• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোরো চাষের সেচে কৃষকের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে মাত্রাতিরি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০১৬, ০১:১৫ পিএম
বোরো চাষের সেচে কৃষকের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে মাত্রাতিরি

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

বোরোই হচ্ছে এখন দেশের প্রধান শস্য। এ থেকেই মোট চালের অর্ধেকেরও বেশি আসে। কিন্তু এবারের মৌসুমে বোরো চাষের সেচে বিদ্যুতের দামই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। প্রায় ৫২ শতাংশ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বোরো চাষে। এবার বোরো ধান উৎপাদনে শুধুমাত্র সেচ বাবদই কৃষকের বাড়তি খরচ হবে হেক্টরপ্রতি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা। আর চলতি বছর দেশে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। কিন্তু এর অর্ধেক জমিতেই বিদ্যুৎনির্ভর পাম্প দিয়ে সেচ দিতে হবে। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে শুধুমাত্র সেচ বাবদ কৃষকের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ ও কৃষক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গতবছরের ১ সেপ্টেম্বর সেচের জন্য প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয় ৩ টাকা ৮২ পয়সা। যা আগে ছিল ২ টাকা ৫১ পয়সা। অর্থাৎ সেচে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫২ দশমিক ১৯ শতাংশ। যদিও আবাসিক ও শিল্পে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫ ও ১০ শতাংশ। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে অঞ্চলভেদে প্রতি বিঘা জমিতে সেচকাজে বিদ্যুৎ খরচ পড়বে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। আর বিঘাপ্রতি খরচ হয় গড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা। বিদ্যুতের দাম ৫২ শতাংশ বাড়ানোয় প্রতি বিঘায় সেচকারী (সেচযন্ত্র পরিচালনাকারী) পর্যায়ে খরচ বাড়বে প্রায় ৬২৪ টাকা। সে হিসাবে প্রতি হেক্টরে বাড়তি খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার ৬৬১ টাকা।

সূত্র জানায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বোরো আবাদে প্রতি বিঘায় সেচ খরচ দাঁড়াবে ১ হাজার ৮২৪ টাকা। এই হিসাবে হেক্টরপ্রতি খরচ হবে প্রায় ১৩ হাজার ৬২৫ টাকা। তবে কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়া হলে সেচের খরচ আরো বেড়ে যাবে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বোরোর বীজতলা তৈরি করা হয়। সেসময় সেচের প্রয়োজন হলেও মূল চাহিদা সৃষ্টি হয় মার্চের শুরুতে। অঞ্চলভেদে মার্চের মাঝামাঝিতেও সেচ দেয়া শুরু হয়। চলতি বোরো মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবার বোরো আবাদের লক্ষ্য ছিল ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমি। তারমধ্যে ৩১ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ১৫ লাখ ৫২ হাজার হেক্টরে উফশী ও ৮০ হাজার হেক্টরে স্থানীয় জাতের ধান রয়েছে। সরকারি হিসাবে গত মৌসুমে প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে (বিদ্যুৎ ও তেলের গড়) ব্যয় হয় ২০ টাকা। সে হিসাবে এক মণ ধান উৎপাদনে ৮০০ টাকা খরচ হলেও মৌসুমের শুরুতে কৃষক ধান বিক্রিতে বাধ্য হয়েছে তারও প্রায় অর্ধেক দামে। আর চলতি মৌসুমে বিদ্যুতের বাড়তি খরচ যুক্ত হলে উৎপাদন ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় সরকারের সংগ্রহমূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ জরুরি। সেক্ষেত্রে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা, মৌসুমের আগেই বোরো ধানের দাম নির্ধারণ এবং মিলারদের তদারকিতে সরকারের নজরদারি আরো বাড়াতে হবে।

সূত্র আরো জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেচের জন্য অনুমোদিত সংযোগ ছিল ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৭৪টি। ওসব সেচযন্ত্রে পানি ওঠাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে প্রায় ২ হাজার ১৭০ দশমিক ২২১ মেগাওয়াট। তাছাড়া চলতি মৌসুমে নতুন সংযোগের জন্য আবেদন রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ১৪৯টি। নতুন সংযোগ দেয়া হলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে প্রায় ১১০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪২৩ সংযোগের জন্য প্রায় ২ হাজার ২৮০ দশমিক ২২১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়বে। আর এর বড় অংশই সরবরাহ করবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।

এদিকে কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন- বোরো চাষে সেচের খরচ সহনীয় রাখতে ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ হারে (রিবেট) ছাড় দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে সরকারের এই উদ্যোগের কার্যকারিতা তদারক করা হবে। তাছাড়া বোরো উৎপাদনে অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিশেষ করে বীজ, সারের মূল্য সহনীয় রাখতেও সরকারের উদ্যোগ রয়েছে। তাছাড়া উৎপাদন খরচ বাড়লেও সরকারের ধান-চাল সংগ্রহমূল্য নির্ধারণের সময় তা বিবেচনায় নেয়া হবে। কৃষককে যেন কোনো ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে না হয় সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে।

অন্যদিকে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ইতিপূর্বে কৃষিতে বিদ্যুতের দাম অনেক কম ছিল। বিশেষ করে পিডিবি ও আরইবির ট্যারিফ হারের পার্থক্য ছিল অনেক বেশি। তাই বিতরণকারী কোম্পানির প্রস্তাবের ভিত্তিতেই কৃষিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিতরণকারী সব সংস্থার জন্য একই ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকার এখন কৃষকদের সরাসরি ভর্তুকি দিচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সেচ ব্যয় তথা ধান উৎপাদনে খুব বেশি প্রভাব রাখার কথা নয়।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) সরেজমিন বিভাগের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রভাব এবার সরাসরি কৃষকের ওপর নাও পড়তে পারে। কারণ অনেক কৃষক সেচযন্ত্র পরিচালনাকারীর সাথে আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। তাছাড়া জমিতে পরিমাণ মতো সেচের পানি ব্যবহারে কৃষককে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তবে যারা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর চুক্তি করেছেন তাদের ব্যয় বাড়তে পারে।


সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!