• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
আইন সংশোধনের উদ্যোগ

বিচারের কাঠগড়ায় আসবে রাজাকার


আদালত প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯, ০২:৪৪ পিএম
বিচারের কাঠগড়ায় আসবে রাজাকার

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ’৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষস্থানীয় রাজাকারদের বিচার করেছে। সেই বিচার প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এখন রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, প্রথম দিকে তালিকাটি সঠিক ও নির্ভুলভাবে করতে চায় সরকার, যাতে কোনো ধরনের সমালোচনার সৃষ্টি না হয় বা ভুল থেকে যায়। তালিকাটি চূড়ান্ত করতে পারলেই পর্যায়ক্রমে কীভাবে এসব রাজাকারকে বিচারের আওতায় আনা যায়, সেটি বিবেচনায় রয়েছে।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এ আরিফ-উর-রহমান তার দপ্তরে আলাপকালে বলেন, দেশব্যাপী রাজাকারদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মাঠ প্রশাসনকে। এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনাটি পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তালিকাটি চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি নিয়ে আলোচনা হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে উপস্থাপন করা হবে।

এরপর তালিকাভুক্ত রাজাকারদের আইনের আওতায় নেওয়ার চিন্তা সরকার করছে কি-না এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, এখনই বলা যাবে না।

তবে সরকারের সূত্র বলছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো এসব রাজাকারকেও বিচারের আওতায় আনার চিন্তা রয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে। এটি সরকার আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজনে সংসদে উপস্থাপন করে বিচারের পক্ষে জনমত তৈরি করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজাকারদের তালিকা তৈরির কাজটি কঠিন। তাছাড়া একজনও যাতে ভুলভাবে এ তালিকায় না আসে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চায় না সরকার। আমরা শুধু বলি রাজাকার কিন্তু কে ছিল সেই রাজাকার? ইতিহাসের স্বার্থে সেটা জাতির জানা দরকার। এ কাজটি আগে সফল করতে হবে।

জানা গেছে, সরকার রাজাকারদের পরিবারের বিষয়েও প্রতিবেদন তৈরি করবে। তাদের সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা কে কোথায় কীভাবে আছে, সেটি অনুসন্ধানে এবার বেরিয়ে আসবে।

সরকার মনে করছে, রাজাকারদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা দেশের জন্য হুমকি। তাই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এসব পরিবারের সদস্যরা যদি সরকারের কোনো উচ্চ পর্যায়ে থাকে, সেটিও চিহ্নিত করা হবে। কারণ এসব ব্যক্তি ঘাপটি মেরে থেকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।

তবে রাজাকারদের কোন আইনে কীভাবে বিচারের মুখোমুখি করা হবে তাও চূড়ান্ত করতে হবে সরকারকে। এর জন্য প্রয়োজনে আইন করা হতে পারে।  

জানা যায়, একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠনে যেসব বাঙালি বেতন নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল, তাদের তালিকা সংগ্রহ করছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রক্ষিতে এ কাজ শুরু হয়েছে।

গত ২৬ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা সংগ্রহ করে তা রক্ষণাবেক্ষণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আধা-সরকারি (ডিও) চিঠি পাঠানো হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহের জন্য সব জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, জেলায় জেলায় রেকর্ড রুমে রাজাকারদের তালিকা আছে। সেখান থেকে সংগ্রহ করে তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কয়েকটি রাজনৈতিক দল পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল।

এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী। তখন যুদ্ধরত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করতে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল। আনসার বাহিনীকে এই বাহিনীতে একীভূত করা হয়েছিল।

প্রথমে এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত শান্তি কমিটির অধীনে থাকলেও পরে একে আধা-সামরিক বাহিনীর স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তান সরকার।

সূত্র বলছে, শুধু বিচার নয়- বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকারদের নাম, পরিচয় এবং ভূমিকা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে চায় সরকার। এতে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রতি নতুন প্রজন্মের সমর্থন বাড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৪৮ বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত বছর পর কীভাবে এই তালিকা করা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই সাবধানে হাঁটছে সরকার।

রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা ভাতা নিয়েছেন, যাদের নামে অস্ত্র এসেছে, তাদের নাম-পরিচয় এবং ভূমিকাসহ রেকর্ড বা তালিকা ১৯৭১ সালেই জেলাসহ স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যের ভিত্তিতে নতুন করে নাম সংযোজন হতে পারে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যারা সহযোগী ছিল, তাদের পরিচয়পত্রও দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। তবে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে রাজাকারদের তালিকা অনেকেই নষ্ট করে ফেলেছেন।

স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা করার ক্ষেত্রে আইনি সায় নিতে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করে তাতে বিষয়টি যুক্ত করার জন্য এর খসড়া তৈরি করছে। প্রায় এক দশক আগে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর রাজাকারের তালিকা তৈরির দাবি সামনে আসতে থাকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!