• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বব্যাপী আড়ম্বরে মুজিববর্ষ উদযাপন হবে


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০২:২৪ পিএম
বিশ্বব্যাপী আড়ম্বরে মুজিববর্ষ উদযাপন হবে

ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে দেশ-বিদেশে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে বিশাল পরিসরে উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো। শুধু বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেই নয়, বছরব্যাপী নানা আয়োজনে মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে বিশ্বের ১৯৫টি দেশেও।

আগামী বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১০ জানুয়ারি শুরু হবে কাউন্টডাউন বা ক্ষণগণনা। আগে বাস্তবায়ন কমিটি জানিয়েছিল, ১০০ দিন আগে অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর জন্মশতবার্ষিকীর কাউন্টডাউন শুরু হবে।

পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যেদিন (১০ জানুয়ারি) ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন, সেই ঐতিহাসিক দিনটিকেই কাউন্টডাউনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা।

ঢাকায় আসছেন বিশ্বনেতারা : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতাদের ঢাকায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রায় ৩৮ জন বিশ্বনেতা ঢাকায় আসতে পারেন।

আমন্ত্রিত বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, ভুটানের রাজা জিগমে নামগিয়েল ওয়াংচুক প্রমুখ।

জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি জানিয়েছে, ঢাকায় সারা বছর ধরে অনুষ্ঠান হবে। বছরব্যাপী এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিশ্বনেতারা।

লন্ডন-নিউইয়র্কে কর্মসূচি : দেশের বাইরেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনে এসব কর্মসূচি পালিত হবে। লন্ডন, নিউইয়র্ক, টোকিও, দিল্লি মিশনে ব্যাপকভাবে কর্মসূচি পালিত হবে। লন্ডনের অ্যালবার্ট হলে ঘটা করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, কলাম্বিয়া ও লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

তথ্যচিত্র নির্মাণ-বই প্রকাশ : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তথ্যচিত্র নির্মাণ ও বই প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী বছর বাংলা একাডেমি থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্মসহ নানাদিক নিয়ে ১০০টি বই প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। বিশ্বের খ্যতনামা প্রকাশনা থেকে এসব বই প্রকাশ করা হবে। নানা ভাষায় অনূদিত হবে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মেমোরিয়াল লেকচার : আগামী বছর ১৭ মার্চ থেকে বছরব্যাপী মেমোরিয়াল লেকচারের আয়োজন করা হয়েছে। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি ও সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) যৌথভাবে এই মেমোরিয়াল লেকচারের আয়োজন করবে। বিষয়ভিত্তিক এই লেকচারে বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্বনেতা, বুদ্ধিজীবী, লেখক, অধ্যাপকরা অংশ নেবেন।

সঙ্গী হচ্ছে ইউনেস্কো : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ২৫ নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সংস্থার ৪০তম সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

তিনি জানান, ইউনেস্কো মহাসচিব অড্রে অজুলে এবং সাধারণ পরিষদের সভাপতি আল্টে সেনজিজারসহ বিভিন্ন কমিটি এবং কমিশনের চেয়ারপারসনরা পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।

ক্রিকেট আয়োজনে থাকছে বিসিসিআই : দেশের ক্রিকেটাঙ্গনও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করবে নানা আয়োজনে। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও (বিপিএল) ‘বিশেষ আসর’ হয়ে রূপ নিয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএলে’।

পাশাপাশি আগামী মার্চে এশিয়ান অল স্টার একাদশ ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজন করবে বিসিবি। এই আয়োজনে সরাসরি যুক্ত হতে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)।

বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলীর মাথায় নাকি একটি পরিকল্পনা এসেছে। একটি সিরিজ আয়োজনের চিন্তা করেছেন তিনি। মুম্বাইয়ে বোর্ডের বার্ষিক সভা শেষে বিসিসিআইয়ের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী ভারতীয় একটি পত্রিকাকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন। সেই পত্রিকাটির ভাষ্য অনুযায়ী, মুজিববর্ষ উপলক্ষে মার্চে আহমেদাবাদে বিশ্ব একাদশ বনাম এশিয়া একাদশের একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজন করা হবে।

ম্যাচের মাধ্যমেই উদ্বোধন করা হবে ৭০০ কোটি রুপি ব্যয়ে সংস্কার করে নবরূপ দেওয়া আহমেদাবাদের নতুন সরদার প্যাটেল স্টেডিয়ামে। ১ লাখ ১০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম।

জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার কর্মসূচির জন্য সিটি করপোরেশনের বাইরে ৫৩টি জেলা এবং মুজিবনগর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বেছে নেওয়া হয়েছে।

আমাদের জায়গা সিলেকশন হয়েছে, অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। মেশিনটি স্থাপন করা হয়নি। ১০ জানুয়ারির কোন সময় ক্ষণগণনা শুরু হবে, তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে এসেছিলেন, সেখানে (লন্ডন) বড় একটা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশের হাইকমিশনকে বলতে পারি। দিল্লিতে বঙ্গবন্ধু যখন আসেন তখন সেখানে সমাবেশ হয়, সেখানেও কোনো আয়োজন করা যায় কি না। বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ফিরে আসার পর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় একটি গান গেয়েছিলেন। তিনি এখনো বেঁচে আছেন, তাকে এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করা যায় কি না-এমন অনেক কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।

জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের আদর্শ আমরা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।

বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ, অর্জন, জীবন ও সংগ্রাম এবং আদর্শ সবার কাছে তুলে ধরতে বছরব্যাপী জন্মশতবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানাদিক তুলে ধরে চাই। দেশ-বিদেশে নানা কর্মসূচি পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।

তিনি বলেন, জন্মশতবার্ষিকী পালনে আমাদের ৮টি উপকমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে আলোচনা সভা, সেমিনার, স্মারক বক্তৃতা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, বই প্রকাশ ইত্যাদি রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রথমে আমাদের চিন্তা ছিল ৮ ডিসেম্বর থেকে ক্ষণগণনা শুরু হবে কিন্তু পরবর্তী সময়ে চিন্তা করলাম আমরা এটা যদি সারা দেশে বর্ণাঢ্যভাবে করতে চাই তাহলে আমাদের প্রস্তুতিমূলক কিছু কাজ প্রয়োজন আছে।

তিনি আরো বলেন, পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি।

১০ জানুয়ারি যেহেতু একটা ঐতিহাসিক দিন, বঙ্গবন্ধু ওইদিন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। এটি জাতির ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে ক্ষণগণনাকে সেই দিনটাতে শুরু করতে গিয়ে আমরা মনে করি, ঐতিহাসিক দিনের সঙ্গে একটা নতুন মাত্রা আমার যোগ করতে পারব। পুরো বিষয়টি সেভাবে চিন্তাভাবনা করে করা হয়েছে।

ক্ষণগণনার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে কামাল নাসের বলেন, ‘আমরা ঠিক করেছি, প্রতিটি জেলায় ক্ষণগণনার জন্য আলাদাভাবে একটি স্থাপনা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষণগণনাটি প্রধানমন্ত্রী ১০ জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন। ঢাকায় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউসহ মানুষের সমাগম ঘটে, এমন বিভিন্ন স্থানে ক্ষণগণনার ডিসপ্লে স্থাপন করা হবে।’

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে। বঙ্গবন্ধু এই মাটির সন্তান, কাজেই এটা (অনুষ্ঠান) কোনো রংচটা অনুষ্ঠানে রূপ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের মূল লক্ষ্য বছরব্যাপী অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। তাই আমাদের প্রত্যাশা, মুজিববর্ষ হবে রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের বছর।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। ইতোমধ্যে আগামী বছরকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে সরকার। মুজিববর্ষ উদযাপনে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ১৯৫টি দেশে অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের পাশাপাশি ঢাকার আয়োজনে যোগ দিতে আসবেন বিশ্বনেতারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!