• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএসএমএমইউ কনভেনশন সেন্টারের ইজারা পেতে দৌড়ঝাপ!


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৮:২১ পিএম
বিএসএমএমইউ কনভেনশন সেন্টারের ইজারা পেতে দৌড়ঝাপ!

ঢাকা: এখনো সরকারী-বেসরকারী কাজে নির্বিঘ্নে দরপত্র জমা দিচ্ছে বর্তমান সরকারের কালো তালিকাভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হাত করে বড় বড় কাজ বাগিয়েও নিচ্ছে। প্রয়োজনে তারা রাজনৈতিক খোলস পরিবর্তন করছে। সরকারের নাম ভাঙিয়ে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আগ্রাবাদ হোটেল লিমিটেড। বিস্ময়করভাবে বর্তমান সরকারের কালো তালিকাভুক্ত আগ্রাবাদ হোটেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টারের দরপত্রে অংশ নিয়েছে। 

জানা গেছে, বিএনপি আমলে আগ্রাবাদ হোটেল নামে-বেনামে নানা বিধিবর্হিভুত অনেক কাজ করেছে। বিএনপি সরকার আমলে তারেক জিয়ার নির্দেশে ২০০৫ সালে আগ্রাবাদ হোটেলকে বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারটি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারন্সে সেন্টার) ১০ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছিল। এই কাজের সঙ্গে আরো যুক্ত ছিলেন ওই সময়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। কনফারেন্স সেন্টারটি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় তারেক-আব্বাস গংরা টেন্ডার আহ্বান এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও নানা অপকৌশল অবলম্বন করেছে। 

ওই সময় আগ্রাবাদের সঙ্গে আরো যুক্ত হয়েছিল বিএনপির সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের ভাই মুজিবুর রহমান। নেপথ্যের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির করা ওই অবৈধ চুক্তি বাতিল করে। বর্তমান সরকারের কালো তালিকাভুক্ত হয় আগ্রাবাদ হোটেল। প্রশ্ন উঠছে সেই কালো তালিকার আগ্রাবাদ হোটেল লিমিটেড কিভাবে জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টারের দরপত্রে অংশ নিয়েছে! কারা আগ্রাবাদকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে। 

এদিকে, বিএএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, নবনির্মিত বিএসএমএমইউ মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টারটি ইরাজা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল সেপ্টেম্বর মাসে। টেন্ডার কমিটি কাছ থেকে মোট ১২টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে দরপত্র ক্রয় করেছিল। আগ্রাবাদ হোটেল লিমিটেড যৌথভাবে কনফারেন্সর অ্যান্ড এক্সিভিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড ও নর্থটিচ সিস্টেমসকে নিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছে। যা টেন্ডার কমিটি চূড়ান্ত তালিকায় রেখে দিয়েছে। তবে এই টেন্ডার নিয়ে কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে চায় না।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার’ইরাজা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ ৯টেন্ডার ইনভাইটেশন নং বিএসএমএমইউ /২০১৯/১০২৩৪, তারিখ ২৩/০৯/২০১৯, প্যাকেজ নং বিএসএমএমইউ/২০১৯/১৬৭)। মোট ১২টি প্রতিষ্ঠান সিডিউল ক্রয় করে। 

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পথ ফাইন্ডার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, এক্সক্লুসিভ কমিনিকেশনস, এনআর ট্রেডিং, কনফারেন্সর অ্যান্ড এক্সিভিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড, নর্দানগোল্ড ফুডস লিমিটেড, আমন্ত্রণ, ইনোভেটিভ এন্টারটেইমেন্ট লিমিটেড, মোর্সাস পেয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্স, জিরকন লিমিটেড, বন্ধন ক্যাটারিং ও হাক্কা ঢাকা এককভাবে দরপত্র ক্রয় করে। আর যৌথভাবে আগ্রাবাদ হোটেল লিমিটেড, কনফারেন্সর অ্যান্ড এক্সিভিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড এবং নর্থটিচ সিস্টেমসও এই টেন্ডারে অংশ নিয়েছে। ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই দিনই দরপত্র খোলা হয়েছে।

বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এই প্রতিষ্ঠান আমাদের জাতীয় গৌরবের অংশ। এখানে চিকিৎসার মান অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়কেও অতিক্রম করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে গভীরভারে জড়িয়ে দুঃখী মানুষের চিকিৎসাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতার শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টারটিও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। কনভেনশন সেন্টারটি এখনই পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী।

বিএসএমএমইউ মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টারের টেন্ডারে আগ্রাবাদ হোটেলের অংশগ্রহণ নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারের ইজারা নিয়ে তারা ঠিক মতো চালাতে পারেনি। বার্ষিক মাত্র ৩ কোটি টাকা চুক্তিতে ইজারা নিয়েও সরকারের টাকা পরিশোধে আগ্রবাদ তালবাহানা করতো। সেই সময়ে কনফারন্সে সেন্টারটি একটি গার্বেজে পরিণত হয়েছিল। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে মতে, রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ যে বরাদ্দ রাখার কথা ছিল আগ্রাবাদের, তারা তার ২০ শতাংশ খরচ করেনি। ফলে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ারর আগেই তা বাতিল করা হয়েছে। আগ্রাবাদের কারণে ২০০৫-২০০৮ সাল; এই ৪ আর্থিক বছরে সরকারের কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ফলে প্রথমদফা তাদের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু নানা তালবাহানা করে তারা ২০১১ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টার জিম্মি করে রেখেছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আগ্রাবাদকে অবৈধ ঘোষণা করে লালফিতা বেধে উচ্ছেদ করে। 

উল্লেখ্য, পরীক্ষামূলকভাবে সরকার নিজ দায়িত্বে এক বছর চালিয়ে এই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টার থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় করেছে।

এদিকে, আগ্রাবাদ হোটেল নিয়েও রাজারে নানা কথা রয়েছে। এই হোটেল থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল টাকা বিদেশে পাচার হয়। প্রকাশ্যে পেশাদার কলগার্লদের আনাগোনার সঙ্গে মদ-জুয়ার ঘটনায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বোডাররা বিব্রত হন অহরহ। অতীতে বিভিন্ন সময়ে এই হোটেলে তল্লাশীকালে অনেকেই এমন ন্যক্করজনক ঘটনার সামনে পড়েছেন। জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে আগ্রাবাদ হোটেলের সঙ্গে বিএনপির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

সরকারী সূত্র মতে, হোটেল আগ্রাবাদের কাছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণ বকেয়া রয়েছে। আগ্রাবাদ এবং তার সহপ্রতিষ্ঠান বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লগ্নি করেছে। ঠিকঠাক মতো ঋণও পরিশোধ করছে না। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, বিএসএমএমইউ মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টারটি কারা পাচ্ছে তা চলতি সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে। সেই তালিকায় রয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠান চালাতে শতভাগ ব্যর্থ আগ্রাবাদ হোটেলও। সরকারের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান আগ্রাবাদ বিএসএমএমইউ মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টারের ইজারায় কিভাবে এখনো টিকে আছে, তা খতিয়ে দেখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সচেতন জনগণ।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!