• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
মৃত্যু ৮৩ হাজার ছাড়াল

বিশ্বে করোনার তাণ্ডব বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল


আন্তর্জাতিক ডেস্ক এপ্রিল ৯, ২০২০, ০১:১২ এএম
বিশ্বে করোনার তাণ্ডব বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল

ঢাকা : বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে করোনা। গড়ছে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড।

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বে একদিনে করোনায় প্রাণহানির সব রেকর্ড ভেঙেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৯৭০ জন। একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে ভারত ও ফ্রান্সও। রাশিয়ায় হঠাৎ বেড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। একদিনে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৭৫ জন। সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ। চলাচলে কড়াকড়ি ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে হংকং।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা রুখতে হলে পরীক্ষার হার বাড়াতে হবে। এ কারণে দৈনিক ২৫ হাজার করোনা পরীক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে পাকিস্তান। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

বাংলাদেশ সময় বুধবার (৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৪ লাখ ৫০ হাজার। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন তিন লাখ ৯ হাজারের বেশি মানুষ। আগের সব রেকর্ড ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রে একদিনেই ১৯৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৮৭৫ জনের, মোট আক্রান্ত ৪ লাখের বেশি। মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে নিউইয়র্ক শহরেও। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৮শ’র বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।

১৪মার্চ নিউইয়র্ককে কোভিড-১৯ এ প্রথম মৃত্যুর পর একদিনে এত মানুষের মৃত্যু আর ঘটেনি। এ রাজ্যে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার। শুধু নিউইয়র্ক শহরেই মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিউইয়র্কের গভর্নর কুমো মনে করছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতির চরমসীমা অতিক্রম করছেন তারা। পরিস্থিতি যেন অবনতির দিকে না যায়, সেজন্য সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিপর্যয়কর সময় পার করা ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই এখন ফ্রান্স। আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটি চতুর্থ। দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯ জন। ফ্রান্সের জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান জেরমি সলোমন আশঙ্কা করছেন সামনে আরও ভয়ানক দিন আসছে। তিনি বলেন, ফ্রান্স এখনও খারাপ অবস্থার চরম সীমায় পৌঁছেনি।

ফ্রান্সের মতো হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাজ্যও। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬ হাজার। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, তারা এ পর্যন্ত ৫৫ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছেন। এদের মধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও রয়েছেন। অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। তবে এখন চীনে পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে; যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

তবে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, এদের বেশিরভাগই বিদেশি নাগরিক। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮০২, মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৩৩ জন। বুধবার চীনের উহানে আড়াই মাস ধরে চলা লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন পর শহরটি প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে ওঠে।

জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়ালেও মৃতের সংখ্যা ২ হাজারের সামান্য বেশি, যা বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের চেয়েও কম। ইউরোপে সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়া ইতালি ও স্পেনে পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি ঘটছে। মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা ইতালিতে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬০৪ জনের।

মৃতের সংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্পেন আক্রান্তের সংখ্যাও দ্বিতীয়। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯০, মারা গেছেন ১৪ হাজার ৫৫৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫১০ জনের।

রাশিয়ায় হঠাৎ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৭৫ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৭ হাজার ৪৯৭, মোট মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের।

ইরানে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১২১ জন। দেশটিতে মোট মৃত্যু ৩ হাজার ৯৯৩, আক্রান্ত ৬৪ হাজার ৫৮৬ জন।

দক্ষিণ এশিয়ার ভারতে একদিনে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৩৫১ জন। এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি রোগী মহারাষ্ট্রের। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ জনে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাতটি এলাকাকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এখন ওই সব এলাকার ওপর রাজ্য সরকার নজরদারি শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। অন্যদিকে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪২টি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পাকিস্তানে একদিনে দুই শতাধিক নতুন রোগী পাওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪ হাজার ৩৫ জন। আক্রান্তের অর্ধেকই পাঞ্জাবের। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪ জন। মঙ্গলবার থেকে দেশটিতে পরীক্ষার হার বাড়ানো হয়েছে। দিনে অন্তত ২৫ হাজার জনকে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটি।

করোনাভাইরাস ঠেকিয়ে রেখে প্রশংসিত সিঙ্গাপুর সরকার এবার সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। বুধবার তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ আদেশ দেয়। সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত ১৪৮১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!