• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেতন বৃদ্ধিতে মাঠে নামছে সরকারি কর্মচারীরা


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ৭, ২০২০, ০৩:০৭ পিএম
বেতন বৃদ্ধিতে মাঠে নামছে সরকারি কর্মচারীরা

ঢাকা: বেতনভাতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠন সোচ্চার হচ্ছে। তারা মাঠে নামার প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক বৈঠক, জনমত সৃষ্টি ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করছে। এসব সংগঠনের বেশিরভাগ দাবিই একই রকম। নতুন পে-স্কেল ঘোষণা, বেতন বৈষম্য কমানো, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ফিরিয়ে দেওয়াসহ আরও কিছু দাবি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

সচিবালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে প্রায় একই দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামার কথা বলছে সচিবালয়ের বাইরের কয়েকটি সংগঠনও। এসব সংগঠনের বেশিরভাগের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল সমর্থকরা থাকলেও দাবির বিষয়ে প্রায় সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে বলে জানা গেছে।

গত সোমবার ডাক বিভাগের জিপিওতে পোস্টাল কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের আহ্বানে অফিস শেষ করে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন, সিজিএ কর্মচারী সমিতি, ইনকামট্যাক্স কর্মচারী ইউনিয়ন, সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদে সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বৈঠকের কথা জানিয়ে বলেন, ২০১৫ সালে যে পে-কমিশন গঠন করা হয়েছিল তার লক্ষ্য ছিল স্থায়ী পে-কমিশন গঠন করা। কিন্তু সেই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। হয়তো সরকার সেই জায়গা থেকে সরে এসেছে। তখন কথা ছিল বাজারদর বাড়লে স্থায়ী পে-কমিশন বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করবে এবং সরকার তা আমলে নেবে। বাজারদর কমলে ভাতা কমে যাওয়ার কথা ছিল। ২০১৫ সালের পে-কমিশনের পর পাঁচ বছর পার হতে চলেছে। নতুন পে-কমিশন গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো কমিটি হয়নি। কমিটি গঠন করার পর আরও দেড় থেকে দুই বছর লাগে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে। কিন্তু গত কয়েক বছরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর বেড়েই চলেছে। সকালে একটি পণ্যের যে দাম থাকছে বিকেলে তা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের প্রাত্যহিক ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

একাধিক সংগঠন কেন একই সময়ে মাঠে নামতে চাইছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে তাদের নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। যারা চায় নতুন বেতন কমিশন গঠন হোক এবং বেতন বৈষম্য দূর হোক তাদের নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা মনে করি বঙ্গবন্ধুর সময় যে ১০টি বেতন স্কেল ছিল তা যদি পুনর্বহাল করা হয় তাহলে বৈষম্য দূর হবে।’

সরকারি কর্মচারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদ ১১ দফা দাবিতে প্রচার চালাচ্ছে। তারা ৯ অক্টোবর এসব দাবি তুলে ধরার জন্য সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে দ্রুত নবম পে-কমিশন গঠন করে বেতন বৈষম্য নিরসন করা। পে-কমিশন গঠনের আগে জীবনযাত্রার মান ও আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখার জন্য তিন থেকে আটটি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট অথবা ৪০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দিতে হবে। টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ফিরিয়ে আনা অন্যতম দাবি। সচিবালয়ের মতো পদ ও গ্রেড চায় সচিবালয়ের বাইরের কর্মচারীরা। বর্তমানে বেতনের ২০টি গ্রেড রয়েছে। এ গ্রেড কমিয়ে ১০টি গ্রেড করার দাবি জানিয়েছে তারা। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় দেশে ১০টি গ্রেড ছিল। কর্মচারীরা সেই গ্রেডেই ফিরে যেতে চায়। ১১ থেকে ২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের বাড়িভাড়া বেসিকের শতভাগ ও স্বল্পমূল্যে রেশন চায় কর্মচারীরা। একই গ্রেডের কর্মচারীদের ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে হবে। ব্লক পদে পদোন্নতির সুযোগ দিয়ে সব পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি একমুখীকরণ করা অন্যতম দাবি। কমন নিয়োগবিধিতে পদসংখ্যা বাড়ানোর দাবিও রয়েছে। শতভাগ পেনশন আগের মতো বহাল এবং পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ৫ থেকে ২৫ বছরের জায়গায় ৫ থেকে ২০ বছর করার দাবি রয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলভাতা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ঝুঁকিভাতা চালু করতে চায় তারা। চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াত ভাতা বাস্তবসম্মতভাবে পুনর্নির্ধারণ করার জন্য তাদের দাবি রয়েছে।

আউটসোর্সিং নিয়োগ বাতিল করাসহ চাকরি স্থায়ীকরণ, উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মো. শাহীনুর রহমান বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে নই। সরকারের পক্ষেই। সরকারি শৃঙ্খল বিধি মেনেই এগিয়ে যেতে চাই। ২০১৫ সালের ১ জুলাই কার্যকর হয়েছে অষ্টম পে-স্কেল। অষ্টম বেতন কমিশনের যে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে তাতে বৈষম্য রয়ে গেছে। ১ গ্রেডের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। ১০ গ্রেডের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা। এখানে পার্থক্য হচ্ছে ৬২ হাজার টাকা। ১১তম গ্রেডের মূল বেতন হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। আর ২০তম গ্রেডের বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। এখানে মূল বেতনের পার্থক্য ৪ হাজার ২৫০ টাকা। এই ৪ হাজার ২৫০ টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে ১০টি গ্রেডে অর্থাৎ ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের মধ্যে। এখানে এক থেকে অন্য গ্রেডের বেতনের পার্থক্য কোনোটি ২০০ টাকা আবার কোনোটাতে ৩০০ টাকা। অন্যদিকে ১০ থেকে নবম গ্রেডের পার্থক্য ৬ হাজার টাকা। এভাবে ক্রমান্বয়ে ওপরের দিকে পার্থক্য বেড়েছে। আর নিচের দিকে কমেছে।

শাহীনুর রহমান আরও জানান, সপ্তম পে-কমিশনে একই পদে থাকলে টাইমস্কেল পেতাম চাকরি জীবনের ৮ বছর, ১২ বছর এবং ১৫ বছরে। ১১তম গ্রেডের একজন কর্মচারী ৮ বছর পর ১০ গ্রেডে বেতন পাবে। ১২ বছর পর নবম গ্রেডে এবং ১৫ বছর অষ্টম গ্রেডে বেতন পাবে। এ নিয়ম ছিল সপ্তম পে-কমিশনের। অষ্টম পে-কমিশনে এসে তা তুলে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে তা অকার্যকর করে দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে চালু করেছে একই পদে ১০ ও ১৬ বছরে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী পরবর্তী ধাপে যাবে। এতে আমাদের বিশেষ করে কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা কমে গেছে। সিলেকশন গ্রেড হচ্ছে পদোন্নতিবঞ্চিতদের পরবর্তী ধাপে বেতনভাতা উন্নীত করা। কর্মচারীরা ৫ বছরে এবং কর্মকর্তারা ৪ বছরে সিলেকশন গ্রেড পেতেন। এ সুবিধাও তুলে নেয় অষ্টম পে-কমিশন। এতে আমরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সচিবালয়ের ভেতরে যারা চাকরি করেন তাদের সঙ্গে যারা বাইরে চাকরি করেন তাদের পদ-পদবি সংক্রান্ত বৈষম্য রয়েছে। সচিবালয়ে যেসব স্টেনোগ্রাফার ও উচ্চমান সহকারী চাকরি করেন তারা প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। স্টেনোগ্রাফার ও উচ্চমান সহকারীরা ১৬ গ্রেডের কর্মচারী। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ১০ গ্রেডের কর্মচারী। সচিবালয়ের বাইরে যারা স্টেনোগ্রাফার ও উচ্চমান সহকারীরা তারা একই পদে ৩০ বছর চাকরি করেন। কোনো পদোন্নতি পান না। তারা এ নিয়মের পরিবর্তন চান।

সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খায়ের আহমেদ মজুমদার বলেন, পর্যায়ক্রমে সরকারকে অবহিত করছি। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা সরকারকে জানাব। ১৭ অক্টোবর আমরা সংবাদ সম্মেলন করব। আগামী বাজেটের আগে আমরা ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করব। একই স্কেলধারী, একই পদধারী এবং একই শিক্ষাগত যোগ্যতার কর্মচারী সচিবালয়ে চাকরি করেন এবং পদোন্নতিও পান। তারা কর্মচারী থেকে অফিসার হন। আর আমরা সচিবালয়ের বাইরে যারা চাকরি করি তারা কর্মচারীই রয়ে যাই। আমাদের চাকরিজীবনে কোনো পদোন্নতি হচ্ছে না। আমাদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। সারা দেশের প্রায় আড়াই লাখ কর্মচারী এ সমস্যার মধ্যে আছি। আমরা এর অবসান চাই। একই সঙ্গে আউটসোর্সিং বন্ধ করা উচিত। কারণ এটা অমানবিক। এছাড়া নতুন পে-কমিশন গঠন সময়ের দাবি।সূত্র: দেশ রূপান্তর

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!