• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ঝুঁকি নিয়ে দলে দলে ঢাকামুখী হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক

‘বড় মাশুল দিতে হবে’


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৬, ২০২০, ১২:১২ এএম
‘বড় মাশুল দিতে হবে’

ঢাকা : চাকরি হারানোর ভয়। তাই যানবাহন না পেয়ে করোনার ভয় উপেক্ষা করে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে রাজধানীতে আসছে অনেক গার্মেন্ট শ্রমিক। আবার শ্রমিকদের অনেককে দলে দলে ট্রাক, পিকআপ, লেগুনা ভাড়া করে কর্মস্থলে আসতে দেখা গেছে। গত দুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন সড়কে ঢাকামুখী শ্রমিকদের এই চিত্র ভাবিয়ে তুলেছে দেশের সচেতন মানুষকে। অনেকেই বলছেন, এর জন্য ‘বড় মাশুল দিতে হবে।’

নভেল করোনা ভাইরাস মোকাবিলার এ যুদ্ধে দেশের পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্তকে হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কা বলে জানিয়েছেন অনেকে। এর জন্য দেশকে চরম মূল্য দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে ঢাকায় ফেরা কয়েকজন গার্মেন্ট শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে কাজে ফেরার বাধ্যবাধকতার ইঙ্গিত মিলেছে। তারা জানিয়েছেন, কর্মস্থলে ফিরতে রাজি নয় এমন অনেককে কারখানা সংশ্লিষ্টরা বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা বলে কর্মস্থলে আনছেন। আবার অনেককে ভয় দেখানো হচ্ছে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের।

ঢাকাবাসী বিভিন্ন সংগঠন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় ফিরে আসা বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মেয়র বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তথ্যে, দেশে গণপরিবহন বন্ধের মধ্যেও শনিবার (৪ এপ্রিল) কিছু গার্মেন্ট কারখানা খোলার কথা থাকায় ময়মনসিংহ থেকে হেঁটে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরের ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন হাজারো শ্রমিক। গত শুক্রবার সকাল থেকে ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু মানুষ পণ্যবাহী পিকআপ, ট্রাকসহ জরুরি ভিত্তিতে আসা পরিবহনগুলোতে গাদাগাদি করে পৌঁছেছেন গন্তব্যে। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৫ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সব গার্মেন্ট’ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় মালিকদের সংগঠনগুলো।

তবে এর মধ্যে সরকার ঘোষিত ১০ দিন থেকে কর্মসূচি বাড়িয়ে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করেছে। তাই বন্ধ রয়েছে সবধরনের দূরপাল্লার সব যানবাহন। তবে এ সময় প্রয়োজনে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও নিট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। তবে কাজ নেই এমন কারখানা চাইলে বন্ধ রাখতে পারবেন- এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

শনিবার (৪ এপ্রিল) ঢাকায় পৌঁছানো রিপন নামের এক পোশাক শ্রমিক বলেন, ‘কাল থেকে গার্মেন্ট খুলবে। যদি গার্মেন্টে না যাই তবে চাকরি থাকবে না। সুপারভাইজার তিনদিন আগেই সেটা মোবাইলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি।

গাজীপুর জেলার চৌরাস্তায় অবস্থিত একটি গার্মেন্টের নারীকর্মী ফারজানা আক্তার জানান, তিনি সপরিবারে ঢাকায় থেকে চাকরি করেন। তাদের করোনাভাইরাসের ভয়ের চাইতে গার্মেন্টের চাকরি হারানোর ভয় বেশি। তাই সবার সঙ্গে পায়ে হেঁটে গাজীপুরে ফিরেছেন।

এদিকে ২১ জেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের প্রচুর ভিড় লক্ষ করা গেছে।

শনিবার (৪ এপ্রিল) সকাল থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রীদের হালকা চাপ থাকলেও দুপুরের পর থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত এসেছেন ঢাকামুখী এই যাত্রীরা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় গাদাগাদি করে তাদের ফেরিতে পারপার হতে দেখা গেছে।

কয়েকজন যাত্রী জানান, তারা সবাই গার্মেন্টে কাজ করেন। ভোর থেকেই ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে তারা ঘাটে এসেছেন। অনেকে মিলে ওইসব পরিবহন রিজার্ভও করেছেন। কষ্ট করে হলেও ফিরতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে গার্মেন্ট এলাকা আশুলিয়ায় প্রচুর মানুষের আনাগোনা দেখা গেছে। আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, কারখানা খোলা থাকলে শ্রমিকদের যেতে হবে। আমাদের নির্দেশনা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সচেতন করা। শেরপুর ও কিশোরগঞ্জের পোশাক শ্রমিকরা অটোরিকশা ও হিউম্যান হলারে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকার গাড়ি পেতে তারা সবাই ময়মনসিংহের দিগরকান্দা বাইপাসে ভিড় করছেন। সেখানে হাজার হাজার শ্রমিককে ভিড় করতে দেখা গেছে। ময়মনসিংহের ট্রাফিক পরিদর্শক সৈয়দ মাহমুদুর রহমান বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের কিছুই করার নেই। এ ধরনের যাত্রায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পোশাক কারখানা খোলার বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত, তাই আমাদের কিছুই বলার নেই। তবে এটা ঠিক হয়নি।

করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য বিভাগ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছে, তবে এ পরিস্থিতিতে সব ভেস্তে গেল বলেও মনে করেন এ কর্মকর্তা।

তিনি আরো বলেন, ‘যতই বলা হোক সম্পূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ওইসব কারখানায় শ্রমিক কাজ করবে, কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। কারখানা খোলা থাকলে দূরত্ব কীভাবে বজায় রাখবো? কারখানার ভেতরে এ দূরত্ব রাখা যায় না। এর জন্য বড় মাশুল দিতে হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!