• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার অঙ্গনে নিরাপত্তা ও নিরাপত্তাহীনতা


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৬, ২০১৬, ১১:৪৭ এএম
বিচার অঙ্গনে নিরাপত্তা ও নিরাপত্তাহীনতা

বিচারকের খাস কামরা থেকে পালিয়েছে ধর্ষণ মামলার আসামি। গত রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগে আসামি আনা-নেয়ার সময় প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই, আদালতের এজলাস থেকে আসামি পালানোর দৃষ্টান্ত থাকলেও বিচারকের খাস কামরা থেকে কোনো আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এই  প্রথম। এই ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, আদালতের নিরাপত্তা, সর্বোপরি সার্বিক জননিরাপত্তা নিয়েই জনমনে সংশয় ও উদ্বেগ তৈরি করছে। রাজধানীর বাড্ডায় গারো তরুণী ধর্ষণের প্রধান আসামি রাফসান হোসেন রুবেলকে গত শুক্রবার র‌্যাব-১ সদস্যরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। শনিবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক একরাম হোসেন। আসামি স্বীকারোক্তি দিতে চাইলে সিএমএম আদালতের ৮ম তলায় বিচারকের খাসকামরায় নেয়া হয়। বিধি অনুযায়ী, কোনো আসামি স্বীকারোক্তি দিতে চাইলে তাকে জবানবন্দি দেয়ার জন্য ভাবনা-চিন্তা করতে আইন অনুযায়ী তিন ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। এ সময় আসামিকে বিচারকের খাস কামরায় বসিয়ে রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট বিচারক মামলার বিচার কাজে এজলাসে উঠলে এর এক ফাঁকে খাস কামরা থেকে আসামি পালিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, পলাতক রুবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতির  প্রস্তুতি, মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাসী ঘটনায় বাড্ডা থানায় আটটি এবং রামপুরা থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা রয়েছে। ধর্ষণ মামলায় তাকে আটক করা হয়েছিল। এ রকম একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বিচারকের খাস কামরা থেকে কী করে পালায়? তার হাতে কি হাতকড়া বা কোমরে রশিবাঁধা ছিল না? স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য বিচারকের খাস কামরায় অপেক্ষমাণ আসামির সঙ্গে ওই সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কমপক্ষে দুজন পুলিশ সদস্য পাহারায় থাকার কথা। এ পরিস্থিতিতে কোনো আসামির পালিয়ে যাওয়া একেবারে অসম্ভব। অথচ এ রকম অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটেছে। পাহারারত পুলিশ সদস্যরা কী করছিল? নাকি তাদের সহায়তায়ই ঘটেছে ঘটনা? এসবের অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।

সাম্প্রতিককালে সারা দেশে এ রকম বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত জানুয়ারি মাসে অটোরিকশায় করে আসামিকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের তিন সদস্য ঘুমিয়ে পড়ায় হাতকড়া নিয়ে পালিয়েছে আসামি। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ডাকাতি মামলার আসামিকে নিয়ে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। গত ২৫ অক্টোবর লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা থানার ভেতর থেকে হাতকড়াসহ মিলন মিয়া (২৫) নামে এক আসামি পালিয়ে যায়। থানার হাজত থেকে  প্রস্রাব করার অজুহাতে হাতকড়াসহ প্রাচীর টপকিয়ে যায় মিলন। গত ২৩ আগস্ট সিলেটের বিশ্বনাথ থানা থেকে রাতে হাতকড়াসহ ডাকাতি মামলার রিমান্ডের আসামি রুহুল আমীন ওরফে আল-আমীন পালিয়ে যায়। রিমান্ড চলাকালীন জিজ্ঞাসাবাদকালে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে কোনো এক সময়ে থানার এএসআই কক্ষ থেকে আসামি পালিয়ে যায়। এসব ঘটনা কি কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গাফলতি এবং থানা-হাজত এবং আদালতপাড়ায় নিরাপত্তার বেহালদশাই প্রমাণ করে না? এসব নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে ভাবতে হবে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পলাতক রুবেলকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবারের ঘটনায় উপপরিদর্শক ইমরান এবং কনস্টেবল দীপক চন্দ্র রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নিয়ম রক্ষার ব্যবস্থা নয়, সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের কঠোর শাস্তিই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হতে পারে। 

আমরা আশা করব, পুলিশ সদস্যদের আরো কর্তব্যনিষ্ঠ করা এবং থানা-হাজত ও আদালত অঙ্গন সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা অবিলম্বে নিয়ে দেশবাসীকে উদ্বেগমুক্ত করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!