• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
১০ জেলায় তলিয়েছে ২২ হাজার মৎস্যখামার

বুলবুলে ১৬ জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১২, ২০১৯, ০২:০৯ পিএম
বুলবুলে ১৬ জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

ঢাকা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দেশের ১৬ জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওইসব এলাকার ২ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল তালিয়ে গেছে। যার মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে রয়েছে আমন ধান। এ ছাড়া বুলবুলে ১০ জেলায় তলিয়ে গেছে প্রায় ২২ হাজার পুকুর, মাছের খামার ও চিংড়ি ঘের।   

তলিয়ে যাওয়া ফসলের মধ্যে আমন ধান ছাড়াও ছিল মসলা, ডাল, শীতকালীন সবজিসহ অন্যান্য ফসল। এর মধ্যে বিশেষ করে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, কাঁচামরিচ ও শাক রয়েছে বেশি অংশে। ঝড়ের সঙ্গে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে এসব ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত আমন নিয়ে এখন বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওইসব এলাকার কৃষক। কারণ কিছু এলাকায় প্রায় ২ থেকে ৫ শতাংশ আমন পেকেও গেছে। বাকি ধান এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে পাকবে। এমন পরিপক্ব ধানের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেকে হিমশিম খাবেন। অন্যদিকে সার্বিকভাবে চালের উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল মুঈদ বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। তা আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সবাইকে জানানো হবে। সকালে মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিং করবেন।

ফসলের পাশাপাশি মাছের বেশ বড় ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ জেলার মৎস্য সম্পদের। এসব এলাকায় ৬ হাজার ৬৯৬টি পুকুর-দিঘি তলিয়ে গেছে, যার আয়তন ১ হাজার ৩০০ হেক্টর।

এ ছাড়া ১৫ হাজার ১১৩টি চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে, সেসবের আয়তন ছিল ৯ হাজার ৯২১ হেক্টর। এসবের আনুমানিক অবকাঠামোগত ক্ষতি ১ কোটি ৯২ লাখ। আর সার্বিক মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মৎস্য চাষ) ড. জিল্লুর রহমান বলেন, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূল এলাকায় মাছের খামারে লোনা পানি ঢুকে সয়লাব হয়ে গেছে।

অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ১৬ জেলার রোপা আমন, মসলা, খেসারি ডাল, পানের বরজসহ রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়। উইংয়ের পরিচালক চণ্ডী দাস কুণ্ডু জানান, কী পরিমাণ জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে, তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরিশাল, বরগুনা, ফেনী, পিরোজপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী এলাকায় বেশি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বয়ে গেছে তবে সেগুলো জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুলবুলের কারণে কোনো কোনো জায়গায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্র থেকে রোববার পর্যন্ত ওইসব এলাকায় টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ফসলের ক্ষেতে পানি জমেছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু ফসল এ অসময়ে তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকলে মরে যাবে। আবার ছয়-সাত দিন যদি পানি জমে থাকে তাহলে ধানগাছও মরে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পানি জমে আক্রান্ত এলাকায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট হতে পারে, যেমনটা এর আগে হয়েছিল।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা যায়, খুলনায় দাকোপ উপজেলায় ৩১৫টি চিংড়ির ঘের ও ৪২৫টি পুকুর ভেসে গেছে। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে উপড়ে গেছে বহু গাছও। এর মধ্যে দাকোপ ও দিঘলিয়া উপজেলার ঘূর্ণিঝড়ে কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে গেছে।

অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, এসব অঞ্চলে মাছের ঘের ও ফসলি জমির বেশ ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ধান, ১২শ হেক্টর জমির সবজি, ৫০০ হেক্টর জমির সরিষা, ২০০ হেক্টরের কুল ও ১২০ হেক্টর জমির পান নষ্ট হওয়ার তথ্য পাওয়ার গেছে।

বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে জেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক। তিনি আরো জানান, সেখানে বলেশ্বর নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা এক থেকে দুই ফুট বেড়েছে। ফলে ক্ষতি আরো বাড়তে পারে।

ভোলায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, মনপুরা উপজেলার চর মোজাম্মেল, কলাতলীর চর ও তজুমুদ্দিন উপজেলার চর জহিরুদ্দিনের নিম্নাঞ্চল ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে সদরের ইলিশা এলাকায় মেঘনা নদীতে ২৪ জন জেলে নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে যায়। এ ঘটনায় ১০ জন জেলে জীবিত উদ্ধার এবং একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ১৩ জন জেলে।

পাশাপাশি সেখানে আমন ধান ও খেসারির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় আমন আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ২৮০ হেক্টর, এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ৭৮৩ হেক্টর। শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৭৪২ হেক্টর, যার ৯০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে খেসারির আবাদ হয়েছে ৫৩৬ হেক্টর, যার ৯০ ভাগ সম্পূর্ণ আক্রান্ত এবং পান আবাদ হয়েছে ৫৩৬ হেক্টর, যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ১৩৪ হেক্টর। দুর্যোগকবলিত ফসলের মধ্যে আমন ধান ১০ ভাগ, শীতকালীন সবজি ও ডাল ৯০ ভাগ এবং পান ২৪ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!