বিমানবন্দরে ইলিয়াস কাঞ্চনের ব্যাগ স্ক্যানিংয়ের ভিডিও ভাইরাল

ঢাকা : ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ব্যাগ স্ক্যানিংয়ের একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) নানা তর্ক-বিতর্কের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি প্রকাশ পায়। যা গেল মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিমানবন্দর টার্মিনালের সিসি ক্যামেরাতে ধারণ করা হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন একটি ট্রেতে তার ল্যাপটপ ও মোবাইল রাখছেন। অপরটিতে একটি কালো ব্যাগ রাখেন। পরে স্ক্যানিং মেশিনে ল্যাপটপের ট্রে ও ব্যাগের ট্রেটি স্ক্যানিং মেশিনে প্রবেশ করানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরে কালো কোর্ট পরা একজন নিরাপত্তা কর্মী কালো ব্যাগটি নিয়ে আসেন। এ সময় ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীর বেশ কিছুক্ষণ কথোপকথন হয়। পরবর্তীতে তিনি সেই কালো ব্যাগটি নিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এলাকা ত্যাগ করেন।

যদিও পরে ইলিয়াস কাঞ্চন গণমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, ‘ভুলক্রমে অস্ত্র ব্যাগে নিয়েই আমি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলে গিয়েছিলাম। ল্যাপটপ ব্যাগের ভেতরে অস্ত্রটা ছিল, যেটা আমার মনে ছিল না। বিমানবন্দরে প্রাথমিক নিরাপত্তা পরীক্ষার সময় আমার সঙ্গে থাকা সেই অস্ত্রটি স্ক্যানারে ধরা পড়েনি।’

যদিও বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ৯-এমএম পিস্তল এবং ১০ রাউন্ড গুলি ধরা না পড়ার ঘটনায় ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষয়ে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজন স্ক্যানার অপারেটরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় দাবি করা হয়, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পিস্তল থাকা ব্যাগসহ নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে যাওয়া নিয়ে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণই অসত্য।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন পিস্তল ও গুলি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের স্ক্যানারে ধরা না পড়ার প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলছেন যে, ‘ব্যাগে থাকা লাইসেন্স করা পিস্তলটি বাসায় রেখে আসতে ভুলে যাই। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের প্রবেশ গেটে ব্যাগটি তল্লাশি করা হয়।’

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘নভোএয়ারের বোর্ডিং কাউন্টারে এসে ব্যাগে থাকা পিস্তলের কথা মনে পড়ে। স্ক্যানিং মেশিনে পিস্তল ধরা না পড়ায় আমি অবাক হই। এ ব্যাপারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। তাৎক্ষণিক শাহজালাল কর্তৃপক্ষ আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে।’

তিনি এও বলেছিলেন, ‘প্রথম স্ক্যানার পার হওয়ার পরে মনে পড়ায় আমিই তাদের কাছে গিয়েছি। কেন স্ক্যানারে এ বিষয়টি ধরা পড়েনি তা নিয়ে আমি তাদের কাছে অভিযোগ করেছি।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘কিন্তু সত্য হচ্ছে এই যে, ঘটনার বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে সংবাদ মাধ্যমে অন্যায়ভাবে একের পর এক অসত্য কথা বলছেন। প্রকৃতপক্ষে ওইদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যা ঘটেছে তা হলো- ইলিয়াস কাঞ্চনের ল্যাপটপের ব্যাগে থাকা পিস্তল ও গুলি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের এন্টি হাইজাকিং পয়েন্টে স্ক্যানিং করার সময় তা মেশিনে শনাক্ত হয়।’

সেখানে আরও বলা হয়, ‘বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি তার ভুল স্বীকার করেন। তখন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা তাকে বিমানবন্দরের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিস্তলটি বহন করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি সেই স্থান থেকে ফেরত চলে যান। যদিও পরবর্তীতে তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে বিমানে চেপে চট্টগ্রাম গমন করেন।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিকেলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর প্রধান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিমান মন্ত্রণালয় মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। যে ভিডিও ফুটেজটি বের হয়েছে তা জনগণের সামনে বের করে আনা হোক। তাহলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে। তখন প্রমাণ হবে কে সত্য বলছে, আর কে মিথ্যা।’

একে অপরকে যখন দোষারোপ চলছে, ঠিক তখন সেদিনের স্ক্যানিংয়ের ভিডিও প্রকাশ হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই