• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বেঁচে থাক জিন্দা পার্ক


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩, ২০১৮, ০৮:১১ পিএম
বেঁচে থাক জিন্দা পার্ক

নারায়ণগঞ্জ : শ্রমিক ক্লান্ত দেহে গামছা হাতে এসে সবুজের ছায়ায় জিরিয়ে নেয়। ছোট-ছোট ছেলেমেয়ের ছোটাছুটিতে গাছগুলো যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে যায়। এখানে সবুজকে ঘিরে একটি গ্রামের মানুষের যত উচ্ছলতা। মানুষের আনন্দ-বিনোদন আর অবসরের সময় কাটে প্রিয় এক স্থানে। এখানকার গাছগুলো তাদের কাছে সন্তানের চেয়ে বেশি। জায়গাটি ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জিন্দা পার্ক। ৩৩ বছর ধরে গড়ে তোলা হয়েছে এই উদ্যান। এখানকার প্রায় ২৫০ প্রজাতির ১০ সহস্রাধিক গাছের প্রাণ আজ মানুষকে দিয়েছে প্রাণের স্পন্দন।

সাধারণত পার্ক বলতে আমরা যা দেখি, জিন্দা পার্ক সে ধারণার অনেকটাই বিপরীত। এ পার্কের উদ্যোক্তাদের মতে, সমাজকল্যাণের জন্য একটি সামাজিক অবকাঠামো এ জিন্দা পার্ক। ১৯৮১ সালে গড়ে ওঠা প্রায় ১০০ বিঘা আয়তনের এই পার্কে গড়ে উঠেছে বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, পাঠাগার, মসজিদ, ঈদগাহ ময়দান প্রভৃতি। এই পার্ককে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে নানা রকম সামাজিক সেবা।

আশির দশকের শুরুতে মাত্র ৬০ টাকা পুঁজি নিয়ে স্কুল পড়–য়া পাঁচজন কিশোর শুরু করেছিলো একটি সংগঠন। তাদের স্বপ্ন ও শ্রম ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছে জিন্দা নামের একটি গ্রাম। গড়ে উঠেছে ‘জিন্দা পার্ক’ নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র। পাখি ও ক্ষুদ্র বন্যপ্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে প্রতিবছর নারায়ণগঞ্জের জিন্দা পার্কে গাছের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকার খুব কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় এই পার্কে এখন ২৫ হাজার গাছ আছে। ছায়াশীতল এই পার্কে পাখির কিচির-মিচিরে মুগ্ধ হন পর্যটকরা।

যান্ত্রিক নগরের মানুষগুলো যখন একগুঁয়ে জীবনচক্রে অতিষ্ঠ হয়ে তৃষ্ণার্ত হয়ে যায়; তখন তাদের মন নিমিষেই শীতল হয়ে যাবে জিন্দা পার্কের সবুজ বেষ্টনীর শীতলতায় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।গাছের ডালে হলুদিয়া পাখি। পুরো পার্কজুড়ে চেনা-অচেনা শতশত প্রজাতির গাছ, সুবিশাল লেক আর পাখির কলতানে মোহনীয় করে তুলে সবাইকে। চোখ জুড়ায় দেশি-বিদেশি প্রজাতির বাহারি রঙের ফুল গাছও। অন্যরকম অনুভ‚তি এনে দেয় পার্কের ভেতরের লেকের মাঝখানের টিনের ছাউনির ঘরে বয়ে যাওয়া বাতাস। শীত মৌসুমে অতিথি পাখিও আসে এখানকার লেকে। লেকের পাশের গাছের উপর টং ঘরে উঠলে তো আর নামতেই মন চায় না। দখিনা বাতাসে নিমিষেই চোখে নেমে আসতে পারে শীতলতার ঘুম।

পুরো পার্কে রয়েছে পাঁচটি লেক, এ কৃত্রিম লেকগুলো বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে পার্কটির শোভা। রয়েছে লেকের মাঝখানে সুসজ্জিত বাংলো। ইচ্ছে যদি হয় লেকের স্বচ্ছ জলে কিছুটা সময় ভেসে বেড়াবেন, তারও ব্যবস্থা আছে এখানে। লেকের পাড়েই বাঁধা আছে রঙিন নৌকা। পার্কের পুরো ৫০ একরকেই মনে হবে সবুজে মোড়ানো সাজানো ক্যানভাস। পার্কের সবুজের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ বনের আড়ালে চোখে পড়বে পাঁচতলা ভবনের কারুকার্য খচিত দারুণ স্থাপত্যের লাইব্রেরি। কিছুটা সময় সেখানে বসে বইয়ের মাঝেও ডুবে থাকতে পারেন দর্শনার্থীরা।

বিকেলে পাঁয়চারি করতে করতেই চোখে পড়বে মানবিক ঐশ্বর্য বিদ্যাপীঠ। দারুণভাবে সাজানো হয়েছে স্কুলটিকে। পার্কের ভেতরেই রয়েছে একটি সুদৃশ্য মসজিদ। দারুণ কারুকার্য ও আধুনিক স্থাপত্য দেখে দর্শণার্থীরা প্রত্যেকেই মুগ্ধ হন। রিসোর্টে রয়েছে খাবার রেস্তোরাঁ। সবুজ বনানীতে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পার্কের মহুয়া স্ন্যাকস অ্যান্ড মহুয়া ফুডস রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়েও নিতে পারেন দর্শনার্থীরা। পুরো পার্কটি এক কথায় দুর্দান্ত। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘোরার জন্য ঢাকার কাছে অন্যতম ছায়া-সুনিবিড় স্পট বলা যেতে পারে জিন্দাপার্ককে। পার্কের ভেতরে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা খরচ করতে হবে। নিজস্ব গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সপ্তাহের সাতদিনই পার্কটি খোলা থাকে। মাগরিবের আজানের পর পার্কে থাকা নিষেধ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!