক সমঝোতায় প্যারোল আবেদনে মুক্তি না চাওয়ায় এখন তার মুক্তির বিষয়ে আদালতের মাধ্যম ছাড়া আর ‘কোনো পথ খোলা নেই’ বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীনরা।

সরকারদলীয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় অনেকটাই স্বস্তিতে আছে আওয়ামী লীগ। শপথ না নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকারকে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক চাপ ও সংকটে’ ফেলার কৌশল নেয় বিএনপি। সেই কৌশল থেকে দলটি সরে এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের টানা তৃতীয়বারের সরকারের পথচলায় এক ধরনের ‘রাজনৈতিক অস্বস্তি’ ছিল বিএনপির নেতৃত্বের ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম শপথ না নেওয়ায়।

এ ছাড়া দেশি ও বিদেশি সব চাপ দূরে ঠেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এখন অনেকটাই নির্ভার। দেশ ও বিদেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় স্বস্তিতেই আছে আওয়ামী লীগ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!