• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বসন্ত বাতাসে প্রাণের উৎসব

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯, ১১:৪৮ পিএম
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ

ঢাকা : রাজধানীর শাহবাগের বাতাসে মৌ মৌ করছে দৃষ্টিনন্দন রঙিন ফুলের সৌরভ। বুধবার ছিল ১ ফাগ্লুন, বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দুই বিশেষ দিনে নিজেদের রাঙাতে কতোই না আয়োজনের কথা ভাবেন যুগলরা।

ভালোবাসা শব্দটি অল্প পরিসরের হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক। প্রিয় মানুষকে শুধু ভালোবাসি বলেই অনেক না বলা মনের অনুভূতি অবলীলায় প্রকাশ করা যায়। হৃদয়স্পর্শী এই শব্দটিও তাই হয়তো রক্তরাঙ্গা লাল রঙ্গের আভায় সেজে উঠে তাকে ব্যক্ত করতে। খুব কাছের মানুষটিকে ভালোবাসি বলতে কোনো নির্দিষ্ট দিন কিংবা ক্ষণের প্রয়োজন পরে না। তবে ভালোবাসার মানুষটিকে একটু বেশি আলাদাভাবে তার উপস্থিতি জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা প্রকাশের দিনটিকে উদযাপন করতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব। তাই তো আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে আয়োজনের কোনো কমতি নেই। প্রতি বছরের মতো এবারো নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি।

তবে কোন দেশে কিভাবে ভালোবাসা দিবস পালিত হয় তা নিয়ে আজকের আয়োজন-

বাংলাদেশ : বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালিত হচ্ছে নব্বইয়ের দশক থেকে। এখানে ফুল, কার্ড এবং বিভিন্ন ধরনের গিফট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এই দিনটিতে কেন্দ্র করে ফুল এবং গিফটের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকে। অন্যান্য দিবসগুলোর মতো ভ্যালেন্টাইন্স ডে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস বয়ে আনে। ছুটির দিন না থাকলেও এই দিনে সবখানেই বিশেষ আয়োজন থাকে। অনেকেই প্রিয়জনকে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই দিনটিকেই বেছে নেয়।

এ আয়োজনকে আরও রাঙিয়ে দিতে শাহবাগের ফুলের বাজারে নানান রংয়ের দৃষ্টিনন্দন ফুলের ঘটিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বসন্তকে বরণ করে নিয়েছে নগরবাসী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় গতকাল বুধবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে দিনব্যাপী বসন্ত উৎসব। জাতীয় বসন্তবরণ উদযাপন পরিষদ এ আয়োজন করেছে। উৎসবকে ঘিরে নানা বয়সের মানুষের ভিড় করেছে বকুলতলায়।

ধ্রুপদী সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। একক আবৃত্তি ও একক সংগীতের মধ্য দিয়ে চলে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। এছাড়া, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে দলীয় নৃত্য ও আদিবাসীদের নাচ ছিল। এছাড়াও একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, বেলায়েত হোসেন ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। দলীয় পরিবেশনায় থাকছে সুরতীর্থ, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ ও বাফা’র নানা পরিবেশনা।

আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানজার আহমেদ সুইট জানান, বকুলতলায় সকাল ৭টা থেকে সকাল ১০টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বসন্ত উৎসব চলবে। ২৪ বছর ধরে আমরা এই আয়োজন করে আসছি।

বকুলতলা ছাড়াও পুরনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ও উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত মঞ্চে একযোগে অনুষ্ঠান চলে।

বাঙালি সবসময়ই উৎসবপ্রেমী। তাই এই বিশেষ দিনকে সামনে রেখে বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফুলের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। ফুলময় শাহবাগে ফুল সংগ্রহে আসছেন ক্রেতারা। সেসব ফুলেই সৌরভ ছড়িয়েছে শাহবাগে। কিনছেন নানান ফুল, তবে চড়া দাম দেখে ক্রেতারা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলছেন, ‘শাহবাগে ফুলের বাজারে লেগেছে আগুন’।

প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানাতে সুনীল তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছিলেন ১০৮টা নীলপদ্ম কিন্তু বর্তমান সময়ে ভালোবাসা দিবসে নীলপদ্ম পাওয়া না গেলেও দৃষ্টিনন্দন নানা ফুলের সমাহার চোখে পড়ছে শাহবাগে। ফাগ্লুনের শুভেচ্ছা জানাতে ফুল সংগ্রহে জমজমাট এখন শাহবাগের এই বাজার। এ ছাড়া আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষেও চলে ফুল বেচাকেনা। দিবস দুটিকে কেন্দ্র করে কয়েকগুন বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা।

দেশে দেশে ভালোবাসা দিবস

কানাডা : কানাডায় ভালোবাসার বিশেষ দিনটি বেশ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। সারা দেশে বল ড্যান্স এবং পার্টি থাকে। এদিন স্বামী-স্ত্রীকে, স্ত্রী-স্বামীকে, প্রিয়জন-প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানায়। গোলাপের প্রাধান্যই এখানে বেশি থাকে। এরপর চকোলেট, কার্ড, গিফট তো আছেই।

অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ায় অনেকটা একই ধাঁচে উপহারের আদান-প্রদান হয়। এক জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ছেলেরা ভালোবাসার ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি উদার। এ দিন উপলক্ষেও ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি উপহার কেনেন।

আমেরিকা : ১৯ শতাব্দীতে আমেরিকায় প্রথম ভালোবাসা দিবস ধারণাটির জন্ম হয়। ১৮৪৭ সালে পুরো দেশে ভালোবাসা দিবস পালিত হয়। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে কার্ড এবং গোলাপই ছিল ভ্যালেন্টাইন্স ডের মূল উপহার। ১৯৮০ সালের দিকে ডায়মন্ড কোম্পানিগুলো ভ্যালেন্টাইন্স ডে প্রমোট করা শুরু করে। সেই থেকে জুয়েলারি চলে আসে প্রচলিত গিফটের তালিকায়।

এস্তোনিয়া: বিশ্বের নানা দেশের মতোই এস্তোনিয়াতে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। তবে সেখানে তা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য জন্য। এ দিনটিতে সেখানে মূলত বন্ধুরা একে অন্যকে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। এতে তা শুধু ভালোবাসা দিবস নয় বরং বন্ধুত্ব দিবসে পরিণত হয়। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও একে অন্যকে তাদের শুভেচ্ছা জানায়।

ডেনমার্ক: ডেনমার্কে আগে ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে প্রিয়জনকে লাল গোলাপ নয় বরং সাদা ফুল দিয়ে এদিন শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনেকেই তার মনের মানুষকে একটি বেনামি চিঠি পাঠায়, যেখানে তারা কোনো মজার কবিতা বা রোমান্টিক বাণী লিখে দেয়। এ উপহার গ্রহীতা যদি সঠিকভাবে প্রেরককে খুঁজে পায় তাহলে তারা বছরের পরবর্তী সময়ে ইস্টার এগ বিনিময়ের প্রতিজ্ঞা করে।

ঘানা: ঘানায় ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালিত হয় অন্য দেশগুলোর তুলনায় ভিন্নভাবে। দেশটিতে প্রচুর চকোলেট উৎপাদিত হয়। এ কারণে অধিবাসীরা চকোলেটকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে এ দিনটি পালন করে। ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে তারা একে অন্যকে চকোলেট উপহার দেয়। ২০০৭ সাল থেকে দেশটিতে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় চকোলেট দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

ফিলিপাইন: ভ্যালেন্টাইন্স ডে ফিলিপাইনে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় ভিন্নভাবে পালিত হয়। এ দিনটিতে সেখানে অসংখ্য জুটি বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে গণবিবাহের প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। আর এ কারণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকেই বহু মানুষ বিয়ের জন্য বেছে নেয়। এভাবেই তারা ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করে।

ব্রিটেন: ভালোবাসা দিবস ভ্যালেন্টাইন্স ডে ব্রিটেনের উল্লাস একটু বেশি থাকে। বলা হয়ে থাকে, ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে ব্রিটেন এবং ইতালির অবিবাহিত মেয়েরা সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠত। তারা বিশ্বাস করত, সূর্যোদয়ের পর প্রথম যে পুরুষকে তারা দেখবে সে অথবা তার মতোই কোনো পুরুষ এক বছরের মধ্যে তাদের জীবনসঙ্গী হবে।

এ ছাড়া অবিবাহিত মেয়েরা কাগজে পছন্দের ছেলের নাম লিখত। সেই কাগজ মাটির বলে পেঁচিয়ে পানিতে ফেলত। যে নামের কাগজ সবার আগে ভেসে উঠত, ধারণা করা হতো তার সঙ্গেই বিয়ে হবে মেয়েটির।

ফ্রান্স: ব্রিটেনের মতো ফ্রান্সের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ভ্যালেন্টাইন্স ডের জন্মকথা। তাই এখানেও উৎসাহ থাকে অনেক। ভালোবাসা দিবসে কার্ড উপহারের প্রথা শুরু হয়েছে ফ্রান্স থেকে। চার্লস নামের এক ব্যক্তি প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স কার্ড লেখেন। অভিজাত কার্ডে উপহার রীতি রয়েছে এখানে। কার্ড ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গিফট আদান প্রদানের রীতি রয়েছে এখানে।

চীন: চীনাদের নিজ সংস্কৃতিতে ভালোবাসার জন্য আলাদা একটি দিন আছে। চায়নিজ ক্যালেন্ডারে সপ্তম চান্দ্র মাসের সপ্তম দিনে থাকে এই বিশেষ দিনটি। দিনটিকে বলা হয় কী জি। অথবা ‘দ্য নাইট অব সেভেনস’। গতানুগতিক ভ্যালেন্টাইন্স ডে থেকে দিনটি অনেক আলাদা। এই দিনকে কেন্দ্র করে ফুল ছাড়াও চকোলেট, কার্ড আদান-প্রদানও চলে।

ভারত: ভালোবাসা দিবস নিয়ে নানা ধরনের আয়োজন থাকে। নানা ধরনের গিফটের মাধ্যমে ভালোবাসার আদান প্রদান হয়। শুধু প্রেমিক নয় বাবা-মা, ভাইবোন, বন্ধুদেরও ভালোবাসা জানানো হয় এই দিনে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!