• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সুযোগ পাবেন না প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০, ০৩:৩৫ পিএম
বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সুযোগ পাবেন না প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা

ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে পরবর্তী পদে পদোন্নতির বদ্ধ দ্বার খুল‌তে যা‌চ্ছে। ১৯৯৪ সালে পদোন্নতির এই সিঁড়ি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২৬ বছর পর আবারও প্রধান শিক্ষকদের সরাসরি পদোন্নতি দেয়ার কাজ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ প্রধান শিক্ষক পদ থেকে উপজেলা/থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) পদে পদোন্নতি দেয়া হলেও বাকি ২০ শতাংশ বাইরে থেকে উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগে একটি সমন্বিত নিয়োগ বিধিমালার খসড়াও তৈরি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য সুখবর আসছে জানালেন সচিব

জানা গেছে, সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে ২টি শর্ত পূরণ করে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষা দিতে পারেন। শর্ত ২টি হলো, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর এবং বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে। এ ভাবে অতীতে অনেক শিক্ষকই সুযোগ পেয়েছেন কর্মকর্তা হওয়ার।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকের ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা

১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক, পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ ছিল। ১৯৯৪ সালে নিয়োগ বিধি সংশোধনের পর শিক্ষকদের এ ভাবে কর্মকর্তা হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: স্কুল খোলার বিষয়ে যে পরামর্শ দিল প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে সমন্বিত নিয়োগ বিধিমালা ২০২০। এতে সরকা‌রি প্রাথ‌মিক বিদ্যাল‌য়ের শিক্ষকদের মধ্যে শুধু প্রধান শিক্ষকদের জন্য এ সুযোগ রাখা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রোববার

খসড়া নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ২ হাজার ৫৮৯টি পদে নিয়োগে ৮০ শতাংশ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ যোগ্য। বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বোঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ন্যূনতম ৩ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। সরাসরি নিয়োগে বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিল যোগ্য।

অপর দিকে উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টরের ৫০৫টি পদে নিয়োগে মোট পদের ৩৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৬৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। পদোন্নতি যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করার কথা রয়েছে। পদোন্নতির জন্য উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) সহকারী ইনস্ট্রাক্টর/পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে ন্যূনতম ৭ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ২য় শ্রেণির বিএডসহ ২য় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি চাওয়া হয়েছে। সরাসরি নিয়োগে বয়স ৩০ বছর, তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমা উল্লেখ নেই।

ইউআরসি সহকারী ইনস্ট্রাক্টরের ৫০৫টি পদের নিয়োগও একই নিয়মে হবে। এখানে বিভাগীয় প্রার্থী বলতে শুধু প্রধান শিক্ষকদের বোঝানো হয়েছে। দেশের ৬৭টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) ইনস্ট্রাক্টর সাধারণ ও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ইনস্ট্রাক্টর পদেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভাগীয় পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়নি। কর্মকর্তাদের অন্যান্য পদ, যেমন, ইউইও, টিইও, এডিপিইও, ডিপিইও পদে শতভাগ পদোন্নতির কথা প্রণীত খসড়ায় বলা হয়েছে।

খসড়ার বিষয়ে সহকারী শিক্ষকরা বলছে, এতদিন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হলেও পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর ও সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে তাদের বিভাগীয় পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হতো না। নতুন বিধি মালায় সব ধরনের কর্মকর্তার পদ থেকে সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হলো।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক এবং পরবর্তীতে পদোন্নতি দিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। আগের নিয়োগ বিধিতে সে সুযোগ থাকলেও বর্তমানে তা বাতিল করায় অধিকাংশ সহকারী শিক্ষক একই পদে থেকে অবসর গ্রহণ করবেন। চাকরি জীবনে তিনি কোনো পদোন্নতি পাবেন না। সম্প্রতি সহকারী শিক্ষক থেকে শতভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সব পদে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করলে আমাদের মধ্যে তৈরি হওয়া হতাশা কেটে যাবে। সকলে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করবেন।

অন্য দিকে বাংলাদেশ সরকারি প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ বলেন, আগে প্রধান শিক্ষকদের সব পদে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও নিয়োগ বিধি সংশোধন করায় সেই পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে একই পদে থেকে চাকরিজীবন শেষ করতে হবে। প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য ৪৫ বছর জুড়ে দেয়ায় থানা শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার পর তাদের অবসরে চলে যেতে হবে। এটা খুবই দুঃখজনক। সহকারী শিক্ষক থেকে শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক, একই ভাবে প্রধান শিক্ষকের পরবর্তী পদগুলোতে শতভাগ পদোন্নতি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এর বাইরে শিক্ষকদের মধ্য থেকে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দিতে হবে। বাইরে থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হলে তারা আমাদের কাজকর্ম সে ভাবে বুঝবেন না। ফলে তাদের সঙ্গে শিক্ষকদের কাজ করাটা জটিল হয়ে পড়বে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক থেকে পরবর্তী পদে পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও ১৯৯৪ সাল থেকে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কেন বন্ধ করা হয়, তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সেটি আবার চালু হচ্ছে। পদোন্নতির রাস্তা খুলতে কাজ শুরু হয়েছে। একটি সমন্বিত চাকরি বিধিমালা তৈরির মাধ্যমে আবারও সেটি চালু করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের ৮০ শতাংশ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি এবং ২০ শতাংশ সরাসরি প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দিতে একটি খসড়া বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে এটি যাবে। সেখানে খুঁটিনাটি বিস্তারিত আলোচনা হবে। পরবর্তীতে এটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে আকরাম আল হোসেন বলেন, শিক্ষকদের বঞ্চিত করার কোনো প্রশ্নই আসে না। বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে নয়, পদোন্নতি পেয়েই প্রধান শিক্ষকরা ভবিষ্যতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিও) হবেন। কেউ কোনো ব্লক পোস্টে আটকে থাকুক, সেটি চাই না। এতে কোনো প্রণোদনা থাকে না। শিক্ষকরাও ধাপে ধাপে উপরের পদে পদোন্নতি পাবেন। এ জন্য পদোন্নতির সোপান তৈরি করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!