• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে ভালো নেই নারী শ্রমিকরা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৯, ২০১৯, ১১:৪৮ এএম
বিদেশে ভালো নেই নারী শ্রমিকরা

ঢাকা : ভাগ্য বদলানোর আশায় বিদেশে পাড়ি দেওয়া নারী শ্রমিকরা ভালো নেই। শ্রম বিকাতে গিয়ে দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব। আবার অনেক নারী শ্রমিকের জীবনে নেমে এসছে দুর্বিষহ নরক-যন্ত্রণা। সম্মান-সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে অনেকে মুখ খুলছেন না, কোনো রকম জীবন বাঁচিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন শত শত নারী শ্রমিক।

অভিবাসী এসব নারী শ্রমিকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কর্মস্থলে নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করতে হয়। গৃহশ্রমিক, নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজের জন্য আকর্ষণীয় বেতন দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নারীদের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের মূলত দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি সেসব দেশের গৃহকর্তারাও বাংলাদেশি নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছেন।

প্রতিবাদ করলেই নারী শ্রমিকদের ওপর নেমে আসে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমন তথ্যই দিলেন পুরান ঢাকার ওয়ারীর গৃহকর্মী নওরীন বেগম (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, এক বছর হলো তিনি দুবাই থেকে এসেছেন। সেখানে বেতন না দিয়েই দিনের পর দিন তাকে অভুক্ত পর্যন্ত রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীরা প্রবাসে কেমন আছেন তা তদারকির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেই। এমনকি সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতাও নারীরা পাচ্ছেন না। সূত্র মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশের নারীদের যৌনদাসী হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে সিরিয়া, লেবানন, সৌদি আরব, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু দেশে নারী পাচারের ঘটনা ঘটছে। পাচার হওয়া নারীদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে বর্তমানে নরক-যন্ত্রণা ভোগ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদেশ ফেরত দুই নারী জানান, তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে দিনের পর দিন স্বল্প আহারে অভুক্ত রাখা হতো। সেখানে বন্দি অবস্থায় দিন কেটেছে অনেকের। অনেকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। কেউ কেউ দীর্ঘদিন নিখোঁজ রয়েছেন। আবার প্রাণ হাতে নিয়ে যারা দেশে এসেছেন তাদের অনেকেই গুরুতর অসুস্থ। অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন। ময়মনসিংহের ফুলপুরে থাকেন আছিয়া বেগম (ছদ্মনাম)। তিনি পাঁচ মাস হলো সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন।

তিনি জানান, কাজ করতে গিয়ে তারা কম বেতন, তাও আবার ঠিকমতো না দেওয়া, অতিরিক্ত কাজের চাপ, ভাষাগত সমস্যা, মালিক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনসহ নানা রকমের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি দেশে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও দেওয়া হতো না। মাসের পর মাস এসব শ্রমিককে রাখা হয় গৃহবন্দি করে।

জাতিসংঘের অভিবাসীবিষয়ক বিভাগের মতে, প্রতি ১০ জন অভিবাসী নারী শ্রমিকের মধ্যে ৭ জনই নির্যাতনের শিকার হন। তারা শ্রমের মূল্য অনুযায়ী মজুরি পান না। করা হয় শারীরিক নির্যাতন।

সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নারী শ্রমিকরা এমন সমস্যায় পড়ছেন জানিয়ে বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, যে দেশে অভিবাসী নারী শ্রমিকরা গৃহকর্মী হিসেবে যাচ্ছেন তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ১১ নারী শ্রমিককে মধ্যপ্রাচ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশি অভিবাসী নারী শ্রমিকরা বিনা খরচে যাওয়া-আসা ও সম্মানজনকভাবে কর্মক্ষেত্রে কাজ করবেন এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু কেন তারা নির্যাতনের শিকার হন এবং বিনা বেতনে ফিরে আসেন।

একটি রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মী বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী শ্রমকিকে গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠানো হয়। ওখানকার মালিকের ওপর তাদের বেতন ওঠানামা করে। সৌদি আরবে বাংলাদেশি অভিবাসী নারী শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা জানার পর সেখানে নারী শ্রমিক পাঠানো কমে যাচ্ছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের নারী কর্মীরা কাজ নিয়ে যেসব দেশে যাচ্ছেন সেখানে তারা নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তারা সেখানে যৌন এবং মৌখিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকে কাজের বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না, যা পাচ্ছেন তা খুবই কম। আবার অনেকে বিনা বেতনেই কাজ করে যাচ্ছেন মাসের পর মাস। নির্যাতিত নারী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভাগ্য বদলানোর আশায় প্রতারকদের প্ররোচনায় পড়ে শত শত নারী শ্রমিক বিদেশে পাড়ি দিয়ে নিজেদের অজান্তে নির্যাতনের মুখে পড়ছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে বিদেশে নারী শ্রমিকদের অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুর্ভোগ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!