• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিয়ের দুই মাসের মাথায় স্বামী হারিয়ে আমি বিধ্বস্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৯, ২০১৯, ০৫:৪০ পিএম
বিয়ের দুই মাসের মাথায় স্বামী হারিয়ে আমি বিধ্বস্ত

বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে হত্যায় ঘটনায় নতুন করে ফের আলোচনায় এসেছেন মিন্নি। ঘটনার দিন সামাজিক যোগাযোগ ছড়িয়ে যাওয়া মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওতে স্বামীকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচাতে প্রাণপন লড়াই করতে দেখা যায়। এরপরই আলোচনায় চলে আসেন মিন্নি।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মিন্নি এক নম্বর স্বাক্ষী। ঘটনার পরপরই তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছি। শুক্রবার থেকে ১০ সদস্যের অস্থায়ী পুলিশ চৌকি বসানো হয় মিন্নির বাড়িতে।

গত শনিবার রিফাত সিসিটিভি ক্যামেররা দুটি ফুটেজ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। ওই ভিডিওতে মিন্নির ভূমিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে কলেজের প্রধান ফটক থেকে রিফাতকে নিয়ে মিন্নিকে বেরুতে দেখা যায়, পরবর্তিতে এদিক ও দিক তাঁকিয়ে ফের কলেজের রিফাত শরীফকে কলেজের ভেতর টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপরই সন্ত্রসীরা কলেজ গেট থেকে যখন রিফাতকে ধরে সামনের দিকে যায়, তখন মিন্নিকে পেছনে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে দেখা যায়। এর কয়েক সেকেন্ড পরেই নয়ন বন্ড ও অন্যরা যখন কিল ঘুষ লাথি দিতে শুরু করে তখনি মিন্নি ঝাঁপিয়ে পরে রক্ষা করতে শুরু করেণ এবং কুপিয়ে জখম করার সময় কখনো রিফাত ফরাজী, কখনো নয়ন বন্ডকে আগলে ধরে ফেরাতে চেষ্টা করেণ। কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যাওয়ার পর রিফাত শরীফ হেঁটে রিকশায় ওঠেন। মিন্নি তখন ব্যাগ ও জুতো তুলে রিফাতকে খুঁজতে সামনে এগিয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজের এমন দৃশ্য দেখার পর কেন মিন্নি রিফাতকে কলেজের ভেতর নিয়ে যাচ্ছিল, সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কেন স্বাভাবিক হাঁটছিল এবং শেষপর্যায়ে রিফাতের দিকে ছুটে না গিয়ে কেন জুতো ও ব্যাগ তুলতে গিয়েছিলেন এমন নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে শুরু করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে। 

এসব বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার দুপুরে মিন্নির বাড়িতে কথা হয় প্রতিবেদকের সঙ্গে। মিন্নি বলেন, তখন সোয়া দশটা হয়ত, রিফাত আমাকে বলে, আব্বু আসছেন, চলো তোমার সাথে দেখা করবে। আমি ওরে বলছিলাম আমার কাজ শেষ করে বের হই, ও আপত্তি করে বলে, বাবা গেটে অপেক্ষা করছে, আমি তখন ওর সাথে বের হই। গেটের বাইরে এসে দেখি এদিক ওদিক তাঁকায়ে দেখি ওর বাবা (রিফাতের) কোথাও নেই। তখন আমি বলি তুমি মিথ্যে বলেছ, চলো রুটিন নিয়ে আসি। আমি ওরে নিয়ে ভেতরে যেতে চাই’। 
ঠিক এই মুহূর্তেই ১০-১২ জন আমাদের ঘিরে ধরে ও রিশান ফরাজী ওর (রিফাতের) পথরোধ করে বলে, তুই আমার বাবা-মা তুলে গালি দিছিস? ও বলে না, তখন রিফাত ফরাজী এসে বলে আমার চোখের দিকে তাঁকিয়ে বল, ঠিক এই মুহূর্তে অন্য কয়েকজন বলে ওর কাছে অস্ত্র আছে এই ধর ধর বলে সামনে এগুতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে ওদের পেছনে হাঁটতে থাকি, পরে যখন আক্রমণ করে তখন প্রতিরোধে চেষ্টা করি’আমি হেল্প চাই অনেকের কাছে, কেউ আসেনি, ওরা চলে যাবার পর রিফাত নিজেই হেঁটে রিকশায় ওঠে, আমার পায়ের পাতা কেটে যাওয়ায় জুতো ছাড়া হাটতে পারছিলাম না, তখন জুতো পায়ে দেই, এসময় একজন আমার হাতে আমার ব্যাগটি তুলে দেয়, পরে আমি দ্রুত গিয়ে রিফাতের রিকশায় উঠে ওকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যাই’। 

মিন্নি বলেন, আমার কাছে ফোন ছিলোনা, দুজন ছেলে মোটরসাইকেলে আমাদের রিকশা ফলো করে যাচ্ছিল, আমি তাদের হেল্প চাইলে তারাও ধমকে দেয়’।
 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে মিন্নি বলেন, ‘কিছু লোক আছে যারে বিষয়টি ভিন্নদিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। আমি সবাইকে বলবো, বিয়ের মাত্র দুমাসের মাথায় স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা হতে দেখেছি। মানসিকভাবে আমি বিধ্বস্ত। আমার অনুরোধ, আমিতো আপনাদের মেয়ে বা বোন হতে পারতাম, তিনি অনুরোধ করে বলেন, আপনারা না জেনে কোনো মন্তব্য কইরেন না’।

তিনি বলেন, আমি চরম মানসিক নিপীড়ণে ভুগছি। কেউ আমাদের পাশে নেই, সবাই শুধু সমালোচনায় মুখর। আমি সবার সহযোগীতা চাই’। 

সিসিটিভি ফুটেজে মিন্নির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ কি-না বা এ বিষয়টি পুলিশের নজরে এসেছে কিনা জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, তদন্ত একটি স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেহেতু এটি একটি নারকীয় লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড এবং মিন্নি এ মামলার এক নম্বর স্বাক্ষী। কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে আমরা তদন্ত করছিনা। আমরা সার্বিক সব বিষয় নিয়েই তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে এ গুচ্ছি। ন্যায় বিচারের স্বার্থে সার্বিকভাবে যতটুকু বিষয় আমাদের সামনে আসছে আমরা সে বিষয় নিয়ে কাজ করছি’।  

এএস

Wordbridge School
Link copied!