• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
চরম ভোগান্তিতে ভর্তিচ্ছুরা: সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন শিক্ষকরা

বেরোবির ভর্তি পরীক্ষা আকস্মিকভাবে পেছানোর নেপথ্যে অব্যবস্থাপনা!


মোবাশ্বের আহমেদ, বেরোবি নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৬:৪৫ পিএম
বেরোবির ভর্তি পরীক্ষা আকস্মিকভাবে পেছানোর নেপথ্যে অব্যবস্থাপনা!

ঢাকা : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  (বেরোবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আকস্মিকভাবে পেছানোর ঘটনায় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতাকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনভিজ্ঞ শিক্ষককে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া এবং তার অব্যবস্থপানার কারণেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণ দেখিয়ে পরীক্ষা একদিন পেছানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, আকস্মিকভাবে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করায় সারা দেশ থেকে আসা প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অবিভাবকরা বিপাকে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার (১০ নভেম্বর) সরকারী ছুটি থাকলেও অনার্স প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ কারণ দেখিয়ে ‘বি’ ইউনিটের সোমবারের ভর্তি পরীক্ষা আকস্মিকভাবে স্থগিত করা হয়।

রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধা ৬ টা ৫৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তর  থেকে সরবরাহ করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়। অথচ রংপুর অঞ্চলের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, ‘রংপুরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কোন প্রভাব নেই। গতকালেও ছিল না আগামীকালও থাকবে না কারণ বুলবুলের আঘাত হানার সম্ভাবনা ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’

তবে ঘুর্নিঝড় বুলবুলের কারন দেখিয়ে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষনা করা হলেও মূলত এর নেপথ্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল শিক্ষকগণ। ভর্তি পরীক্ষায় একজন জুনিয়র ও অনভিজ্ঞ শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদান এবং ওই অনুষদের আটজন শিক্ষককে পরীক্ষায় কোন দায়িত্ব না দেয়ায় শিক্ষকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একইভাবে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটির বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈষ্ঠ্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে প্রশ্নপত্র কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের একজন বিতর্কিত শিক্ষককে দিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরীর দায়িত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।  

‘বি’ ইউনিটের একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ইউনিটের ডিন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। নিয়মানুযায়ী তিনিই এই অনুষদের সমন্বয়ক হওয়ার কথা থাকলেও তিনি না হয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক সোহেলা মুশতারীকে সেই দায়িত্ব দেন। ’

অভিযোগ উঠেছে, সোহেলা মুশতারীর এর আগে কখনো কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি প্রশ্নপত্র মডারেশনের বিষয়টি পুরোপুরো সমন্বয় করতে পারেনি।  এই সমন্বয়হীনতাকেই ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর মূল কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা।

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সাধারণ সম্পাদক আসাদ মন্ডল বলেন, ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের পুরো বিষয়টি আমার কাছে সমন্বয়হীনতা এবং অপরিচ্ছন্ন মনে হয়েছে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সমন্ময়ক সহকারী অধ্যাপক সোহেলা মোস্তারী বলেন, ‘বি ইউনিটের পরীক্ষা স্থগিতের পেছনে আমার কোন হাত নেই। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি পরীক্ষা পিছিয়েছে।’

তবে অনভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করানোকে ভালভাবে দেখছেন না বিশ্ববিদ্যালয় জৈষ্ঠ্য অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান।

তিনি বলেন,‘একটি অনুষদের ডিন হবেন ওই ইউনিটের সমন্বয়ক। কিন্তু যিনি ডিন তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব না পালন করে অনভিজ্ঞ শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া ঠিক হয়নি। এসব বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতার ব্যপার রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সমন্বয়কের দায়িত্বে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকলে বড় ধরনের আশঙ্কা থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত করে ভর্তিচ্ছু ও অবিভাবকদের ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হয়েছে।’

এদিকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, উত্তরবঙ্গে ঘুর্নিঝড় বুলবুলের কোন প্রভাব না থাকলেও প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে দূর দূরান্ত থেকে পরীক্ষা দিতে এসে আমরা বিপদে পড়েছি। গোপালগঞ্জ থেকে আসা সাবিহা মাহবুব, যশোরের সুলতান সালেহীন, কুষ্টিয়ার মনমোহন সহ অনেকেই জানায় তারা সোমবার পরীক্ষা দিয়ে চলে যাবে বলে বাস ও ট্রেনের টিকেট কেটে রেখেছিল।

এছাড়া, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণের দিন নির্ধারণ থাকায় এই পরীক্ষায় আর অংশগ্রহণ না করে চলে গেছে। রাজু আহমেদ, শফিকুল, শরিফা, সঞ্জয়সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাক্ষাতকার দিতে গেছে। একদিন পরীক্ষা পেছানোর কারনে অভিভাবকসহ চরম দুর্ভোগে পড়েছে ভর্তিচ্ছুরা ।

সার্বিক বিষয় জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সাথে তার মোবাইল ফোনে (০১৭১১৫৩১৬৫২)নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন কলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!