• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব ঐতিহ্যময় বাংলাদেশ


নীল বুলবুল এপ্রিল ১৩, ২০১৭, ১০:৪৮ পিএম
বিশ্ব ঐতিহ্যময় বাংলাদেশ

ঢাকা: বাংলাদেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সম্পদ, জীবন যাপনের বৈচিত্র আর নানা ধর্মবর্ণের মানুষের অপূর্ব সমন্বয়ই বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এরপরেও এখানে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন। আছে দর্শনীয় স্থান, উচ্চভূমি থেকে নিম্নভূমি। সাগর থেকে বিস্তীর্ণ সমতলভূমি।

বাংলাদেশের রূপে মুগ্ধ হয়েই প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন বিখ্যাত সব পর্যটক। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের সন্ধান পেয়েছেন তারা। এসবই এখন আমাদের ঐতিহ্যের সম্পদ, সমৃদ্ধ বর্তমান ও অতীত।

আমাদের আছে যেমন বিশ্বের অনন্য ও অসাধারণ জীববৈচিত্র্যবহুল সুন্দরবন, তেমনি আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতও। আছে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোও; যা বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও স্বীকৃত। আর এর সঙ্গে রয়েছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।

বিশেষত, বাঙলার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে নানা উৎসব-পার্বণ। এর মধ্যে বাংলা নববর্ষ অন্যতম। পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। এ দিনটি ঘিরে উৎসবের ঢেউ লাগে পুরো বাংলায়। আর এ উৎসবের অনিবার্য অনুসঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সংহতি, বিভিন্ন সম্প্রদায়, ধর্ম, লিঙ্গভেদে দেশের মানুষের ঐক্য তুলে ধরে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা

মঙ্গল শোভাযাত্রা: বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের সকালের অন্যতম আকর্ষণ এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে ফুটে ওঠে বাঙালির সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের পরিচয়। গেল বছরের নভেম্বর মাসে এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকেই বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো।

এ সম্পর্কে ইউনেস্কো থেকে বলা বলেছে, বাংলা বছরের প্রথম দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল এই শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে অপশক্তি দূরে থাকবে এবং উন্নত ভবিষ্যৎ পাওয়া যাবে। এই শোভাযাত্রা বাংলাদেশের মানুষের লোক-সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে অপশক্তির বিরুদ্ধে তাদের লড়াই করার ক্ষমতা এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার সাহসকেও প্রকাশ করে। 

ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে বলা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা গণতন্ত্রের জন্য সংহতি, বিভিন্ন সম্প্রদায়, ধর্ম, লিঙ্গভেদে দেশের মানুষের ঐক্যও প্রকাশ করে। 

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে সামরিক শাসনে হতাশ ছাত্রসমাজ একটি উন্নত ভবিষ্যতের চিন্তায় বাংলাদেশের মানুষকে একস্থানে জমায়েত করতে চেয়েছিল। সেই থেকে শুরু হয় মঙ্গল
শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের ভোরে শত শত মানুষ উৎসাহভরে ভিড় জমান।

অপরূপ সুন্দরবন

সুন্দরবন: বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী প্রশস্ত বনভূমি সুন্দরবন। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। বিশ্বের অনন্য ও অসাধারণ জীববৈচিত্র্যবহুল বনাঞ্চল সুন্দরবন বাংলাদেশের গর্ব হয়ে সসম্মানে দাঁড়িয়ে আছে।

১৯৯৭ সালে এই অনন্য বনাঞ্চলকে জাতিসংঘের শিক্ষাবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি–বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়। তবে সুন্দরবন সংলগ্ন রামপাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজার। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসেন। দীর্ঘতম এই সৈকতে গেলে দেখা যায় অভাবনীয় দৃশ্য। হাজার হাজার নারী-পুরুষ শিশুর অপূর্ব মিলনমেলা। তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুখরিত সাগর তীর। প্রকৃতি আর মানুষে এক অপূর্ব মিলনমেলা।

নয়নাভিরাম মহাস্থানগড়

পুন্ড্রনগর: বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী মহাস্থানগড়ের নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গেছে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে মহাস্থানগড় সুমহান ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

১৮৭৯ সালে প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম। পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী বর্তমানের রাজশাহী, দিনাজপুর, সিলেট এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে মহাস্থানগড়ে মানববসতির চিহ্ন পাওয়া যায়।

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেয়েছে প্রাচীন বাঙলার জনপদ পুন্ড্রনগর বা মহাস্থানগড়।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!