• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির নির্বাচনী মামলায় ক্ষমতাসীনরা বিব্রত নয়


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯, ০৩:২৭ পিএম
বিএনপির নির্বাচনী মামলায় ক্ষমতাসীনরা বিব্রত নয়

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে উচ্চ আদালতে দায়ের করা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মামলা আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। মামলায় ‘ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ’ আনা হলেও এসব বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল বিব্রত নয়। মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে প্রধান প্রতিপক্ষ আপাতত কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পারবে বলে মনে করেন না আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনের প্রায় দেড় মাস পর কোন উদ্দেশ্যে এত মামলা দায়ের করেছে ঐক্যফ্রন্ট, সেসব দিকে নজর রাখছেন সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, রাজনৈতিক কোনো সুবিধা আদায় করতে না পারলেও আন্তর্জাতিক মহলে একাদশ সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তুলে ধরতে মামলাগুলোকে কাজে লাগাতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। ওই নির্বাচন নিয়ে সরকারবিরোধীদের ইতোমধ্যে বিদেশিদের কাছে তোলা অভিযোগুলো খুব বেশি জোরালো হয়নি। বন্ধুপ্রতিম কয়েকটি রাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অভিযোগগুলো তদন্তের আহ্বান জানালেও তা জোরালো নয়।

নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর আন্তর্জাতিক মহলে যে চাপ তৈরি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তা কেটে গেছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। দেশি ও বিদেশি সব চাপ দূরে ঠেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এখন অনেকটাই নির্ভার। ফলে দেশ ও বিদেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় স্বস্তিতেই আছে ক্ষমতাসীন দলটি। এ পরিস্থিতিতে মামলা দায়ের করে আইনি বা বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট কী রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে চায়, সেদিকে সতর্ক নজর রাখছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রমতে, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট শুরু থেকেই একাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়- বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ দেশ ও বিদেশে তুলে ধরবে। আন্দোলন ও নির্বাচনের শোচনীয় ব্যর্থতা ঢাকতেই ঐক্যফ্রন্ট অবান্তর অভিযোগ এনে মামলা করেছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করে বক্তব্য দেবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ঢাকার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় ওই সভায় নির্বাচনী মামলার পর দলের নেতাদের করণীয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

১৪-দলীয় জোট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র ১৪ দলের নেতারাও ঐক্যফ্রন্টের মামলার বিরুদ্ধে দলীয় বক্তব্য তুলে ধরবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে- এসব লজ্জা ঢাকতেই ঐক্যফ্রন্ট মামলার আশ্রয় নিচ্ছে বলে ১৪ দলের নেতারা জনগণের কাছে তুলে ধরবেন। তবে এ বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত জোটের আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও শিগগিরই জোট বৈঠকে বসছে বলে সূত্র উল্লেখ করে।

আওয়ামী লীগ মনে করে, নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে যেকোনো রাজনৈতিক দলের বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীও মামলা দায়ের করতে পারেন। এসব মামলা দেখার দায়িত্ব বর্তায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর। সেখানে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব কোনো দলের নয়। তাছাড়া দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিএনপি নির্বাচনে অনিয়মের যে অভিযোগ করছে, সেগুলো তদন্ত করে দেখতে পারে। বিচার বিভাগীয় যে তদন্ত দাবি করেছে ঐক্যফ্রন্ট, বিচার বিভাগ চাইলে তদন্ত করতে পারে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারেরও কোনো মাথাব্যথা নেই।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে উচ্চ আদালতে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মামলার বিষয়ে সরকারি দল বিব্রত নয়। মামলার বিষয়টি ইসি দেখবে। মামলার বিষয়টি আমলে নেওয়ার কিছু নেই। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার ইসির। ইসির সিদ্ধান্তের পর ট্রাইব্যুনালে যদি কেউ মামলা করেন, এ বিষয়ের দায় বর্তায় ইসির ওপর। ইসি এখন আদালতে গিয়ে মোকাবেলা করবে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।’

১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র, সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির নির্বাচনী মামলা দায়েরের কঠোর সমালোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করছে।’ রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে নাসিম ১৪ দলের ঐক্য অটুট আছে বলেও জানান।

তথ্যমতে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ধানের শীষ প্রতীকে (বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক) অংশ নেওয়া ঐক্যফ্রন্টের ৭৪ প্রার্থী উচ্চ আদালতে নির্বাচনী মামলার আবেদন করেছেন। আবেদনে তারা ওই নির্বাচন বাতিল চেয়েছেন। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থীরা নির্বাচনী মামলা করেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে ভরাডুবির পর ফল প্রত্যাখ্যান করে ফ্রন্ট। পরে ৩০০ আসনে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার ঘোষণা দেয় ফ্রন্ট। পরাজিত প্রার্থীদের আগ্রহ না থাকায় ওই অবস্থান থেকে সরে আসে ঐক্যফ্রন্ট।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় ৫০ জেলার নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্স করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মামলা করার। মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে সুবিচার না পেলেও নির্বাচন ইস্যুতে জনগণের কাছে দলের অবস্থান তুলে ধরতে চায় দলটি। এছাড়া মামলা দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তুলে ধরতেও কাজে লাগাতে চায় দলটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!