• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিপন্ন নদী রক্ষায় আমাদের করণীয়


নজরুল ইসলাম লিখন সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০২:০৪ পিএম
বিপন্ন নদী রক্ষায় আমাদের করণীয়

ঢাকা : নদনদীবহুল বাংলাদেশকে আর বুঝি ‘নদীমাতৃক দেশ’ অভিধায় ভূষিত করা যায় না। কেননা কালের প্রবাহে মানুষের অব্যাহত দখল-দূষণে অধিকাংশ স্রোতস্বিনী কল্লোলিনী নদনদীর অবস্থা মৃতপ্রায় অথবা জীবন্মৃত। ছোট ছোট নদীর কথা বাদ দিলেও বর্তমানে মেঘনা অববাহিকা বাদে একদা সর্ববৃহৎ কীর্তিনাশা প্রমত্ত পদ্মা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের অবস্থাইবা কী? সে প্রেক্ষাপটে অন্য নদনদীর দুরবস্থা সহজেই অনুমেয়। নদনদী শুকিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে কৃষকের। বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি ও পরিবেশে। মরে যাচ্ছে গাছপালা। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ নিসর্গ প্রকৃতি। রীতিমতো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে মৎস্য প্রজাতি, প্রাণিকুল ও জীববৈচিত্র্য।

নদীমাতৃক এ বাংলাদেশে আট শতাধিক নদীর কথা শোনা গেলেও বর্তমানে কায়ক্লেশে টিকে আছে ৭১০টি। এর মধ্যে ৩০০ বড় নদী এবং ৪০০ শাখা নদী-উপনদী। ৫৭টি নদী আন্তর্জাতিক হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ৫৩টি ভারত থেকে প্রবাহিত, মিয়ানমার থেকে ৩টি এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবাহিত ১টি নদী। সত্যি বলতে কি, কোনোটির অবস্থাই ভালো নয়। ফারাক্কা-গজলডোবাসহ নানা বাঁধ ও ব্যারাজে স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ প্রায়।

তদুপরি প্রতিনিয়ত দখল-দূষণে জর্জরিত দেশে ও বিদেশে সমানভাবে, ভূমিদস্যু ও জনমানুষ কর্তৃক। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে নদীর প্রবাহ সচল রাখাসহ নদী রক্ষায় ন্যূনতম সচেতনতা নেই বললেই চলে। যে কারণে ইতোমধ্যেই শতাধিক নদী বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলোরও যায় যায় অবস্থা। এমনকি দেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ৪০৫টি নদী অবৈধ দখলদারদের কবলিত হওয়ায় মানচিত্রে সেগুলোর অবস্থান প্রায় হারানোর উপক্রম। ফলে নদনদীকে জীবনসত্তা বলে অভিহিত করে সেগুলোকে অবিলম্বে অবমুক্ত করার জন্য সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশও থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত।

জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সোনারগাঁওয়ে কথিত বেঙ্গল সিমেন্ট ফ্যাক্টরির মেঘনা নদী দখল এবং যশোরে ভৈরব নদ দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারা দেশেই নদনদীগুলো দখল-ভরাট ও বেপরোয়া দূষণের শিকার হচ্ছে। গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, সরকারের সংশ্লিষ্টরা মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও কার্যত নদী উদ্ধার ও সংরক্ষণে কার্যকর কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ দেখা যায় না।

গত ১ জুলাই প্রকাশিত হাইকোর্টের এক রায়ে নদী দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়। দেশের সব নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণার পাশাপাশি নদ-নদীর সুরক্ষা ও সংরক্ষণে নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করা হয়। উচ্ছেদে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নেই। নদীর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের অধীনে প্রাথমিকভাবে এক বছর মেয়াদি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হচ্ছে।

কমিশন থেকে সব জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা নদী দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহে আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে (ভূমি মন্ত্রণালয়) পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ রাজধানীর চারপাশের নদনদী, সর্বোপরি দেশের সব নদী ও শাখা নদীকে দখল-দূষণমুক্ত করে সারা বছর নাব্য রাখার জন্য সরকার একটি মাস্টার প্ল্যান তথা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

এতে একদিকে যেমন নদীমাতৃক বাংলাদেশের আবহমান চিরায়ত প্রকৃতি ও রূপ ফিরে আসবে, তেমনি নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ মানুষের যাতায়াতের পথ সহজ, সুগম ও সুলভ হবে। সরকার যে দেশের নদনদীকে সারা বছর নাব্য বজায় রেখে দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে সচেষ্ট ও আন্তরিক তা ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে। তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষ্যায় প্রায় নিয়মিতই চলছে উচ্ছেদ অভিযান। রাজধানীর বাইরেও এই উচ্ছেদ অভিযান চলমান। নদী দখল ও দূষণ প্রতিরোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নৌপথ সচলের পাশাপাশি সারা বছর নদীর নাব্য রক্ষাসহ সেচ সুবিধা ও চাষাবাদ অপেক্ষাকৃত সহজ এবং সম্প্রসারিত হবে নিঃসন্দেহে। ইলিশসহ মাছের উৎপাদনও বাড়বে।

প্রথমে দখলদারদের নোটিশ করতে হবে, যেন তারা সরে যায়। যদি না যায় তখন তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। সে উচ্ছেদের খরচ তখন দখলকারীদের বহন করতে হবে আদালতের রায় অনুযায়ী। আর যাদের নাম তালিকায় থাকবে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ব্যাংক ঋণ না দেওয়ার ব্যাপারেও রায়ে নির্দেশনা আছে। দখল উচ্ছেদ, নদী সংরক্ষণে কমিশনকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা আশা করি কমিশন সে দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করবে।

আবার আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রে এবং পানিসম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী একশ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, নদী না বাঁচলে বাঁচবে না বাংলাদেশও।

স্বাধীনতার পর আমাদের দেশের নদনদীর জন্য প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং অভিন্ন নদীগুলোতে স্থিতিশীল প্রবাহের নিশ্চয়তা। কিন্তু গত সাড়ে চার দশকে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সংকট। প্রবাহস্বল্পতা ছাড়াও দখল, দূষণ, বালু উত্তোলন ও ভাঙন নদীগুলোর জন্য বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।

আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী উদ্ধারের প্রশ্নে দৃঢ়তম অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তার চার মেয়াদের শাসনামলে নীতি ও আইনগত প্রস্তুতি ছাড়াও নদী সুরক্ষার কাজ মাঠ পর্যায়ে গড়িয়েছে।

আমরা এও জানি, দেশে নদী-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতা নেই। প্রয়োজন ছিল নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সদিচ্ছা ও দৃঢ়তা। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আমাদের উচ্চ আদালতও নদী সুরক্ষায় যেসব রায় দিয়েছেন, সেগুলো অন্যান্য দেশের জন্যও উদাহরণ।

দেশের সব নদনদীকে আইনি বা জীবন্ত সত্তা ঘোষণা নিঃসন্দেহে নদীর অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরাঞ্চলে পরিচালিত নদনদীর দখল উচ্ছেদ অভিযান অতীতের তুলনায় অনেক বেশি দৃঢ় ও ধারাবাহিক। আমরা মনে করি, দখলের পাশাপাশি নদনদীর অন্যান্য সংকট মোচনেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
বস্তুত দখল উচ্ছেদ করেও দূষণ যদি থেকে যায়, তাহলে নদনদীর মৎস্যসম্পদ সুরক্ষিত থাকবে না। অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভাঙন রোধে আগের তুলনায় মনোযোগ, বরাদ্দ, বাস্তবায়নে দক্ষতা ও নজরদারি বাড়লেও দেশের প্রায় সর্বত্র নির্বিচারে বালু উত্তোলন মনুষ্যসৃষ্ট ভাঙনের ঝুঁকি আগের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছে।

বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুসহ ঢাকার চারপাশের নদনদীগুলো দখলে-দূষণে মৃতপ্রায়। অব্যাহত দখলবাজি ও ভরাটের কারণে নদীর প্রশস্ততা ও পানিপ্রবাহ হ্রাস পেয়ে কোথাও কোথাও সংকীর্ণ খালে রূপ নিয়েছে। যথেচ্ছ স্থাপনা নির্মাণ, নদীতে সরাসরি শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ফেলার কারণে এসব নদীর পানি ইতোমধ্যেই তার উপযোগিতা হারিয়েছে। ঢাকা শহরের ২ কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে ঢাকা ওয়াসা ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকি গতানুগতিক পরিশোধন ব্যবস্থায়ও পানির স্বাভাবিক গুণাগুণ ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। শহরের চারপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করা সম্ভব হলে পানির চাহিদা পূরণ অনেক সহজ হতো।

কেউ কেউ নদীভাঙনের শিকার হয়ে নদীতীরে হয়তো নিজের বসতবাড়ি গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু নদীতে বেড়া দিয়ে ভরাট করে অথবা কংক্রিটের পিলারের ওপর স্থাপনা বা কলকারখানা নির্মাণকারীরাই হচ্ছে আসল ভূমিদস্যু ও দখলবাজ। এবার শুরু হোক জবাবদিহিতা ও বিচারের পালা।

আইনের ফাঁক-ফোকর বা দীর্ঘসূত্রতার জেরে এরা যেন পার পেয়ে না যায়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এখন সময় এসেছে নদী সংকটের সামগ্রিক সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার। একটি সংকটে বেশি মনোযোগ দিয়ে অপরাপর সংকটে ঔদাসীন্য কাঙ্ক্ষিত সুফল নিয়ে আসবে না। নদী দখলদারদের তালিকা অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিন। নদীরক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে সরকারকে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নদীরক্ষায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করলেই চলবে না, এর বাস্তবায়নও করতে হবে।

নদীভাঙন মূলত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট কারণও যুক্ত হয়েছে। উজানে পানি প্রত্যাহার বা ব্যারাজের কারণে প্রবাহস্বল্পতায় গঙ্গা, তিস্তার মতো নদীতে চরের বাহুল্য দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে যে কারণে বাড়ে ভাঙন। দেশে প্রাকৃতিক কারণে নদীভাঙনের হার আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু বেড়েছে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ভাঙন। এর প্রধানতম কারণ নির্বিচারে বালু উত্তোলন।

রিভারাইন পিপলের একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৮০টির বেশি নদনদীর কাঠামোগত বিপর্যয় ঘটেছে। বালু উত্তোলন ভাঙন ছাড়াও মৎস্যসম্পদের আবাস ও প্রজনন বিঘ্নিত করে। হ্রাস করে নাব্যতা। বালুর পাশাপাশি পাথর উত্তোলন সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি নদীগুলোর জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে। এর ফলে সেখানে সুপেয় পানি সংকট এবং প্রতিবেশগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী সংকটের সমাধানে আসলে ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ জরুরি।

নদনদীতে যেমন পর্যাপ্ত প্রবাহ প্রয়োজন, তেমনি দূষণ রোধ না করা গেলে সেই প্রবাহ কাজে আসবে না। আবার দখল উচ্ছেদ করে যদি বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকে, তাহলে নদীভাঙনের শিকার হতে পারে উদ্ধারকৃত জায়গা।

বাংলাদেশের সব নদী চূড়ান্ত অর্থে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল। নদনদীর জীবন্ত সত্তা টেকসই করতে হলে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহের পরিমাণগত ও গুণগত মান সুরক্ষিত থাকতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ সনদ-১৯৯৭ জাতীয় সংসদে অনুস্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। এই সনদ অবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। দেশের সবচেয়ে বেশি ভাঙনপ্রবণ নদী যমুনা ও পদ্মার তীর স্থিরকরণ এবং ভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে বড় ধরনের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর ধরে ‘হাইওয়ে কাম ইমব্যাঙ্কমেন্ট’ তৈরি হতে পারে।

ভারত ও ভুটানের সঙ্গে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় আন্তঃরাষ্ট্রীয় নৌ চলাচলেও এই দুই নদী প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহূত হবে। ব্রহ্মপুত্রের বাংলাদেশ প্রবেশমুখ দইখাওয়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ১৭৮ কিলোমিটার নৌপথ খননে বাংলাদেশ ও ভারত একটি যৌথ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে এর খনন-জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই খনন কাজ শুরু হবে। এতে করে ভাঙন রোধে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত স্বীকৃত ৫৪টি নদীর মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোর উজান ভারতে হওয়ায় দরকষাকষিতে ‘লোয়ার হ্যান্ড’ বিবেচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দুই দেশের মধ্যে নদীবিষয়ক সহযোগিতার জন্য গঠিত হয় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর অন্যতম প্রধান নদী গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি হলেও বাকি ৫৩ নদীতে বাংলাদেশের অধিকার এখনো ঝুলে আছে ভারতের মর্জির ওপর। ফলে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি চূড়ান্ত হলেও তা আজো সম্পাদন সম্ভব হয়নি।

নদীবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশে ৩৯টি নদী সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরী সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা এবং চট্টগ্রাম সংলগ্ন কর্ণফুলীর দূষণ মারাত্মক। নদীতে শিল্পদূষণ রোধে ইটিপি বা রাসায়নিক বর্জ্য শোধনাগারের বিধান থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে সামান্য। ইটিপি কার্যকরে আইনের প্রয়োগ ছাড়াও এ প্রযুক্তি আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী করে তোলা গেলে শিল্পকারখানার মালিকরা আগ্রহী হতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০৫ অনুসারে (সংশোধিত ২০১০) সরকার ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদনদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে সারা দেশে নদনদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি হয়েছে। মাদক ও ক্যাসিনো অভিযানের মতো এখন প্রয়োজন এদের উচ্ছেদে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা।

দেশের প্রধান ৪৮টি নদীর তথ্যভান্ডার তৈরি হওয়া এবং বিভিন্ন নদীর ড্রেজিং অব্যাহত রাখা সরকারের একটি শুভ উদ্যোগ। তবে পানির বিভিন্ন ধরনের অপব্যবহার রোধসহ নদী রক্ষার কর্মসূচিতে স্থানীয় কমিউনিটির অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

লেখক : সাংবাদিক ও গদ্যকার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!