• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার চাওয়ায় কলেজছাত্রীকে দেহব্যবসায়ী বানালেন চেয়ারম্যান


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০১:৪৫ পিএম
বিচার চাওয়ায় কলেজছাত্রীকে দেহব্যবসায়ী বানালেন চেয়ারম্যান

ঢাকা : প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে গ্রামের বখাটে জুয়েল রানা।  এ ঘটনায় টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধর্ষণের বিচার চাওয়ায় প্রভাবশালী মহলের চাপে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এক কলেজছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।  ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান তার পরিষদের প্যাডে কলেজ ছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী ও তার নিরহ কৃষক বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে গেল পাঁচ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এদিকে এ ঘটনার পর কলেজছাত্রী লোকলজ্জার ভয়ে ১২ দিন ধরে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। বন্ধ হয়ে গেছে তার কলেজে যাওয়া। ধর্ষণের সঠিক বিচার পাবে কিনা সে বিষয় নিয়েও উদ্বিগ্ন পরিবারটি।

জানা যায়, উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামের কৃষকের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে (১৭) প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে জুয়েল রানা। বিয়ের প্রস্তাবও দেয় কিন্তু ছেলের স্বভাব চরিত্র ভালো না থাকার কারণে মেয়ের বাবা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে জুয়েল রানা।  

জুয়েল রানা ২০১৮ সকালে ১২ জুলাই সন্ধ্যার দিকে  উপজেলার ধুবরিয়া  বাচ্চু মিয়ার  ব্রিজের সামনে থেকে বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে ছাত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর জুয়েল রানা কলেজছাত্রীকে তার আত্মীয় বাড়িতে তিনদিন আটক রাখে।  ওই ছাত্রী কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে তার বাবা-মা কে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে ধুবড়িয়া গ্রামের মাতব্বদের ধর্ষণের বিষয়টি অবগত করেন।

ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী মাতব্বররা বিভিন্ন  তালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করে আসেন। ফলে ওই  ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে  ২০১৮ সালের  এক নভেম্বর টাঙ্গাইল আদালতে পাঁচজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আসামিরা হলেন সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে জুয়েল রানা (২২), ধুবড়িয়া গ্রামের হায়েদ আলীর ছেলে মো. শিপন (২৬), মো. রিপন (২৩), উফাজ (৪২) ও একই গ্রামের  বাবুল মিয়ার ছেলে মো. রিয়াজ মিয়া (২১)।

পরে মামলা তুলে নেয়ার জন্য তারা বাদীকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। মামলার তদন্ত রিপোর্ট সি আই ডিতে দাখিলের পর আসামিরা আরও বেশি হুমকি ধামকি দেয়। আসামিরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। আসামিরা ধুবড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে ধর্ষণের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে উল্টা  ওই ভিকটিমকে দেহ ব্যবসায়ী ও তার বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে আসামিদের পক্ষে একটি প্রতিবেদন দেয়।

এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রীর বাবা বলেন, চেয়ারম্যান আমার পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে গ্রাম থেকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি।

এ ব্যাপারে ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, আমি চেয়ারম্যান- আমি দিতে পারি- তাই দিয়েছি। ছাত্রীর বিরুদ্ধে মাদক ও দেহ ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনও মামলা আছে কিনা আমি জানি না। এলাকার লোকজন বলেছে তাই আমি এ প্রতিবেদন দিয়েছি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এস আকবর খান বলেন, আদালত কাউকে দোষী না করা পর্যন্ত কোনও ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার এখতিয়ার কারও নেই। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ বলেন, চেয়ারম্যান কলেজছাত্রীর বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সঠিক নয়। এ পরিবারের নামে মাদক ও দেহ ব্যবসার বিষয়ে এলাকায় ও থানায় কোনও অভিযোগ নেই। এ মামলার আসামিরা মেয়ের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। আসামিরা পলাতক আছে। মেয়েটির পরিবারের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!