• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কমুক্ত নির্বাচন করাই আ.লীগের বড় চ্যালেঞ্জ


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮, ১২:৪০ পিএম
বিতর্কমুক্ত নির্বাচন করাই আ.লীগের বড় চ্যালেঞ্জ

ঢাকা : চলতি বছরের শেষ দিকে এসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিদায়ী বছরের হিসাব-নিকাশ ও নতুন খ্রিস্টীয় বছরের আগমনের আনন্দ-উচ্ছ্বাস এখনো দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চাপা পড়ে আছে ভোটের উত্তাপে।

দলটির নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর এবারই প্রথম সব দলের অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। সব রাজনৈতিক দলের অংশ নেওয়া নিশ্চিত ও বিদেশিদের মধ্যস্থতা ছাড়া সংলাপ আয়োজনের পর্বে দলটির সফলতা থাকলেও এসবের চূড়ান্ত মূল্যায়ন হবে যথাসম্ভব কম বিতর্কের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা আওয়ামী লীগের সামনে। তেমনি নির্বাচনকে দেশ ও বিদেশে তুলনামূলক বিতর্কমুক্ত রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও দলটি। এ নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে বিভিন্ন রাষ্ট্র। নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ও মতবিরোধ সঙ্গে নিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজকের পর কাল রোববারই ভোট। সব দল অংশ নেওয়ায় ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এবারো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশের ভেতর ও বাইরে প্রশংসিত হবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। বিএনপিসহ বেশ কিছু দলের বর্জনের ফলে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন ছিল অনেকটা ‘একতরফা’। ওই বছর দলীয় সরকারের অধীনে দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচন হয়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েক নেতা জানান, যথাসম্ভব বিতর্কমুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যেই দেশজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু নির্বাচনই দলের বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চলাকালে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা বাড়ায় উত্তাপ। তাই নির্বাচন নিয়ে জনমনে কিছু উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা থেকেই যাচ্ছে।

তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দাবি, নিশ্চিত পরাজয় জেনেই সারা দেশে সন্ত্রাস করছে বিএনপি-জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্ট। ভোট উৎসবকে বিনষ্ট করার যড়ষন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে তারা। তাদের নাশকতায় আওয়ামী লীগের কর্মীরাও আহত ও নিহত হয়েছেন প্রচারণার মাঠে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে দলীয় কর্মীদের কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভোটের দিন বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস ও সহিংসতা করতে পারে বলেও দলীয় প্রধান সতর্ক করে দেন।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) বলেন, ‘জয়ী হতে পারবে না জেনেই সারা দেশে সন্ত্রাস করছে বিএনপি-জামায়াত। তারা নির্বাচনের দিন গেরিলা কায়দায় কেন্দ্র দখল ও নাশকতার নীল নকশা করেছে।’ নির্বাচনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দলীয় কোন্দল নিরসন করে বেশিরভাগ সংসদীয় আসনে একক প্রার্থী নিশ্চিত, দলের জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই এবং বিএনপিসহ সব দলকে নির্বাচনমুখী করার ক্ষেত্রে সাফল্যের মতো অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সফল হবে বলেও দলটির শীর্ষ নেতাদের দাবি।

তারা জানান, নির্বাচনের সময় যেকোনো সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। টানা দশ বছর সরকারের নানা উন্নয়নের কারণে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই জয় হবে বলে তারা দৃঢ় আশাবাদী। তৃণমূলের সমর্থন এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে দেশি ও বিদেশি জনমত জরিপের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জরিপও বলছে।

এখন চলছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দেশের ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য অন্তত তিন লাখ কর্মীকে প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রের প্রতি ভোটকক্ষে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে একজন করে এজেন্ট থাকবেন। জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনের সব কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ লক্ষ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কার্যালয়ে আটটি বিভাগের জন্য টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বর স্থাপন করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকাল ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।

এইচ টি ইমাম বলেন, ‘প্রতিটি বুথে পুরুষ ও নারী পোলিং এজেন্ট থাকবে। ভোটকেন্দ্র, আশপাশের এলাকা ও সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও সক্রিয়।’

অন্যদিকে বছরের শুরুতেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন ছিল, এ বছর অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট অংশ নেবে কী না। জাতীয় সংসদের বাইরে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে নাকি গত সংসদ নির্বাচনের মতো এবারো বর্জন করবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে সমঝোতার লক্ষ্যে আদৌ সংলাপ হবে কি-না আর অতীতের মতো সংলাপ ও সমঝোতার মধ্যস্থতায় বিদেশিদের হস্তক্ষেপ লাগবে কি-না। বছরের শেষ দিকে এসে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ছাড়া প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করতে সক্ষম হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে চলতি বছরের ১ থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান করলেও সাড়া দেননি তখনকার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি সমালোচনার কবলে পড়ে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ প্রশ্নে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিলে জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করতে চায়। ওই সংস্থার মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো এ দেশে এসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করলেও সফল হননি।

এ বছর সংলাপের আহ্বানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সাড়া দেওয়ায় সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী ও বিদেশিরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখেন। এতে আওয়ামী লীগই রাজনৈতিকভাবে লাভবান বলে মনে করেন তারা।

এবারের সংলাপের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে পারায় রাজনীতিতে নতুন রেকর্ড আওয়ামী লীগের ঘরেই আছে। বিএনপি দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়াই দলের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

আশির দশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরার পর এবারই প্রথম দলটি খালেদাকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

এবারের নির্বাচনের এটাও আরেকটা বিশেষত্ব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত বড় কোনো বিতর্ক হলে সেসবও আওয়ামী লীগের পক্ষে এড়ানো কঠিন হবে বলে বিশ্লেষকদের মত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!