• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশাল শোডাউনের পরিকল্পনা, সঙ্গে থাকবে বিএনপিও


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১১, ২০১৮, ০৯:২৩ পিএম
বিশাল শোডাউনের পরিকল্পনা, সঙ্গে থাকবে বিএনপিও

ঢাকা: সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ ডেকেছেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ মহাসমাবেশের মাধ্যমে বিশাল শোডাউন করতে চান তিনি। এ সমাবেশ থেকে সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হবে। এজন্য হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে রাষ্ট্রপতির।

জানা গেছে, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত থাকবেন।

ড. কামাল হোসেনের সাম্প্রতিক ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শাসক দলের মন্ত্রী-এমপিরা। তাদের অভিযোগ, দেশের শীর্ষ এই আইনজীবী সরকারের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা বলেন, ড. কামাল হোসেনরা এ ষড়যন্ত্রে মার্কিনিদের সঙ্গে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সব দাবি মেনে নেয়ার পরও তারা কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর করে সরকার ফেলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মত্ত। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর একটি বাসায় তারা গোপন বৈঠকেও মিলিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শাসক দলের মন্ত্রী-এমপিরা।

তবে এসব অভিযোগ আমলে নিতে নারাজ বর্ষীয়ান আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে তিনি সরকারের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলার অর্থ এই নয় যে, আমি একজন ষড়যন্ত্রকারী। কিছু বললেই তারা (সরকার) সবখানে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খুঁজে বেড়ান।

এটা তাদের সীমাবদ্ধতা। মানুষ পরিবর্তন চায়। ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ হোক তা চায়। নিরাপদ সড়ক চায়। আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ভোট হোক- মানুষ তা চায়। এখানে একজন ব্যক্তি বা একটি দল কি চায় তা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, মানুষ কি চায়। তিনি বলেন, আমরা মানুষের এই চাওয়াটাকে সংগঠিত করতে সারা দেশে নামব। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করব।

সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ করারও নির্দেশ দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবম মোস্তফা আমিন শুক্রবার বলেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা মহাসমাবেশ করব। এজন্য অনুমতি চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। ড. কামাল হোসেন এতে সভাপতিত্ব করবেন। বি. চৌধুরী, মির্জা ফখরুলসহ জাতীয় নেতারা মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। আমরা সরকারের কাছে সংলাপে বসার আহ্বান জানাব। এজন্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করব।

এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাসায় নৈশভোজে অংশগ্রহণ, সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শাব্লুম বার্নিকাটের উপস্থিতিতে সরকারবিরোধী কথাবার্তাসহ সাম্প্রতিক ভূমিকায় ড. কামাল হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ শাসক দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা। বিশেষ করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ড. কামাল হোসেনের সরকারবিরোধী বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়ছেন শাসক দলের মন্ত্রী-এমপিরা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে ‘কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশের মালিক জনগণের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে স্বৈরশাসনকে বিদায় নিতে হবে বা দেশ ছাড়তে হবে। তা না হলে আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হতে হবে। এ ব্যাপারে গ্যারান্টিও দিতে পারি। তিনি বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, এ দেশের জনগণ কোনোদিন অন্যায় মেনে নেয়নি। তারা পরিবর্তন আনেই। দ্রুত এ সরকারকেও বিদায় নিতে হবে। তাদের বিদায় নেয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।

ড. কামাল হোসেন এ সময় আরও বলেন, এ দেশ আমাদের। যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম তা বাস্তবায়ন সম্ভব। ’৭১-এ কেউ কি ভেবেছিল যে আমরা নয় মাসে স্বাধীন হব। এখন বলা হচ্ছে, স্বৈরশাসন আমাদের শেষ করে দিচ্ছে। জনগণকে উপেক্ষা করে গণতন্ত্র হয় না। তিনি ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বলেন, গণতন্ত্র রক্ষায় ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। 

ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে ঈদের ছুটিতে সমমনাদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০০৮-এ জাতি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তাই আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এ জাতি। তিনি বলেন, যে যতটুকু পারে তাকে সে উদ্যোগ নিতে হবে। জনগণকে বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশকে আইনের পথে নিয়ে আসার ব্যাপারে সবাইকে বোঝাতে হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজে অবশ্যই সাড়া পাওয়া যাবে।

ড. কামাল হোসেন সম্প্রতি স্কুল শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনের উদাহরণ টেনে বলেন, ছাত্ররা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে দেশ চালাতে হয়। তিনি বলেন, এ দেশ কোনো দল, ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা পরিবারের নয়। দেশের মালিক জনগণ। সবাই দেশের মালিক। তাই গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের মালিকদের সারা দেশে প্রচার-প্রচারণায় নামতে হবে। দেশ রক্ষায় জনগণকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। উদ্যোগ জনগণকেই নিতে হবে।

সোনালীনিউজ/জেএ  

Wordbridge School
Link copied!