• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যারিস্টার মঈনুলের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার হুঁশিয়ারি


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৮, ২০১৮, ০৯:০৪ পিএম
ব্যারিস্টার মঈনুলের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার হুঁশিয়ারি

ঢাকা : নারীদের দুইটি দাবি দ্রুততম সময়ের মাধ্যমে না মানলে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়ার হুঁশিয়ারি জানিয়েছে নারী সাংবাদিকরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে নারী সাংবাদিককে 'চরিত্রহীন' বলার প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় এই হুঁশিয়ারি জানানো হয়। নারীদের পক্ষে বিবৃতি তুলে ধরেন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৬ অক্টোবর একাত্তর টেলিভিশনের একটি আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি এবং বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত।

উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে যুক্ত করার পর মাসুদা ভাট্টি তাকে একটি প্রশ্ন করতে চান এবং জানতে চান - সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে আপনাকে শিবিরের একটি জনসভায় অংশ নিতে দেখা গেছে এবং সে কারণেই অনেকেই প্রশ্ন করেছেন যে, আপনি কি জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে উপস্থিত থাকছেন কিনা?

প্রশ্নটি শেষ করার আগেই ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং বলেন যে - আপনার সাহসের প্রশংসা করতে তবে আমি আপনাকে একজন চরিত্রহীন বলতে চাই।

কোনও রকম উস্কানি ছাড়াই তিনি মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলেন এবং এর পরেই সাংবাদিক সমাজের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন যে, সাংবাদিকরা কি জিনিস সেটা তিনি জানেন। মাসুদা ভাট্টি অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে তাকে প্রশ্ন করেন এবং এরকম ন্যাক্কারজনক মন্তব্যের পরও তিনি এই ব্যক্তিকে কোনও কটূক্তি করেন নি।

নাসিমুন আরা আরও বলেন, কিন্তু এর মানে এই না যে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের এই বক্তব্যেকে বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দেওয়া যায়। কারণ আমরা মনে করি যে মাসুদা ভাট্টি একজন নারী বলেই সরাসরি তাকে চরিত্রহীন বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।

কারণ নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি অনেক বাহবা পাবেন এবং এটাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তিনি মাসুদা ভাট্টিকে আক্রমণ করতে গিয়ে সব নারীকে অপমান করেছেন এবং এজন্য তার যথাযথ শাস্তি আমরা দাবি করছি।

ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন ব্যক্তিগতভাবে মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চাইলেও সেই ক্ষমা যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করে নাসিমুন আরা। নারীদের পক্ষ থেকে দুটি দাবি তুলে ধরেন তিনি। এই দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে না মানলে আইনের আশ্রয়ের নেওয়ার হুঁশিয়ারি জানান তিনি।

দাবি গুলো হলো - ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে তার অপরাধ স্বীকারপূর্বক নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং ভবিষ্যতে তিনি কখনও এরকম ব্যক্তি আক্রমণ থেকে বিরত থাকবেন।

প্রতিবাদ সভায় এক খোলা চিঠিতে মাসুদা ভাট্টি বলেন, আমার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছি যে যুক্তিহীন মানুষই সাধারণত ব্যক্তিগত আক্রমণ করে এবং একজন নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টি সব সময়ে তার চরিত্রকে নির্দেশ করে আক্রমণ করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আপনিও তার ব্যতিক্রম নন।

একাত্তর টকশোর উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা আপনাকে বলেছেন যে আপনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। এবং এটা তিনি মেনে নিবেন না। কিন্তু আপনি অত্যন্ত রূঢ় হয়ে পুরো অনুষ্ঠানে কথা বললেন এবং বরাবরের মতই সেটা ছিল আক্রমনাত্মক।

তিনি আরো বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় যখন আপনি আমাকে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে ক্ষমা চাইলেন, তখন আপনাকে আমি বলেছি যে অন্যায় কাজটি আপনি করেছেন একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন টকশোতে, তার সাক্ষী অনুষ্ঠানটির লক্ষ লক্ষ দর্শক। তাদের অগোচরে আপনি একটি ফোন করে ক্ষমা চাইলে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে ক্ষমা করলেও যে অগণিত নারীকে আপনি অপমান করেছেন তাদের ক্ষোভ কোনোভাবেই তাতে প্রশমিত হয় না।

যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে জনসমক্ষে সেও তো আপনাকে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার পূর্বক অপরাধ স্বীকার করে সকল পক্ষের কাছে প্রকাশ্যে মার্জনা চাওয়াটা কাম্য। আশা করি আপনি আমার ও আমার মত অসংখ্য নারীর সম্মানহানির ক্ষত এর জায়গাটি উপলব্ধি করবেন এবং প্রকাশ্যে সকলের কাছে মার্জনা প্রার্থনা করবেন।

প্রতিবাদে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাছিমা আক্তার সোমা, সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান আরা শিল্পী।

এ ছাড়া সাংবাদিকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন মুন্নী সাহা, মিথিলা ফারজানা, নাসিমা খান মন্টি, শাহনাজ মুন্নী, ফারজানা রূপা, সুপ্রীতি ধর, আঙ্গুর নাহার মন্টি, ফারহানা মিলি, নাদিরা কিরণ, মুনমুন শারমিন শামস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!