• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে রিকশা নিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটিই আজ যুক্তরাজ্যের মেয়র


জেলা প্রতিনিধি মে ২৩, ২০১৯, ১০:৫৫ এএম
বিদেশে রিকশা নিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটিই আজ যুক্তরাজ্যের মেয়র

মানিকগঞ্জ: দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে রৌওশনারা রহমান প্রায় এক যুগ আগে একটি রিকশা নিয়ে গিয়েছিলেন লন্ডনে। সেময় বিষয়টি বেশ সাড়া ফেলেছিল। যা বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতেও প্রচারিত হয়। এটি পুরনো খবর, নতুন খবর হলো, সেই রৌওশনারা এবার যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

তিনি ওই শহরের এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মেয়র। মাত্র ১৩ বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে যান রৌওশনারা। তবে শেকড়ের টানে প্রতিবছরই দেশে আসেন তিনি। নিজ গ্রামে তার প্রতিষ্ঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। যার মাধ্যমে এলাকার মানুষকে তিনি নানাভাবে সহায়তা করেন।

রৌওশনারার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা কাশিমপুর (কাঁঠাল বাগান) গ্রামে। তার বাবার নাম প্রকৌশলী রজ্জব আলী খান। দুই মাস আগে তিনি মারা গেছেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে রৌওশনারা সবার বড়।

সিংগাইর উপজেলার ইরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলেন রৌওশনারা। স্থানীয় তালেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

রাজনীতির পাশাপাশি রামসগেইট শহরে রৌওশনারার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা রয়েছে। স্বামী রেজাউর রহমান জামানও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রৌওশনারার শ্বশুরবাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায়।

রৌওশনারার বাবা ছিলেন বুয়েটের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৬৭ সালে স্বপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। এলাকায় একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে তার পরিচয় ছিল। তিনি নিজের জমিতে এলাকাবাসীর জন্য মসজিদ, ঈদগাঁ মাঠ, রাস্তা এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করেন। সব সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

বাবার মতো রৌওশনারাও এলাকার অসহায় মানুষের পাশে থাকেন সবসময়। যুক্তরাজ্যের রামসগেট শহরের নামে নিজ গ্রামে রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সুদূর প্রবাসে থেকেও যার মাধ্যমে তিনি এলাকার মানুষকে নানাভাবে সহায়তা করেন। বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ান।

রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ম্যানেজার ও রৌওশানার চাচাতো ভাই মোতালেব হোসেন জানান, সংস্থার মাধ্যমে তিনি প্রতিবছর বন্যার সময় ত্রাণ, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, ফি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেন। এছাড়া ব্যক্তিগত খরচে এলাকার অনেক মানুষের চোঁখের অপারেশন করিয়েছেন রৌওশনারা রহমান।

মোতালেব হোসেন জানান, রৌওশনারা রহমানের পেশা ব্যবসা। রামসগেট শহরে ‘তন্দরি’ নামে একটি রেস্তোরাঁর মালিক তিনি। যুক্তরাজ্যে সক্রিয় রাজনীতি ও ব্যবসায় ব্যস্ত থাকলেও রৌওশনারা প্রতিবছরই দেশে আসেন। সময় কাটান নিজ গ্রামে। তার মানবিক কাজের কারণে এলাকার সবাই তাকে অনেক ভালোবাসেন।

তিনি আরো জানান, ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির এমপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন রৌওশনারা রহমান। অল্পভোটের ব্যবধানে সেসময় পরাজিত হন তিনি। এর আগে লেবারপার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গত ১৪ মে বিপুল ভোটে যুক্তরাজ্যের রামসগেইটের মেয়র নির্বাচিত হন রৌওশনারা।

রৌওশনারার এই সাফল্যে খুশি তার জন্মস্থান মানিকগঞ্জের সিংগাইরের মানুষ। স্থানীয় তালেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রমজান আলী জানান, আমাদের এলাকার মেয়ে রৌওশনারা যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এজন্য আমরা খুবই গর্বিত। এলাকার সব মানুষ খুবই উচ্ছ্বসিত।

রৌওশনারা রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটির মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। লেবার পার্টি আমার প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছিল। এজন্যই আমাকে মনোনয়ন দেয়। শহরের মেয়র নির্বাচিত হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এটা খুবই সম্মানের। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভবিষ্যতে মানুষের জন্য আরো কাজ করে যেতে চাই।

তিনি আরো বলেন, নিজের শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য খুবই জরুরি। শত ব্যস্ততার মাঝেও আমি সবসময় আমার দেশ এবং জন্মস্থানকে মনে করি। এজন্যই সুযোগ পেলেই দেশে ফিরে যাই। গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আমারও ভালো লাগে।

রৌওশনারা জানান, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের সম্পর্কে আরো যেন উন্নয়ন করা যায় সেজন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!