• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশীয় অর্থনীতির বিকাশে সহায়ক


দিলীপ কুমার আগরওয়ালা অক্টোবর ১৯, ২০২০, ০৪:০৭ পিএম
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশীয় অর্থনীতির বিকাশে সহায়ক

ঢাকা : গত ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ায় এবং খরচ কমার কারণে এর পরিমাণ বাড়ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। গত বছরের এ সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮০০ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, অক্টোবরজুড়ে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়তে পারে। কারণ এ মাসে বড় ধরনের কোনো দেনা শোধ করতে হবে না। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর— দুই মাসের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দেনা শোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভের পরিমাণ সামান্য কমতে পারে। প্রতি দুই মাস পর পর আকুর দেনা শোধ করা হয়। এ বাবদ প্রতি ২ মাসে গড়ে ৭৫ থেকে ৯০ কোটি ডলারের দেনা শোধ করা লাগে। এরপরও বিগত সময় ধরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েই চলেছে, যা দেশীয় অর্থনীতির জন্য সুখকরই বটে।

রিজার্ভের বেশ কয়েকটি উৎস রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। প্রবাসীরা অর্থ পাঠানো বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে সময়ে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি ৪৬ শতাংশ। রপ্তানিও ঋণাত্মক ধারা থেকে ফিরে এসেছে। এখন পর্যন্ত রপ্তানির প্রবৃদ্ধি প্রায় ২ শতাংশ। তবে আমদানিতে তেমন গতি নেই। আবার মহামারীর কারণে দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ঋণ সহায়তা। বিদেশে যাওয়া প্রায় বন্ধ। ফলে ডলারের ওপর চাপ নেই। এসব কারণেই নতুন নতুন রেকর্ড করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও দেশে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৬ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত অর্থনীতির এক ধরনের শক্তি। সাধারণত তিন মাসের সমান রিজার্ভ বা মজুত রাখতে হয়। কিন্তু এখন বাংলাদেশে প্রায় ১০ মাসের আমদানির সমান রিজার্ভ রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি এখন মন্দার মধ্যে। করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত সব দেশের অর্থনীতি। এ রকম এক কঠিন সময়েও রিজার্ভ বাড়ছে।

মহামারীর প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই গত সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। গত বছরের একই মাসে এসেছিল ১৪৭ কোটি ডলার। ফলে গত মাসে প্রবাসী আয়ে ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। করোনার মধ্যে গত জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ডলারের আয় এসেছিল। আর আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার। এত প্রবাসী আয় আসায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। এসবই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে। আর ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দেওয়ায় অনেক ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত টাকা জমে গেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, সংকটে পড়লে এই রিজার্ভ অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে কাজে দেবে। আমদানি দায় মেটাতে সমস্যায় পড়তে হবে না। প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে সরকার। এরপর থেকেই প্রবাসী আয়ে গতি এসেছে। মূলত ২০১৪ সাল থেকেই দেশে রিজার্ভের পরিমাণ বেশি করে বাড়তে শুরু করে। ওই বছরের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তা ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ছাড়ায়। আর ২০১৬ সালের জুনে রিজার্ভ বেড়ে হয় ৩ হাজার কোটি ডলার।

আর বর্তমানে প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়, বিদেশি ঋণ ও সহায়তার ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন (৪ হাজার কোটি) ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করেছে। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। রপ্তানিও কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া আমদানি ব্যয়ের চাপ কম। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকার বৈদেশিক ঋণ সহায়তা এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর ঋণ ও অনুদানও বেড়েছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৬৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ব্যাংকাররা বলছেন, অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেক দেশে করোনার কারণে বিশেষ ভাতাও পেয়েছেন প্রবাসীরা। সেসব অর্থ তারা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবার প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা পেতে দেশের টাকা দেশে আসছে কি না, এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন ব্যাংকার। চলতি অর্থবছর রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। সংকটে পড়লে এ রিজার্ভ অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে কাজে দেবে। আমদানি দায় মেটাতে সমস্যায় পড়তে হবে না।

লেখক : সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!