• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের তথ্য দুদকে


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৭, ২০২০, ০৩:৪০ পিএম
বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের তথ্য দুদকে

ঢাকা : ব্যক্তিমালিকানাধীন আড়াই হাজার বিলাসবহুল গাড়ির মালিকের তথ্য এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে।

সম্প্রতি  বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এসব গাড়ির মালিকদের বিস্তারিত তথ্য দুদকে জমা দিয়েছে। এসব গাড়ি আমদানিতে দুর্নীতি হয়েছে কি না এবং গাড়ির মালিকদের আয়-ব্যয়ের সংগতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই এসব তথ্য নেওয়া হয়েছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিআরটিএতে নিবন্ধন করা ২ হাজার ৫০০ সিসি বা তার বেশি অশ্বশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি বা জিপগাড়িগুলোর তথ্য চেয়ে বিআরটিএকে চিঠি দেয় দুদক। সে সময় তথ্য না দেওয়ায় একই বছরের ৩০ অক্টোবর পাঁচ বছরে নিবন্ধিত বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য চেয়ে আবার চিঠি দেয় দুদক। ওই চিঠিতে পাঁচ দিনের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, আড়াই হাজার বা তার বেশি সিসি গাড়ির ব্র্যান্ডের নাম, গাড়ির মালিকের নাম ও ঠিকানা, ইঞ্জিন ও চেসিস নাম্বার, মডেল ও আমদানির তারিখ, গাড়ির নিবন্ধন নম্বর ও তারিখ, গাড়ির দাম, ভ্যাটসহ অন্যান্য ট্যাক্সের তথ্য দুদককে দিতে বলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দুই দফায় দুদকের কাছে নিবন্ধনভুক্ত বিলাসবহুল এসব গাড়ির তালিকা দেয় বিআরটিএ।

জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে অভিযোগ আসে মূল্য কম ঘোষণা দিয়ে খালাস হচ্ছে বিলাসবহুল গাড়ি। আমদানি করা গাড়ির প্রকৃত মূল্য পরিশোধ করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। আর এসবে দুর্নীতি করে গাড়িগুলো ক্রয় করা হচ্ছে। এমনকি অনেক বিলাসবহুল গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধেও রয়েছে শুল্ক ফাঁকিসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। যার সূত্র ধরে কমিশন একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে। এরপরই অনুসন্ধানের জন্যই বিআরটিএকে চিঠি দেয় কমিশন।

শুধু তা-ই নয়, কার্নেট ডি-প্যাসেজ সুবিধার আওতায় বিদেশ থেকে আসা বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ি ভুয়া রেকর্ডপত্রের ভিত্তিতে বিআরটিএতে নিবন্ধন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আসে।

কার্নেট ডি-প্যাসেজ এমন একটি দলিল, যা একজনকে গাড়িসহ তার নিজ দেশ থেকে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রমের অনুমতি দেয় এবং এতে শুল্ক এড়ানো যায়। মূলত এটি একটি প্রতিশ্রুতি যে একজন নিজ দেশের বাইরে যাওয়ার সময় গাড়িটি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। অন্যথায় বড় ধরনের দণ্ডের ঝুঁকি থাকে।

দুদকের চাহিদা অনুযায়ী গেল পাঁচ বছরে নিবন্ধন হওয়া ২ হাজার ৪৪০টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য দিয়েছে বিআরটিএ। এসব গাড়ির ৭০ ভাগ মালিক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী আর ৩০ ভাগ গাড়ির মালিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তি।

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা তারেকুজ্জামান রাজিবের বিলাসবহুল একটি গাড়ি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ফলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদের মাধ্যমে যেসব বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য পাওয়া যাবে, সেটার সত্যতা মিললেই কমিশন গাড়িগুলো জব্দ করবে। এমনকি গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও কার্পণ্য করবে না কমিশন।

বিলাসবহুল গাড়ির তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (অপারেশন) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘বিলাসবহুল গাড়িগুলোর বিষয়ে কোনো অসংগতি থাকলে দুদক সেটি নিয়ে কাজ করবে। আমাদের কাছে তালিকা চেয়েছিল, আমরা সেই তালিকা দিয়েছি।’

দুদকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা রাস্তায় হরহামেশায় দেখি বিলাসবহুল গাড়ি চলছে কিন্তু এগুলোর মালিক কারা সেটা রাষ্ট্রের জানা প্রয়োজন। আসলে এগুলোতে সরকার ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিনা কিংবা অবৈধ সম্পদের মাধ্যমে এগুলো কেনা হচ্ছে কিনা সেটাও রাষ্ট্রকে জানতে হবে। তাই দুদকের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘আমরা এখন বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাইবাছাই করে দেখব। এখানে কোনো অসংগতি পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি কোনো গাড়ির মালিকের তথ্যে গরমিল পেলে তাদের সম্পদের হিসাবও অনুসন্ধান করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!