• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির নেতাদের যে নির্দেশনা দিলেন তারেক রহমান


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৪, ২০১৯, ০২:৪০ পিএম
বিএনপির নেতাদের যে নির্দেশনা দিলেন তারেক রহমান

ঢাকা : আড়াই মাস হয়ে গেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বানের পর বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রথমবারের মতো স্কাইপিতে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বুধবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকটি হয়। রাত ৭টায় বৈঠকটি শুরু হয়। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলের সাংগঠনিক অবস্থার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন।

বৈঠকে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য মনোযোগসহ শুনেছেন। পরে তিনি নিজের মত দিয়েছেন। তিনি সংকটময় মুহূর্তে নেতাদের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা নিতে তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে না আসা, তার মুক্তিতে আইনি প্রক্রিয়া, সদ্য সমাপ্ত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবি, উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে করণীয়, দল পুনগর্ঠন, অঙ্গ-গঠনের কমিটি গঠন, ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এ ছাড়া ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিএনপি গাঁটছড়ার লাভ-ক্ষতির নিয়েও আলোচনা হয়। তারেক রহমান এসব আলোচনা মন দিয়ে শোনেন। শেষ পর্যায়ে তিনি সুচিন্তিত মত দেন।

বৈঠক সূত্র থেকে জানা গেছে, বুধবারের বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট থাকা না থাকা। পাশাপাশি জামায়াতকে বিএনপি জোটে রাখা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে এই দুটি বিষয়ে তারেক রহমান নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন নিজের কোনো মত দেননি।

নেতাদের বক্তব্যের একপর্যায়ে তারেক রহমান বক্তব্য রাখেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলাপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গেও নিজেদের সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

তারেক রহমানের উপস্থিতিতে (স্কাইপিতে) বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মত দেন যে, বিএনপির রাজনীতি এখন অনেকটাই জোটকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বের হতে হবে। এ জন্য নিজেদের মেধা, শ্রম ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সংগঠন শক্তিশালী করার বিষয়ে তারা একমত পোষণ করেছেন।

সূত্র থেকে আরো জানা গেছে, বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ না করে তার সমালোচনা করে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না কি ভুল ছিল, তা ইতিহাস একদিন তুলে ধরবে।

তবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন এ আশায় নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা ও বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। তখন ওই নেতাকেই তাদের শীর্ষ নেতা হিসেবে মেনে নেয়া উচিত ছিল কিনা এমন প্রশ্ন তুলেন তিনি।

বিএনপি ওই নেতার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে গিয়েছিল, এমন মত দিয়ে তিনি আরো জানিয়েছেন, বিএনপির নেতাদের বাইরে তার (ঐক্যফ্রন্টের ওই নেতা) সিদ্ধান্তে নির্বাচনে যাওয়া হয়েছিল।

বিএনপিকে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, এখন নির্বাচন শেষ। এ নির্বাচনে যা অর্জন হওয়ার তা হয়েছে। তাই এবার এসব ঐক্যফ্রন্ট রাজনীতিকে বন্ধ করে নিজেদের সমতা বাড়াতে হবে। দলকে গোছাতে হবে। সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

দলের আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, বিএনপির রাজনীতি এখন ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে গেছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের রাজনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যদিও তাদের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তারেক রহমান কিছু বলেননি।

সূত্রে জানা যায়, ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার বিষয়টি আলোচনায় তোলেন একজন সদস্য। এই প্রসঙ্গ উঠলে অন্যরাও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার সমালোচনা করেন। তার পর সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন কতটুকু সঠিক ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এ বিষয়েও তারেক রহমান কিছু বলেননি।

আরেকজন স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জামায়াতকে জোটে রাখার বিরোধিতা বলেন, জামায়াত নানা কারণে বিএনপির জন্য দায় হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে যে বাস্তবতায় জামায়াতের সঙ্গে জোট করা হয়েছিল সেটি আর এখন নেই। এখন জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। আন্দোলনেও তাদের পাশে পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় তাদের জোটে রেখে লাভ নেই বলে মত দেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জামায়াত প্রসঙ্গে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছেন। জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত বিতর্কের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রচার করা হয়েছে।

একটি দেশের নাম উল্লেখ করে ওই নেতা বলেন, ওই দেশটি নানা অজুহাতে বিএনপিকে নসিহত করলেও তারা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কখনও কিছু করবে না। তাই জামায়াত বিষয়ে সরকার কোনো কিছু না করলে বিএনপির পক্ষ থেকেও কিছু করা ঠিক হবে না।

নেতাদের বক্তব্যের একপর্যায়ে তারেক রহমান বক্তব্য রাখেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলাপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গেও নিজেদের সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

সূত্র থেকে জানায়, বৈঠকে আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে নিয়মিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এখন আর তা হচ্ছে না। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। তার ওই বক্তব্যের পর সপ্তাহে অন্তত একবার বৈঠক করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে আরো জানা গেছে, দলের স্থায়ী কমিটির দু'জন নেতা বৈঠকে বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনেও নামতে হবে। তবে এর আগে দলের বিভিন্ন জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোকে পুনর্গঠন করা জরুরি।

এ সময় বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!