• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিভীষনের বার্টলসম্যান কড়চায় ‘স্বৈরতান্ত্রিক বাংলাদেশ’


এস এম সাব্বির খান অক্টোবর ৬, ২০১৮, ০৭:৩১ পিএম
বিভীষনের বার্টলসম্যান কড়চায় ‘স্বৈরতান্ত্রিক বাংলাদেশ’

ঢাকা : নেতিবাচকতার একটা জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে দেশে। একটি নির্বাচিত সরকার ও তাঁর প্রতিনিধিত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ শুধুমাত্র আভ্যন্তরিন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীতার কারণে যদি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বারংবার বিরোধী শক্তির মিথ্যাচারে বিব্রত হয় এবং নেতিবাচকতায় আক্রান্ত হয় তবে সে সরকারের পক্ষে জনগনের জন্য নিবেদিত হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। অপর দিকে ক্ষমতার লিপ্সায় চালানো এমন আচরন অবশ্যই গ্রহনযোগ্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।

অন্ধের মত বহিঃশক্তির লবিং এজেন্টদের মাধ্যমে দেশের সরকার ও জনগনকে যে সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাড়া করানো হয়েছে সেক্ষেত্রে একটি বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে উঠে যে সেদেশের জনগন ও সরকারের মাঝে অনৈক্য বিরাজমান এবং এই দুর্বলতার সুযোগে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে এই সংকটের একটি পরিষ্কার চিত্র দৃশ্যমান হয়। কিন্তু কোথা থেকে এই নেতিবাদী মন্ত্রের উত্থান এবং তার মূল উদ্দেশ্য কি সে বিষয়টি বোধ করি আমাদের দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেছে। কোনো জটিল ব্যাধির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে গোড়ার গলদ কোথায় সেটি খুঁজে নেয়া আবশ্যক।

হয়তো সবার মনে আছে যে কয়েক মাস আগে বার্টলসম্যান স্টিফটুং নামের একটি বিদেশী সংস্থা তাঁদের একটি প্রতিবেদনে বিশ্বের কয়েকটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাম প্রকাশ করেছে যে রাষ্ট্রগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে স্বৈরশাষকের উত্থানে স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে উল্ল্যেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের নাম। এর মাধ্যমে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার আদায়ের জন্য স্বৈরাচারি শোষকগোষ্ঠির সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধজয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারি বাংলাদেশের গায়ে যেমন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তকমা জুড়ে দেয়া হলো তেমনি এদেশের আপামর জনতার প্রতিনিধি হিসেবে সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক মতাদর্শে গড়া দল আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে ‘স্বৈরাচারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে!

যে জাতির জন্য ১৯৭৫ সালে সেনা সমর্থিত স্বৈরশাসকের নির্দেশে মহান জাতির পিতাকে নির্মম ভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিলো, তাঁরই উত্তরসূরীরা আজ স্বৈরতন্ত্রের ধারক, এই মন্তব্য ঠিক কতটা গ্রহনযোগ্য তা আমার জানা নেই। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, যারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের প্রতি মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁদের ক্ষমতাচ্যুত করে দেশকে স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এই প্রতিবেদনে যেন সেই ‘ঘরের শত্রু বিভীষনদের’ বহুকালের প্রাণের দাবি ‘স্বৈরতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই’ এর সুস্পষ্ট প্রতিধ্বনি শুনলাম!

দীর্ঘ সময় পর সম্প্রতি দেশের বরেণ্য সাংবাদিক ও কলামিস্ট শ্রদ্ধেয় আবেদ খান সাহেবের কয়েকটি লেখা আমার পড়া হয়েছে। তাঁর ‘কি হবে নির্বাচনে’ কলামটিতে গোয়েবলেশিয় প্রক্রিয়ায় একটি মিথ্যাকে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে কিভাবে মানুষের মাঝে গ্রহনযোগ্য সত্যে রুপান্তরিত করা হয় তা দেখলাম। ঠিক সেভাবেই একটি বিশেষ গোষ্ঠী বর্তমান সরকারকে স্বৈরাচারি সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় লিপ্ত আর তারা এই বার্টলসম্যান স্টিফটুং প্রতিবেদনটিকে তারই সনদপত্র হিসেবে মানুষের মাঝে উপস্থাপন করেছে। সাধারন মানুষ এদেশের ভাগ্য নির্ধারক আর তাঁরা বোধ করি অন্ধের মত কোনো কিছু অনুসরন না করে সচেতন ভাবেই যাচাই করবে। সে জন্য কিছু প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর খুঁজে নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বার্টলসম্যান স্টিফটুং সংস্থাটি কারা, গ্রহনযোগ্য তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সেটি কতটা আদর্শ এবং এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষনের স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতা কতটা? যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এই স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আখ্যা দেয়া হলো প্রকৃত পক্ষে সেটি কতটা যৌক্তিক এবং এর মূল উদ্দেশ্য কি? ক্ষমতামুখী স্বার্থপরতায় সৃষ্টি হওয়া এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জাতীয় জীবনে কি প্রভাব সৃষ্টি করছে?  

বার্টলসম্যান স্টিফটুং নামের এই জার্মান সংস্থাটি নানা কারণে তার নিজের দেশেই ব্যাপক ভাবে সমালোচিত। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গনতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ নানা জনস্বার্থ সম্পৃক্ত কাজের উদ্দেশ্যে একটি অলাভজনক সেবাম‚লক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ক্রমে একটি পুঁজিবাদী, বানিজ্যভিত্তিক এবং প্রভাবশালি সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানে পরিনত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে এর বিরুদ্ধে। সংস্থাটি তার সাংগঠনিক অবকাঠামো এবং গনতান্ত্রিক বৈধাতা নিয়েও চরম ভাবে সমালোচিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ। জার্মানির নর্থ-রাইন ওয়েস্টফিলিয়া বিজ্ঞান মন্ত্রনালয়ের প্রাক্তন সচিব উলফগ্যাং লিব, বার্টলসম্যান ফাউন্ডেশনের ‘সুশীল সমাজের সাথে সম্পৃক্ততা’ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন যে, রাজনৈতিক ভাবে পক্ষপাতদুষ্টতার জন্য সংস্থাটির গনতান্ত্রিক বৈধতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে এবং তা ক্ষমতাশীনদের পাশাপাশি অর্থনৈতিক শক্তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, লিব দৃঢ় ভাবে দাবি করেন যে, সংস্থাটি রাজনীতির ব্যক্তিগতকরণ অনুসরন করছে যেখানে বিভিন্ন মহলের রাজনীতিকরা একটি ‘পারস্পরিক বিনিময়’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশেষ রাজনৈতিক পরামর্শ ও সহযোগীতা লাভ করছে। সেক্ষেত্রে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে জনস্বার্থ ও জনসেবার আড়ালে বিভিন্ন মহলের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার একটি বানিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।

২০০৪ সালে সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ জুলিয়াস স্যান্ডট, জার্মান স্বাস্থ্য সেবায় বার্টেলসম্যানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে সমালোচনা করে বলেন যে, সংস্থাটি দেশের বেসরকারী চিকিৎসাখাতে স্ব-নিয়োগকৃত চিকিৎসকদের নিয়োগের অপব্যবহার দ্বারা একটি সমালোচিত চিকিৎসা বানিজ্যের খাত সৃষ্টি করছে যা দেশ ও মানবতার জন্য হুমকি স্বরুপ। ২০০৬ সালে লেখক ও সাংবাদিক হ্যারাল্ড স্কুম্যান সংস্থাটির অর্থ-বিষয়ক পরিসংখ্যান তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যাতে সংস্থাটির বানিজ্যিকরণ প্রক্রিয়া স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পায়। পাশাপাশি দেশটির বিশিষ্ট সমাজবিদ এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ আর্ন ক্যুনে সংস্থাটির কার্যক্রমের বিশ্লেষণে জনস্বার্থমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হবার বৈশিষ্ট নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেন।

২০০৭ সালে দেশটির সাবেক এসপিডি রাজনীতিবিদ ও প্রকাশক আলব্রেচট মুলার বার্টলসম্যান ফাউন্ডেশনকে একটি ‘গনতন্ত্র বিরোধী প্রতিষ্ঠান’ বলে আখ্যায়িত করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে, দেশটির স্বনামধন্য সাংবাদিক ও লেখক টমাস শূলার (Schuler) তাঁর প্রকাশিত Bertelsmann’s Republic of Germany: A Foundation Sets Policy-বইটিতে ক্ষমতাশীন ও নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকদের পরামর্শদাতা হিসেবে বার্টলসম্যান ফাউন্ডেশনকে ’অগনতান্ত্রিক’ বলে স্বীকৃতি দেন এবং এর কর্মকান্ডে অস্বচ্ছতার সমালোচনা করেন।

২০১২ সালে ‘জার্মান শিক্ষক সমিতি’ সভাপতি জসেফ ক্রুজ শিক্ষাখাতে সংস্থাটির বিতর্কিত প্রভাবের সমালোচনা করে বলেন যে, সংস্থাটি অনুনমোদিত পন্থায় নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতাকে সমালোচনার আওতায় এনে তার ভাবম‚র্তি ক্ষুন্ন করার মত বিকৃত কর্মাকান্ডে জড়িত।

এমন আরো অনেক ব্যাপারেই বার্টলসম্যানের ভ‚মিকা প্রশ্নবিদ্ধ এবং সমালোচিত দীর্ঘ সময় যাবত। এতো বিতর্কিত একটি সংস্থা কতটা স্বচ্ছ ও নিরেপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পারে আর তাদের সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য কতটা গ্রহনযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে তা বুঝে নেয়া বিশেষ কষ্ট সাধ্য নয়। দুঃখের বিষয়টি হচ্ছে বিএনপি-জামাত নেতৃত্বাধীন বিরোধী রাজনৈতিক জোট এই প্রতিবেদনটিকে শুধু গ্রহন করেনি বরং সেটিকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীতার নামে অপপ্রচারের হাতিয়ার করে মানুষের মাঝে বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রতি একটি নেতিবাচক মনোভব সৃষ্টি করে ক্রমান্বয়ে সেটি নানা ক্ষেত্রে সংক্রামিত করছে।

জনগনের কাছ থেকে স্বাধীনতা সপক্ষের শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে ‘৭১-এর সেই দেশদ্রোহীদের নিয়ে তারা আবার ক্ষমতায় বসার পায়তারা করছে। তাদের এই ক্ষমতা অধিগ্রহনের উদ্দেশ্য জনস্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত নয় বরং তাদের নেতাদের রাষ্ট্রদোহীতার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হবার প্রতিশোধ নেয়া এবং দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বেগম জিয়া কে মুক্ত করা ।

বিগত সময়ে করা নিজেদের নানা অপকর্মের জন্য যখন তাদের দলীয় প্রধানকেই কারাগারে যেতে হয়েছে তখন অন্যরাও যে ছাড় পাবে না একথাটি নিশ্চিত জেনেই তারা এমন ঘৃন্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। তাদের এই অপচেষ্টার ষড়যন্ত্র প্রকৃত পক্ষে সরকার বিরোধী নয় বরং সরকার ব্যবস্থার নেতৃত্বে থাক রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে। মানুষ যাকে বেশি ভালোবাসে তার সামান্য অপরাধে মনক্ষুন্নও বেশি হয় বলেই হয়ত আওয়ামীলীগের মত দলটির প্রতি মানুষের এই নেতিবাচকতার মাত্র প্রবল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নস্যাত করতে সে সময় ঘরের শত্রু বিভীষনের দল তাদের বিদেশী মিত্রদের সাথে আঁতাত করেছিলো কিন্তু এদেশের মানুষ জাতির জনকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগকে সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী করে তাঁর নেতৃত্বে ঠিকই স্বাধীনতা অর্জন করে। যার ফলে জনতার কাছে অদ্বিতীয় নেতৃত্ব হিসাবে বিবেচিত বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ একটি ক্ষমতালোভী চক্রের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের আশাকে দুরাশায় পরিনত করেছিলো। আর তাই সেই একই পন্থায় বিদেশি দোসরদের চক্রান্তের নীলনক্সায় তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে এবং পরবর্তীতে তাঁর আদর্শের অনুসারী জাতীয় চার নেতাকে কারারুদ্ধ অবস্থায় নির্মম ভাবে হত্যা করে। আসলে তারা চেয়েছিলো স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদানকারী আওয়ামী ঘরানার নেতৃত্ব যাতে আর কোনো দিন এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে না পারে।

কিন্তু অতীতে তাদের এমন প্রতিটি প্রচেষ্টাই একটা পর্যায়ে এদেশের গনতন্ত্রমনা মানুষের প্রবল প্রতিরোধের মুখে নতি স্বীকার করে। অতীতের ভুল শুধরে নিয়ে নিজেদের বিজয় স্থায়ী করতে এবার তাই এক নতুন ষড়যন্ত্রের নীকনক্সা রচনা করেছে তারা। এদেশের মানুষের সাথে আওয়ামীলীগের যে ঐতিহাসিক ঐক্যের বন্ধনের জায়গাটি ঠিক সেখানে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে তারা প্রথমেই সাধারন মানুষের মাঝে আওয়ামীলীগের প্রতি একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের গ্রহনযোগ্যতা নষ্ট করে দিতে চাইছে যাতে এবার আর তারা জন সমর্থনের বলে উঠে দাড়াতে না পারে, আর কোনো দিন যেন স্বাধীনতা সপক্ষের শক্তির সাথে জনতার মহাঐক্য গড়ে না উঠে। তবেই না তাদের সুখ নিদ্রা নির্বিঘ্ন হবে।

সেই নীলনক্সা অনুসারে তারা আওয়ামী সরকারকে স্বৈরাচারি ও অগনতান্ত্রিক সরকার হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারনা শুরু করে। তাদের এই গুজবকে সত্যায়িত সত্যে পরিনতে করতে এবং মানুষের মাঝে গ্রহনযোগ্যতা দিতেই আসে বার্টালসম্যানের স্বৈরতান্ত্রিক বাংলাদেশ তত্তে¡র সনদপত্র। শুরু হয় জনমনে নেতিবাচকতার দীক্ষা প্রচার।  তবে এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে মানুষের মগজ ধোলাই-এর এই কুটকৌশলটি তারা বেশ ভালই রপ্ত করেছে যার প্রভাবে এদেশের সচেতন ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ সরকার বিরোধী নেতিবাচকতায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছে। আর তাই যৌক্তিক ভাবেই এই সংস্থার প্রতিবেদনটিকে সেই নীলনক্সার একটি বিশেষ অংশ হিসেবে উপেক্ষা করতে পারছি না।

এই নেতিবাচকতার প্রভাব এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে সরকারের প্রতিটি কাজেই মানুষ এখন কোনো না কোনো দোষ খুজে বের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার আবারো সেই কুচক্রী মহলের স্বপ্নে হানা দিয়েছে। দেশকে উন্নয়নের অব্যাহত ধারায় পরিচালনার পাশাপাশি এদেশের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তারা যুদ্ধাপরাধী ও জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করেছে। মাত্র কয়েক বছরে তথ্য ও প্রযুক্তি ভিত্তিক উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি করে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার যে সম্ভাবনা বর্তমান সরকার সৃষ্টি করেছে তার বাস্তবায়ন স¤পন্ন হলে আবারো তারা যে এদেশের মানুষের কাছে অদ্বিতীয় নেতৃত্ব বলে বিবেচ্য হবে তা সেই অপশক্তি বুঝতে পারছে।

সে জন্য বিভীষনেরা বিদেশি মিত্রদের সহযোগিতায় আরো একবার মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে স্বাধীনতা সপক্ষের শক্তিকে মানুষের কাছে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে। সেটি করতে পারলে যেমন তাদের প্রভুদের ‘৭১ সালের সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ আসবে তেমনি এই দেশের সম্ভাবনাকে শূষে নিয়ে আত্মতৃপ্তি অর্জনও সম্ভব হবে। আর এই ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বে আছে সেই ‘৭১ এর রাজাকার ও ‘৭৫ এর খুনিদের অনুসারী বর্তমান প্রজন্ম।

১৯৭১ সালে এদেশের মানুষ যে আদর্শের নেতৃত্বের সাথে ঐক্য গড়ে দেশকে স্বাধীন করে ছিলো আজ সেই স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির সাথে ‘৭১ এর প্রজন্ম হিসেবে আমদের আরো একবার ঐক্য গড়তে হবে, রুক্ষে দিতে হবে দেশদ্রোহী, দুর্নীতিবাজদের সকল ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রযন্ত্রের অগ্রনী গতিকে বহাল রাখতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধাশালী আধুনিক রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। আর যদি আমাদের কোনো অবিবেচিত অবমূল্যায়নের কারণে সেটি না হয় তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্তমান প্রজন্ম পরিচিত হবে জাতীয় বেঈমান হিসেবে।

লেখক : সাংবাদিক

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!