• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
সিঙ্গাপুর সৌর জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাংকের প্রকাশনা

বিদ্যুতে আশার আলো ভাসমান সৌরপ্যানেল


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১২, ২০১৮, ০৭:৫১ পিএম
বিদ্যুতে আশার আলো ভাসমান সৌরপ্যানেল

ঢাকা : কাপ্তাই লেকের পাশে সৌরশক্তি ব্যবহার করে ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হবে ২২ একর জমি। টেকনাফে বেসরকারি সোলার পার্কে ১১৬ একর জমিতে উৎপাদন হবে ২০ মেগাওয়াট। ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে ফেনীর সোনাগাজীতে অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় এক হাজার একর জমি।

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় চ্যালেঞ্জ জমির সংস্থান। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বড় আশার আলো হতে পারে ভাসমান সোলার প্যানেল। এক গবেষণায় এমন দাবি করেছে সিঙ্গাপুরের সৌর জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাংক। ডেনমার্কের জ্বালানি খাত ব্যবস্থাপনা সহায়তা কর্মসূচির অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণার সারসংক্ষেপ সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাসমান সৌরপ্যানেল ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়ানো যেতে পারে। জমির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জনবহুল দেশগুলোর জন্য এ প্রযুক্তি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৭৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় ভাসমান প্রযুক্তির। বর্তমানে চীনের এক কেন্দ্র থেকেই আসছে দেড়শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

এই দুই দেশ ছাড়াও নরওয়ে, জাপান, মালদ্বীপ, ভারত, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, পর্তুগাল, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকংয়ের মতো বেশ কিছু দেশ ভাসমান প্রযুক্তিতে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৪ লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

২০১৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভাসমান সৌর প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১০০ গুণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে এ খাতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ১০ মেগাওয়াট।

২০১৬ সালে ১০ মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসে। চলতি বছর চালু করা হয়েছে ১০০ মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার বৃহৎ কয়েকটি কেন্দ্র।

এর ফলে ভাসমান সৌর প্রযুক্তির উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৭ মেগাওয়াটে। ভাসমান প্রযুক্তিতে ২০১৫ সালে ৫৫ মেগাওয়াট, পরের বছর ৬৭ মেগাওয়াট, ২০১৭ সালে ৪৫৩ মেগাওয়াট ও চলতি বছর ৫১২ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে স্থলভাগের সৌরপ্যানেলের সঙ্গে ভাসমান প্রযুক্তির তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এ প্যানেল থেকে ব্যাটারিতে ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডিসি) জমা হবে। ইনভার্টারের মাধ্যমে এ শক্তি রূপান্তর করা হবে অলটারনেটিভ কারেন্টে (এসি)। উপকূলের কাছাকাছি ছোট আকারের প্যানেল থেকে বিদ্যুৎশক্তি রূপান্তরের কাজ স্থলভাগে করা যাবে।

প্রচলিত ধারার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও ভাসমান পদ্ধতিতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে পর্তুগালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। এর পর থেকে বেশ কয়েকটি দেশে এমন যৌথ প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে।

বাংলাদেশের সামনেও অপার সম্ভাবনা : ভাসমান প্রযুক্তির মাধ্যমে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশেও বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ৬৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ আসছে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে আগামী কয়েক বছরে শেষ হবে গ্যাসের মজুদ। তরল জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আট গুণ পর্যন্ত অর্থ ব্যয় হয়।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করেও বিদ্যুৎ উৎপাদন তুলনামূলক ব্যয়বহুল। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জমির স্বল্পতায় জাতীয় গ্রিডের মাত্র দেড় শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ভিজিটিং লেকচারার সমুদ্রবিজ্ঞানী হাসিবুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পর্যাপ্ত জমি না থাকায় বাংলাদেশে সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় বড় আশার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে দেশের বিশাল সমুদ্রসীমা। বঙ্গোপসাগরে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে আগামীতে দেশের বিদ্যুতের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

অবশ্য এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আগে বড় ধরনের সমীক্ষা পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন এ সমুদ্রবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য এলাকার সমুদ্রের চেয়ে বঙ্গোপসাগরের গতিপ্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। এ অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতাও একটু বেশি। তা ছাড়া এমন প্রকল্প নেওয়ার আগে পরিবেশের ভারসাম্যের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!